Thursday, November 4, 2010

আগুন

0 comments
মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আগুন। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী দেবতা প্রমিথিউসের রোষে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম অগি্নকাণ্ড ঘটেছিল। প্রমিথিউসের রোষে সর্বপ্রথম আগুন নাকি আদিম মানুষের পাথরে পাথর ঘষায় আগুনের উৎপত্তি- এসব নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রাচীন রহস্য উদ্ঘাটনে বৈজ্ঞানিকভাবে সবচেয়ে স্বীকৃত কার্বন টেস্ট অনুযায়ী ফসিল রেকর্ডে আগুনের দেখা মিলে ৪২০ মিলিয়ন বছর আগে বৃক্ষের ভস্মীভবন ও কয়লার প্রাপ্তিতে, মধ্য অর্ডোভিশিয়ান যুগে ৪৭০ মিলিয়ন বছর আগে যখন ভূমণ্ডলে বৃক্ষরাজি জন্মাতে শুরু করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে জমতে থাকে অক্সিজেন। আর অক্সিজেনের ঘনীভবন শতকরা ১৩ ভাগ ছাড়িয়ে গেলে বনে আগুন লাগার সম্ভাবনা দেখা দেয়। দাউ দাউ করে জ্বলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর নাম ওয়াইল্ড ফায়ার। বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কারে ৪১০ মিলিয়ন বছর আগে এমন ওয়াইল্ড ফায়ারে বৃক্ষ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। যখন থেকে ঘাস জন্মাতে শুরু করে এবং প্রকৃতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অধিকার করে নেয় তখন বেড়ে যায় এ আগুন লাগার ঘটনাও। সময়টা ৬০ থেকে ৭০ লাখ বছর আগের। কারণ শুকনা ঘাসে আগুন লাগার সম্ভাবনাও বেশি।

আগুন আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত যতটা না আগুন জ্বালানো বরং তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে আগুন নিয়ন্ত্রণ। চার লাখ বছর আগে আগুনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ছিল কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তবে ১৯ লাখ বছর আগেকার আগুনে ঝলসানো খাবারের অস্তিত্ব মিলেছে। এ থেকে ধারণা করা হয়, আগুনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কয়েক সহস্র শতাব্দী পুরনো। তবে আগুনের নিয়ন্ত্রিত, নিয়মিত ও বহুবিধ ব্যবহারের ইতিহাস ৫০ হাজার বছর থেকে এক লাখ বছরের।

যুগে যুগে ধ্বংসকারীদেরও প্রধান পছন্দ ছিল আগুন। এর প্রমাণ আমরা পাই সেই মধ্যযুগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের অনেক যুদ্ধবিগ্রহ পর্যন্ত। রণাঙ্গনে আগুনের গোলা নিক্ষেপের ইতিহাসও বেশ পুরনো। ট্রোজান যুদ্ধে ঘোড়ার ভিতরে লুকানো গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় নগরী পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিভাবে আগুন ব্যবহার করেছে তার বিবরণ পাওয়া যায় হোমারের ইলিয়াডে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আগুনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। নাপাম বোমা, মলোটোভ ককটেল কিংবা আণবিক বোমা ধ্বংসযজ্ঞের এসব হাতিয়ারই শেষ পর্যন্ত আগুন জ্বেলে হরণ করে মানুষের জীবন ও সম্পদ।

সন্দীপন বসু

0 comments:

Post a Comment