Tuesday, March 26, 2013

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

0 comments
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম খাত। শুধু প্রশান্ত মহাসাগরই নয়, এটা বিশ্বের গভীরতম সমুদ্রখাত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই হাজার ৫৫০ কি.মি এবং প্রস্থ প্রায় ৬৯ কি.মি। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১১ কি.মি। খাতটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত। মারিয়ানা খাত একটি বৃত্তচাপের আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে বিস্তৃত। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ গঠিত হয়েছে অধগমন নামক এক ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায়। এ খাতে পানির চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক চাপের তুলনায় প্রায় ১০০০ গুণ বেশি। এ কারণেই এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির ঘনত্ব প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। সাধারণত সমুদ্রতলের গভীরে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল, খোলস জমা পড়তে থাকে। আর এ কারণেই মারিয়ানার পানির রং খানিকটা হলদে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের দক্ষিণ প্রান্তসীমায় গুয়াম দ্বীপের ৩৪০ কি.মি দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরতম বিন্দুটি অবস্থিত। ১৯৪৮ সালে এইচএমএস চ্যালেঞ্জার-২-এর নাবিকেরা এ বিন্দুটি আবিষ্কার করেন। এ জাহাজের নামানুসারেই এই বিন্দুটির নামকরণ করা হয় চ্যালেঞ্জার ডিপ। এ খাতটিতেই দেওয়া হয় ইতিহাসের সবচেয়ে গভীরতম ডুব। ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জ্যাক পিকার ও নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ডোনাল্ড ওয়ালশ চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণ করেন। জ্যাক এবং ডোনাল্ড ১০ হাজার ৯১৫ মিটার গভীরতায় যেতে সক্ষম হন। তবে এ ডিপের গভীরতা প্রায় ১১ হাজার ৩৩ মিটার। ২০১০ সালে মারিয়ানায় অনুসন্ধানী যন্ত্র পাঠিয়ে সাগর তলের পলি সংগ্রহ করা হয়। সেই পলি বিশ্লেষণ করে অক্সিজেনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চে বিপুলসংখ্যক অণুজীবের বিচরণ রয়েছে। এসব আদি ও এককোষী প্রাণী অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী অণুজীবের তুলনায় বিস্ময়করভাবে বেশি সক্রিয়। ব্যারোফিলিক জাতীয় এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে হাইড্রোজেন সালফাইডসহ বিভিন্ন খানিজসমৃদ্ধ গরম পানি। যে গরম পানি বের হয় চ্যালেঞ্জার ডিপের ছিদ্রপথ দিয়ে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে আবার খায় অতি ক্ষুদ্র কিছু ছোট ছোট জীব। আবার এ ছোট ছোট জীবকে খায় মাছেরা। সম্প্রতি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার গভীরের এ গিরিখাতে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। সেখানে তারা আনুবিক্ষণীক প্রানীদের উচ্চমাত্রার চলাফেরা লক্ষ্য করেছেন। তারা বলছেন, এই প্রানীরা প্রায় শুন্য ডিগ্রি তাপমাত্রা, মারাত্মক চাপ কিংবা সম্পূর্ণ অন্ধকারেও বেঁচে থাকতে পারে।

0 comments:

Post a Comment