Saturday, November 27, 2010

বগুড়া

18 comments
বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় (পূর্ব নাম পুণ্ড্রুনগর) ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগে পালদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দ্বাদশ শতক পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পাল শাসন অব্যাহত থাকে। শেষ পাল রাজা মদনপালকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের বিখ্যাত রাজা বিজয় সেন এ অঞ্চল দখল করেন। এরপর বখতিয়ার খিলজীর নদীয়া বিজয়ের মাধ্যমে বগুড়া অঞ্চল মুসলমানদের শাসনভুক্ত হয়। পরে ১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিলি্লর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দিন বগ্রা খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তার নামানুসারে জেলার নামকরণ করা হয়েছে বগুড়া। ব্রিটিশ শাসন বিস্তারের সূচনা পর্বে বগুড়া অঞ্চলের ব্রিটিশবিরোধী ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। ফকিরদের নেতা মজনু শাহ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বগুড়ায় নীল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। বগুড়া জেলার আয়তন ২৯ হাজার ১৯৯ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলা, দক্ষিণে ঐতিহাসিক চলনবিল, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে চলনবিলের অংশবিশেষ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা। এ জেলার প্রধান নদী হলো_ করতোয়া, নাগর, বাঙ্গালি, ইছামতি। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৩৪.৬ ডিগ্রি সর্বনিম্ন ১১.৯ সেলসিয়াস ডিগ্রি ; বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১ হাজার ৬১০ মি.মি.।

বগুড়া শহরের গোড়াপত্তন হয় ১৮৫০ সালে ও বগুড়া পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। উত্তরবঙ্গের শিল্পনগরী হিসেবে বগুড়ার পরিচিতি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালুর পর বগুড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গতি পেয়েছে। রাজশাহী জেলার ৪টি থানা (আদমদীঘি, বগুড়া, শেরপুর ও নওখিলা) দিনাজপুরের ৩টি থানা, রংপুরের ২টি থানাসহ (গোবিন্দগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ) মোট ৯টি থানা নিয়ে ১৮২১ সালে বগুড়া জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীতে জেলার প্রাথমিক কাঠামো থেকে ৯টি থানা বাদ দিয়ে নতুন ৭টি থানা সংযোজন করে বৃহত্তর বগুড়া জেলা সৃষ্টি হয়। বগুড়াকে পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এখানে উপজেলা ১২, পৌরসভা ১১, ইউনিয়ন ১০৯, গ্রাম ২ হাজার ৭০৬, মৌজা ১ হাজার ৭৮২। উপজেলাগুলো হলো_ বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও গাবতলী। এর মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলা বাদে সব উপজেলায় পৌরসভা রয়েছে। তবে আদমদীঘি পৌরসভার নাম সান্তাহার পৌরসভা।

বগুড়া জেলার লোকসংখ্যা ৩২ লাখ। এখানকার শিক্ষার হার ২৮.৪% উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো_ বগুড়া সরকারি আযিজুল হক কলেজ, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নেকটার)। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা। এটাকে জেলার জিরো পয়েন্ট বলা হয়। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতমাথার ইন্টারসেকশন তৈরি করে এর নাম দিয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়ার। এখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান শহীদ ৭ বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ও পবিত্র কোরআনের আয়াত লিখে রাখা হয়েছে। শিল্পের শহর হিসাবে খ্যাত বগুড়ার ভারী শিল্প-কারখানাগুলো এখন আর নেই। বর্তমানে নতুন করে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প গড়ে উঠেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে_ জামিল সাবান ফ্যাক্টরি, ভার্জিনিয়া টোব্যাকো কোম্পানি, কটন স্পিনিং মিল। এছাড়া তাজমা সিরামিক কারখানাটি বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে বন্ধ আছে। বর্তমানে এ জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যা ৭টি। এগুলো হলো_ সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে বগুড়া-১, শিবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে বগুড়া-২, আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৩, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৪, ধুনট ও শেরপুর উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৫, বগুড়া সদর-৬, গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৭।

-আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

18 comments:

Post a Comment