Saturday, February 19, 2011

হলওয়েল

0 comments
সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণ করলে কোম্পানির গভর্নর ড্রেক, সৈন্যাধ্যক্ষ মিনসিন সবাই নৌকায় চড়ে পালিয়ে গেল। তখন অন্যতম কাউন্সিলর ডা. হলওয়েল হলেন গভর্নর ও সৈন্যাধ্যক্ষ। কিন্তু সিরাজের আক্রমণের মুখে টিকতে পারলেন না। হলওয়েলকে বন্দী করে নবাব নিয়ে গেলেন মুর্শিদাবাদ।


হলওয়েল বারবারই মিথ্যা কথা বলতে এবং অতিরঞ্জনে ওস্তাদ। ১৭৫২ সালে জমিদারি সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিলের সময় হলওয়েল লিখেছিলেন কলকাতায় চার লাখ লোকের বাস। আসলে তখন লোকসংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ। বেশি করে বলা হলওয়েলের মজ্জাগত।

একুশ বছর বয়সে হলওয়েল লন্ডনের গাইস হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি শিখে বেরিয়ে কোম্পানির চাকরি নিয়ে ভারতবর্ষে আসেন। পাটনা ও ঢাকার কুঠিতে চাকরি করে ১৭৩২ সালে এলেন কলকাতায় সার্জন হয়ে। তখন মাইনে মাত্র ৫০ টাকা। হলওয়েল অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের লোভে ডাক্তারি ছেড়ে সিভিল সার্ভিসে ঢুকলেন। ১৭৫২-তে হলেন কলকাতার জমিদার। উচ্চাকাক্সক্ষী এবং নিরঙ্কুশ মিথ্যাবাদী হলওয়েল সুযোগ বুঝে ফোর্টের গভর্নরও হয়ে গেলেন যুদ্ধের সময়।

অন্ধকূপ হত্যা কাহিনীটি সিরাজ চরিত্রকে কলঙ্কিত করার জন্য হলওয়েল উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে রচনা করেছিলেন। গল্পটা হলো দুর্গ জয় করে নবাব আদেশ দিলেন লম্বায় ১৮ ফুট, চওড়ায় ১৫ ফুট একঘরে ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দী করে রাখতে হবে। সে ঘর আবার চারদিকে বন্ধ। সকালে দেখা গেল ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে ১২৩ জন মারা গেছে। ওই কাহিনী সম্পূর্ণ মনগড়া। কেননা তখন দুর্গে ১৪৬ জন ইংরেজ ছিলই না। আর ওই আয়তনের ক্ষুদ্র ঘরে কোনো রকমে ঠেসে ঠুসেও স্বাস্থ্যবান ১৪৬ জন মানুষকে ঢোকানো সম্ভব নয়। আয়তনের আর অংকের হিসাব করতে ভুলে গিয়েছিলেন মিথ্যাবাদী হলওয়েল।

অথচ নিজের কীর্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য হলওয়েল যখন ক্লাইভের পরে গভর্নর হলেন তখন নির্লজ্জের মতো কলকাতায় ব্ল্যাক হোল মনুমেন্ট করে দিলেন। পরে ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর হয়ে সে মনুমেন্ট সরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন বড়লাট হয়ে আবার হলওয়েল মনুমেন্ট করেছিলেন। মিথ্যাকে চালু রাখতে ইংরেজের কোনো লজ্জা বা দ্বিধা নেই। ১৯৩৯ সালে নেতাজী সুভাষ বোসের নেতৃত্বে সেই মনুমেন্টটি ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে চূর্ণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নাট্যকার সিকান্দার আবু জাফর এ আন্দোলনের চাক্ষুস সাক্ষী।

গ্রন্থনা : তাহ্মীদুল ইসলাম

0 comments:

Post a Comment