দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেট। উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফিসাধক হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর পুণ্যভূমি সিলেট প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।
নামকরণের ইতিহাস
সিলেট নামকরণের বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে। প্রাচীন গৌড়ের রাজা গুহক তার কন্যা শিলার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট স্থাপন করে নাম রাখেন শিলাহাট। এই শিলাহাট হতে শ্রীহট্ট। পরে নাম হয় সিলেট। অন্য একটি মত হচ্ছে_শিল শব্দের অর্থ পাথর আর হাট মানে বাজার। তাই এটা মনে করা হয় যে, পাহাড়ের পাদদেশের এই জনপদে পাথরকে কেন্দ্র করে একটি জমজমাট হাট গড়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চল শিল (পাথর)-এর হাটের জন্য শিলহাট এবং কালক্রমে তা লোক মুখে সিলেট নামে পরিচিত হয়। মুসলমান আমলে এ জেলা 'সিলহেট' নামে পরিচিত ছিল।
আয়তন ও অবস্থান
আয়তনের ভিত্তিতে সিলেট জেলা বাংলাদেশের ১১তম বৃহত্তম জেলা। জেলার মোট আয়তন ৩৪৯০.৪০ বর্গ কি.মি. যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২.৩৫%। ভৌগোলিকভাবে জেলাটি ২৪০৩র্৬ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৫০১র্১ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০৩র্৮ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২০৩র্০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া পাহাড়, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ এবং আসামের কাছার ও করিমগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা।
প্রশাসনিক পটভূমি
মধ্যযুগে সিলেট অঞ্চলে একটি ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্য ছিল। ১৩৮৪ সালে তুর্কিরা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে এ অঞ্চল দখল করে। ঐ সময় হযরত শাহজালাল (রহ.) এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং তারই প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলটি বিজিত হয়।
১৬২২ সালে সুবাদার ইসলাম খাঁ সিলেটে মোঘল শাসন কায়েম করেন। ১৭৬৫ সালে ঢাকা বিভাগের অংশ হিসেবে সিলেট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে তৎকালীন বঙ্গদেশের অন্তভর্ুক্ত হয়।
১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তভর্ুক্ত ছিল। তবে ঐ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা নব গঠিত আসাম প্রদেশের অন্তভর্ুক্ত হয়। ১৯৪৭-এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামেরই অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তভর্ুক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তভর্ুক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের সময় বৃহত্তর সিলেট জেলার ৪টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়। এই নতুন জেলাগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ও মৌলভীবাজার। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট দেশের ৬ষ্ঠ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পায় এবং বৃহত্তর সিলেট জেলার সীমানাই নতুন সিলেট বিভাগের আওতাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে সিলেট জেলায় ১২টি উপজেলা, ১০১টি ইউনিয়ন ও ৩৪৯৭টি গ্রাম আছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে_সিলেট সদর, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোপালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা।
নদ-নদী : সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন, গোয়াইন
জলবায়ু : বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২০ সে. এবং সর্বনিম্ন ১৩.৬০ সে.। বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মি.মি.।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
জৈন্তাপুরের প্রস্তর স্মৃতি, গড় দুয়ার ঢিবি, গায়েবি মসজিদ, হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের দরগাহ, আবু তোরাব মসজিদ, নবাবী মসজিদ, আকালিয়ার মুঘল মসজিদ, ঢাকা দক্ষিণ মন্দির, তিন মন্দির, কিন ব্রিজ, চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি, তামাবিল, জাফলং, জাফলং লেক, জৈন্তাপুর এলাকার চা বাগান, ছাতক, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্র, তেল উৎপাদন কেন্দ্র , গৌরগোবিন্দের টিলা, আলী আমজাদের ঘড়ি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পারাবাত, জয়ন্তিকা ট্রেনে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। এছাড়া সড়কপথে ও বাসে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। গ্রীনলাইন, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, এস আলম প্রভৃতি পরিবহনে করে সিলেট যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা।
0 comments:
Post a Comment