Thursday, November 4, 2010

চ্যানেল ট্যানেল

0 comments
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মাঝখানে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গের নাম চ্যানেল ট্যানেল। ইংলিশ চ্যানেলের অন্তর্ভুক্ত এই সড়ক সুড়ঙ্গটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত। এর দৈর্ঘ্য ৫০.৫ কি.মি বা ৩১.৪ মাইল। এটি মূলত ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে স্থাপিত একটি সংযোগ সড়ক। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। এই ট্যানেল বা সুড়ঙ্গ নির্মাণের আগেই গঠিত হয়েছিল একটি যৌথ কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৫ সালের ২ জুলাই চ্যানেল-ট্যানেল কর্তৃপক্ষ ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে এই সংযোগ সড়কটি স্থাপনের পরিকল্পনা করে। মজার ব্যাপার হলো, এই পরিকল্পনা প্রথম নেওয়া হয়েছিল তারও প্রায় ১০ বছর আগে। ১৯৭৫ সালে গৃহীত সেই পরিকল্পনাটি নানা জটিলতায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনা আস্তে আস্তে ডালপালা মেলছিল ঠিকই। একসময় উভয় দেশই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে উদ্যোগী হলো। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা আর বিপত্তি পেরিয়ে ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আলোচিত সেই সুড়ঙ্গ পথের নির্মাণকাজ। আর সেই সুড়ঙ্গটিই এখন ইতিহাস। এটিই বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ পথ। ৩.৩ মিটার প্রশস্ত ও ৫০.৫ কি.মি দৈর্ঘ্যের চ্যানেল-ট্যানেলে রয়েছে রেল সংযোগ, প্রাইভেট সংযোগ। ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত এই সুড়ঙ্গ সড়কটি ফ্রান্সে অর্ধেক ও ইংল্যান্ডের পাশে রয়েছে অর্ধেক অংশ। প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার টন মালামাল উঠানামা করে চ্যানেল-ট্যানেলে। দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ সংযোগ সড়কটি আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে নির্মিত হলেও এর কোথায়ও কোনো ফাটলের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যে কারণে ইউরোপবাসীর কাছে সুড়ঙ্গ সড়কটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এই সুড়ঙ্গ সড়কটি শুরুর দিকে সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। ১৯৮৭ সালে চ্যানেল-ট্যানেল পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ইউরোপ মহাদেশের বৃহৎ কোম্পানি ইউরো ট্যানেল। ইউরো ট্যানেলের সদর দফতর প্যারিস থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে এটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ১৯৯৪ সালের ৬ মে চ্যানেল-ট্যানেল সর্বস্তরের জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। চ্যানেল- ট্যানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর পারিপাশ্বর্িকতা। ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত হওয়ায় এর উপরে রয়েছে সামুদ্রিক ঢেউ আর নিচে সুড়ঙ্গ সড়ক। এর উভয় পাশ না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না, এই বিস্তৃত জলরাশির ভিতরে লুকিয়ে আছে একটি সুড়ঙ্গ সড়ক। চ্যানেল-ট্যানেলের নকশা করেছিলেন বিশ্বের অন্যতম নকশাকারী প্রতিষ্ঠান সিটিজিএফএম গ্রুপ।

চালু হওয়ার পর থেকেই ভ্রমণপিপাসু মানুষের নজর কাড়তে থাকে চ্যানেল-ট্যানেল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এই সুড়ঙ্গ পথ দেখার জন্য ভিড় জমাতে থাকেন। ঐতিহ্যগতভাবেই ফরাসিরা ভ্রমণপিয়াসী। তাই প্রতি বছর প্রায় কয়েক লাখ ফরাসি দর্শনার্থী চ্যানেল-ট্যানেল পরিদর্শন করতে আসেন। ব্রিটিশরাও কম নয়, বছরে প্রায় ২ লাখ ব্রিটিশ অপূর্ব এই সংযোগ সুড়ঙ্গ সড়কটি পরিদর্শন করেন। চ্যানেল-ট্যানেল প্রাথমিক অবস্থায় একটি প্রকল্পভিত্তিক কার্যক্রম ছিল। এই প্রকল্পের অধীনেই কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ সুড়ঙ্গ। প্রথম পাঁচ বছর এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ট্যানেল গ্রুপ ফ্রান্স ম্যানচেইলের লাভ ছিল প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। চ্যানেল-ট্যানেলের মাধ্যমে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে গভীর ও সুদৃঢ় করেছে।

মো. রিয়াজুল ইসলাম

0 comments:

Post a Comment