Saturday, November 27, 2010

হিপনোটিজম বা সম্মোহনবিদ্যা

0 comments
সম্মোহনবিদ্যা (hypnotism) - বা হিপনোটিজম এক ধরনের কলাবিদ্যা। হিপনোটিজম শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ হিপ্নস (hypnos) থেকে। এর মানে হলো 'ঘুম'। অবশ্য হিপ্নস (hypnos) হলো গ্রিক ঘুমের দেবতার নাম।

হিপনোটিজম-এর প্রভাবে একজন লোককে সম্মোহনকারী তার নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো কাজ করিয়ে নিতে পারে। পালন করাতে পারে যেকোনো নির্দেশ। সম্মোহনবিদ্যার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। তখন থেকেই মানুষ সম্মোহনবিদ্যাকে কাজে লাগাচ্ছে। তখন অবশ্য এর ব্যবহার ছিল আদিদৈবিক ক্ষমতা, জাদুবিদ্যা, অলৌকিক ঘটনা এসব ব্যাপারে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্মোহনবিদ্যাকে জানার চেষ্টা চলছে।

হিপনোটিজম বা সম্মোহনবিদ্যা আরম্ভ করেন অস্ট্র্রিয়ার ভিয়েনা শহরের এক ডাক্তার। তার নাম আন্টন মেজমার (Fraû Anton Mesmer, ১৭৩৩-১৮১৫)। ডাক্তার মেজমারের নাম অনুযায়ী হিপনোটিজমকে বহুকাল পর্যন্ত মেজমারইজম বলা হতো। স্কটল্যান্ডের ডাক্তার জেমস ব্রেড (James Braid) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে "হিপনোটিজম" শব্দটা প্রথম প্রবর্তন করেন। সম্মোহিত মানুষকে দেখলেই বোঝা যায়, সে একটা আচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর এই আচ্ছন্ন অবস্থায় সম্মোহনকারী তাকে দিয়ে নিজের মনমতো সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। ইচ্ছে না থাকলে সম্মোহিত হওয়া যায় না বলে এর জন্য সহযোগিতা দরকার। তাই সম্মোহন করবার আগে সম্মোহনকারী ইচ্ছুক ব্যক্তিকে একটি অন্ধকার ঘরে বসিয়ে খুব মৃদুস্বরে তাকে বারবার খুব আরাম করে বসে শরীরকে শিথিল করতে বলে। এরপর তাকে যেকোনো একটা জিনিসের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে বলা হয়। বহুক্ষণ এভাবে চেয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন সম্মোহনকারী তাকে বলে চোখ বন্ধ করতে আর তখনই সে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। এরকম অবস্থায় তাকে সম্মোহনকারী নানা কথা বলে, নানা নির্দেশ দেয় আর সম্মোহিত অবস্থায় সে সবকিছুই করতে থাকে।

সম্মোহিত হওয়ার পর একজন লোক নিজেকে অন্ধ, কানা, বোবা সবকিছু ভাবতে পারে, ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে পারে। সম্মোহিত করে তাকে দিয়ে এমন সব কাজ করিয়ে নেওয়া যায় যা সে সদ্য অবস্থায় কখনোই করতে পারে না। সম্মোহিত অবস্থা থেকে জেগে ওঠার পর তার পক্ষে সে কী করেছে আর না করেছে কিছুই আর মনে করা সম্ভব হয় না।

বর্তমান সময়ে অনেক রকম রোগের চিকিৎসার জন্য হিপনোজম প্রয়োগ করা হয়। ইংল্যান্ডের ডা. এস ডেল অবেদকের (anaesthesia এনেস্থেসিয়া) পরিবর্তে সম্মোহিত করে তার রোগীদের দাঁত তুলতেন। এভাবে তিনি ফুসফুসের উপর অস্ত্রোপচারও করেছেন। মনের ওপর চাপ বা দুশ্চিন্তা হিপনোটিজম করে দূর করা যায়।

0 comments:

Post a Comment