নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। ছোট-বড় নদীগুলো পর্বত থেকে উৎপত্তি লাভ করে এদেশের প্রায় সমগ্র সমতলভূমির ওপর দিয়েই সাগরে পতিত হয়েছে। কতকাল থেকে এ দেশের বুকের ওপর দিয়ে নদ-নদীগুলো প্রবাহিত হচ্ছে কে তার সন্ধান রাখে। এক সময়ের উত্তাল খরস্রোতা এই কুমার নদ এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। একদা মাঘ মাসে পানিতে উত্তাল থাকতো কুমার নদ। এখন শুধুই ফসলের মাঠ। বর্ষা মৌসুম এলে মনে হয় না এক সময় এ নদই মানুষের প্রধান যাতায়াত রুট ছিল। মুকসুদপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৩৮-৪০ কিলোমিটার কুমার নদ মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। যে নদে মাঘ মাসে লঞ্চ, স্টিমার, বড় দাঁড় নৌকা চলত, পানির অভাবে সেই নদ আজ শুকিয়ে কাঠ। নদের বুকে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ। বসানো হচ্ছে পানির পাম্প, নদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতু দেখলেই মনে হয় এটা একটা নদী। কাশিয়ানী মুকসুদপুরের সীমানার বলুগা উত্তর এবং বনগ্রাম হয়ে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা ও মহারাজপুর বাটিকামারীর বাহাড়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে। যে দিকে তাকাই পলি জমতে জমতে ভরাট হয়ে গেছে। আর কিছু অসাধু লোকতো দখল করে শুরু করছে চাষাবাদ। নদ শুকিয়ে যাওয়ায় খাবার ও গোসলের পানিসহ হাজার হাজার একর ইরি, বোরো খেতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। এক সময় জমিতে পানি দেওয়া হতো কুমার নদ থেকে। এখন নদের মধ্যে পাম্প বসিয়ে ফসলে পানি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের জরিপে এই নদের অববাহিকায় বসবাস করত ৫ হাজার জেলে পরিবার। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ রপ্তানি করে নিজেদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও সংসারের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে আসছিল। তারা এখন হাহাকারে দিন কাটাচ্ছে। বর্তমানে কুমার নদ থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ। বর্ষা মৌসুমে জলাশয়ে কিছু মাছের দেখা মিললেও অন্য মৌসুমে নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে কাঠ হওয়ায় বাজারে দেশি মাছ দেখা যায় না। চৈত্র-বৈশাখ মাসে কুমার নদের মধ্যে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে কুমার নদ একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
-নাহিদ পারভেজ, গোপালগঞ্জ
0 comments:
Post a Comment