Tuesday, February 22, 2011

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

0 comments
দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে। নামকরণ হয় দু'টি পাতা একটি কুঁড়ি খ্যাত সিলেটের বিশিষ্ট ওলি হযরত শাহজালাল (র.)-এর নামানুসারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পেছনের ইতিহাসও অনেক দীর্ঘ। বৃহত্তর সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর জন্ম। শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে কুমারগাঁও এলাকায় মনোরম পরিবেশে ৩২০ একর জায়গা জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক ক্যাম্পাস। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি দিনের জন্যও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। আর সে কারণে সেশনজটমুক্ত হিসাবে পরিচিতি এখন দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার সোনালি দুই দশক। আর একুশে পদার্পণের শুভক্ষণে জাতিকে আরো দক্ষ দেশগড়ার সৈনিক উপহার দেয়ার অঙ্গীকার নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশিস্নষ্ট সবাই।
দুই দশক পেরিয়ে শাবির নানা আয়োজন: নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ১লা ফাল্গুনে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছিলো নানা রঙে। প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরিয়ে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে শাবি এ আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ৯টায় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাসে নেমেছিল প্রাণের মেলা। বসন্তের প্রথম দিনে এমন অনুষ্ঠানে ফুরফুরে ছিল শাবির হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সেই সাথে শাবিকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর স্বপ্নের কথা শুনে বিমোহিত হল অনুষ্ঠানস্থলের সবাই।

ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেসা হক এমপি, হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি, মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী ও প্রফেসর এম তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.ন.ম শফিকুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক জাফরিন আহমেদ লিজা ও শিল্পি রাণী বসাকের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শাবির কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস এবং শাবির প্রতিষ্ঠাতা ভিসি প্রফেসর ড. সদরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অতিথিদের নিয়ে বের হয় শোভাযাত্রা। পুরো ক্যাম্পাসে র্যালিটি প্রদক্ষিণ করে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যের হাতে পদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। নানা রঙে সেজেছিল পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিদের আগমন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নেয়া হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা। অনুষ্ঠানের শিক্ষা আড্ডা পর্বে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শিক্ষামন্ত্রী। সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি চালু করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সব বিশ্ববিদ্যালয়ই এ বিষয়ে একমত, তবে কোন কোনটি এখনও এ পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত না হওয়ায় তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এক শুভলগ্নে যাত্রা:১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৩ জন শিক্ষক এবং ২১০ জন শিক্ষাথর্ী নিয়ে শাবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছিল শিক্ষা কার্যক্রম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাচ পাস করে বের হয়েই দেশের একমাত্র সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে দেশ-বিদেশে শিক্ষানুরাগীদের আস্থা অর্জন করে। বিদেশী শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসে শাবি ক্যাম্পাসে। কিন্তু দুই-এক বছর না যেতেই নানাবিধ অনিয়ম, অন্তহীন সমস্যায় নষ্ট হতে থাকে এর সুনাম। সেসব গস্নানি মুছে আবারো ফিরে এসেছে সেই সোনালি অতীত। সেশনজটমুক্ত একটি ক্যাম্পাস উপহার দেয়ার ঘোষণা ছিল বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের। তাঁর ঘোষণা এখন পুরোপুরিই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীরা গত বছরের ৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বছর ১৮ জানুয়ারি ভর্তির সবরকম কার্যক্রম শেষ করে ২৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু করে। এবারো ছিল ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম। যা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও জন্য অনুকরণীয় হয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। নানা প্রযুক্তির আবিষ্কারের জন্য এম বিলিয়ন এ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ফিরে দেখা: ১৯৮৫ থেকে ২০১৫। শাবির জন্য গৃহীত হয়েছিল ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা। দীর্ঘ তিন দশক পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়েছে পরিকল্পনার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। দীর্ঘ সময়ের পরও পরিকল্পনার অনেকটাই পূরণ হয়নি। আর সম্পূর্ণটা কবে পূরণ হবে সেটাও অজানা। ফলে কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য_ আবাসন সংকট ও পরিবহন সংকট। সকল শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি হল। যা এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা ভোগ করতে পারে। বাকিরা অন্যত্র থেকে ক্লাস করছে।

আবাসন, পরিবহনের সমাধান চাই: অনেকটাই কেটে গেছে শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট। এখনও রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ও পরিবহন সমস্যা। নিয়ম অনুযায়ী সেমিস্টার পদ্ধতিতে আবাসিক সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৫ শতাংশ আবাসিক সুবিধা লাভ করে। ছাত্রদের জন্য ৬টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৩টি হলের প্রয়োজন, কিন্তু আছে মাত্র ২টি ছাত্র হল ও ১টি ছাত্রী হল। একটি মাত্র ছাত্রী হলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিকল্প হিসাবে শহরে দু'টি বাড়ি ভাড়া নেয়া হয়েছে। এজন্য ছাত্রীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে আশার আলো ইতিমধ্যেই একটি ছাত্র হল ও একটি ছাত্রী হলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্বদ্যিালয়ের পরিবহন সমস্যা পুরনো। বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাসে চলছে পরিবহন সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনেই শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।

নতুন দিনের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা: অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করছেন উপাচার্যসহ এখানকার একদল নিবেদিত শিক্ষানুরাগী। সম্ভাবনাময় শাবিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ আইটি ভবনের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ দেয়া এটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। আধুনিক এবং উন্নত গবেষণায় নিয়োজিত থাকবে এখানকার গবেষকরা। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে মাত্র দুবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষবার অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে। ৩য় সমাবর্তনের লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, নানা রকম আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাসহ ক্যাম্পাসে নিয়মিতভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসসহ আবাসিক হলগুলোকে ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা_ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক সামনে। জাতি, দেশ পাবে একদল নিবেদিত দেশপ্রেমিক।

০০ মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন

0 comments:

Post a Comment