বিশেষজ্ঞদের কারোকারো অভিমত, ১ লক্ষ লোকের মধ্যে ২৬০ জন লোক প্রতিবছর ক্যান্সারে মৃতু্যবরণ করেন এবং সম্প্রাতিক এই ধারা চলতে থাকলে তা ১১৫০ জন লোকে পৌছাতে পারে বিশ বছরের মধ্যে। ক্যান্সার এখনও দুরারোগ্য, এর নিরাময় আবিষ্কৃত না হলেও আগাম চিহ্নিত হলে এটি প্রতিরোধ যোগ্য।
এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিলো শিশুদেরকে প্রখর রোদের আলো থেকে দূরে রাখুন, রোদের আলো ভিটামিন ডি সংশেস্নষে কাজ করলেও দীর্ঘ সময় কড়া রোদে থাকলে ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে অনেকের। বিশেষজ্ঞরা বলেন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খালি গায়ে ও খালি চোখে নিয়মিত বা প্রায়শ আধ ঘন্টার অধিক সময় থাকলে ক্যান্সার হবার আশংকা খুব বেশী। এ সময় ফুলপ্যান্ট শার্ট পরা, মাথাল পরা, সম্ভব হলে চোখে রোদ চশমা পরা উচিত।
সাম্প্রতিক খবরে প্রখাশ: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্যান্সার বাড়ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপনের ত্রুটি জনিত রোগও বাড়ছে। ক্যান্সার এদের মধ্যে অন্যতম। বস্তুত: বিশ্বে ৭১ লক্ষ নতুন ক্যান্সার রোগী এবং ৪৮ লক্ষ লোকের ক্যান্সারে মৃতু্য অধিকাংশ ঘটছে অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, রিপোর্টটি করেছেন আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি। গবেষকরা বলেছেন এর মূলে রয়েছে সেসব দেশে জনগণ অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার মত কারণ-যেমন ধূমপান, শুয়ে বসে জীবন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য-অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে এসব বদভ্যাসও হয়েছে অনেকের মধ্যে।
"গেস্নাবাল ক্যান্সার ফ্যাকট্স ও ফিগারস" নামে এ রিপোর্টে বেশি গুরুত্ব সহকারে এসেছে ফুসফুস, স্তন ও মলাশয় মলান্ত্রের ক্যান্সার।
২০০৮ সালের কথা যদি বলা হয়, যত ক্যান্সার সে বছর বিশ্বজুড়ে, এর এক তৃতীয়াংশ (আনুমানিক দিনে ৭৩০০ জনের মৃতু্য) এড়ানো যেত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চর্চায়-যেমন ধূমপান, মদ্যপান, সংক্রমনের ধরন ও খাদ্যভ্যাস এসব ব্যাপারে। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের বর্তমান জ্ঞান ও তথ্য যদি দেশে দেশে প্রচার করা যায়, জনগণ যদি অবহিত হতে পারে তাহলে পরবর্তী দুই তিন দেশকে ক্যান্সার মৃতু্য আরও অনেক কমে যাবে। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার, জনগণ, বেসরকারী সংস্থা, দাতাসংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ধনীদেশগুলোতে ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী পুরুষদের মধ্যে প্রধান ক্যান্সার ছিলো প্রোস্টেট, ফুসফুস ও মলাশয় মলান্ত্রের ক্যান্সার আর মহিলাদের মধ্যে ছিলো স্তন, মলাশয়মলান্দ্র ও ফুসফুসের ক্যান্সার।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুরুষদের বড় ক্যান্সার ঝুকি দেখা গেছে ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃতের ক্যান্সার, আর মহিলাদের মধ্যে স্তন, সার্ভিক্স ও ফুসফুসের ক্যান্সার। বাংলাদেশে একটি পরিসংখ্যান অনুসারে ১০ লক্ষাধিক ক্যান্সার রোগী রয়েছে। তবে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন এ সংখ্যা এখন ২১ লক্ষেরও বেশি। প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লক্ষ রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে মৃতু্যবরণ করছে কমপক্ষে ২৬০ জন। তবে এ রোগ মোকাবেলার জন্য চিকিৎসার জন্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দেশে অনেক কম, মাত্র ১১০ জন। বিশেষজ্ঞ একে সামাল দিতে হিমসিম খাবেন।
আমাদের দেশে ধূমপান এবং নানান ধরনের তামাক জর্দ্দা, গুল সেবন, ভেজালখাদ্য ও পানীয় বিভিন্ন রাসায়নিকের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া, সংক্রমণ নানা কারণে ক্যান্সার ঘটছে। ফুসফুস, লিভার, জিহ্বা, গালবিল, মুখগহ্বরের ক্যান্সারই প্রধান। ইদানীং নারীদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারও বাড়ছে। ক্যান্সার সম্বন্ধে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি, ক্যান্সারের লক্ষণ আগেভাবে সনাক্ত করা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চর্চা, ধূমপান মদ্যপান বর্জন, বাইরের ভেজাল খাবার পরিহার, এসবও প্রয়োজন। সেসঙ্গে বাংলাদেশে ক্যান্সার ব্যবস্থাপনাও চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে হবে।
রয়টারের এক খবরে প্রকাশ, আমেরিকা, চীন ও ব্রিটেনের একতৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিবছর প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি জনগণ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস করেন, মদ্য পান কম করেন ও ব্যায়াম করেন।
আমিরাকান ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ (এআইসিআর) এবং ওয়াল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড (ডবিস্নউসিআরএফ) এর পরামর্শ: জীবন যাপনে সহজ সরল পরিবর্তন করে ব্রিটেন ও আমেরিকায় ৪০% স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, প্রতিরোধ করা যায় শত সহস্র মলান্দ্র, পাকস্থলী ও প্রেস্টেট ক্যান্সার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১১ সালেও যেসব ক্যান্সার স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রেখে, সুখাদ্য খেয়ে, শরীরচর্চা করে ও জীবনযাপনে অন্যান্য পরিবর্তন এনে ঠেকানো যেত, সেসব ক্যান্সারে মানুষ অনাবশ্যক মৃতু্যবরণ করছে।
বলা হচ্ছে: নিয়মিত ব্যায়াম ঠেকাতে পারে নানা রোগ যেমন- ক্যান্সার, হূদরোগ ও ডায়াবেটিস। আমরা তো জানি বিশ্বজুড়ে মৃতু্যর একটি বড় কারণ হলো ক্যান্সার। প্রতিবছর ১ কোটি ২৭ লক্ষ্য লোক আবিষ্কার করেন যে তাদের ক্যান্সার হয়েছে এবং ৭৬ লক্ষ লোক কোনও না কোন ক্যান্সারে মৃতু্য বরণ করেন, আমাদের জানা ২০০ ধরনের ক্যান্সার রয়েছে।
ক্যান্সর সম্বন্ধে গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে (আইএআরসি) এভাবে চললে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যান্সারে মৃতু্যহবে ১ কোটি ৩২ লক্ষ লোকের, ২০০৮ সালে ক্যান্সারে মৃতু্যর দ্বিগুণ। বেশিরভাগ মৃতু্যকে দরিদ্র দেশগুলোতে। পৃথক এক বিকৃতিতে জেনেভা থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন বিশ্বজুড়ে ২১-২৫% স্তন ও মলন্দ্রি ক্যান্সার, ২৭% ডায়াবেটিস ও ৩০% হূদরোগের প্রধান কারণ হলো শরীরচর্চা কমে যাওয়া। ডবিস্নউসিআরএফ এর ডিপুটি স্বাস্থ্য প্রধান র্যাচেল হামসন বলেন, এ বানী সহজ সরল-ধূমপান না করা, সুখাদ্য খাওয়া, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হলো অনেক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় অথচ এই কথাটি পৌছানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
"আপনাকে এসব খাবার খেতে হবে, এ পরিমাণ ব্যায়াম করতে হবে" কথাগুলো বলা সহজ কিন্তু এসব পরিবর্তন ঘটানো কঠিন-একে ঘটাতে প্রত্যেকের ভূমিকা চাই, ব্যক্তি, সরকার, জনগণ, আন্তর্জাতিক সংস্থা সবার।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-পূর্ণ বয়স্করা সপ্তাহে অন্তত: ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করা উচিত। সপ্তাহে পাঁচদিন ৩০ মিনিট হাটলে বা প্রতিদিন সাইকেল চড়ে কর্মস্থলে গেলে তা হতে পারে।
ধূমপান ও তামাক সেবনের বিরুদ্ধে আইনও এর প্রয়োগ ও সিগারেট ও তামাকের মূল্য বৃদ্ধি। তামাক প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃতু্য ঘটায়, তামাক জনিত ফুসফুসের ক্যান্সার পৃথিবী জুড়ে বড় সমস্যা। শতসহস্র মানুষ নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের ধোয়া, সেবন করে রোগাক্রান্ত হচ্ছে।
ক্যান্সারের জন্য জাদু ওষুধ নেই তবে ক্যান্সার থেকে সুরক্ষার উপায় তো আছে। আগে ভাগে চিহ্নিত করা ও জীবনযাপনে সহজ পরিবর্তন নানা। ভেজাল খাদ্য, তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনও প্রয়োগ।
০০ অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী, পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা
0 comments:
Post a Comment