একজিমা বা এটোপিক ডার্মাটাইটিস শিশুদের একটি অতি সাধারন চর্মরোগ। যেসব শিশুদের এ ধরণের চর্মরোগ দেখা দেয় তাদের পিতা মাতারা বছরের পর বছর ধরে ডাক্তারের কাছে ছুটিছুটি করেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোন সুফল পাননা। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের চর্মরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভূল চিকিৎসার ঘটনাও কম নয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের যেকোন ধরণের চর্মরোগ হলে প্রথমে পিতা-মাতাগণ শরণাপন্ন হন শিশু বিশেষজ্ঞগণের কাছে। প্রাথমিক চিকিৎসাটা পায় শিশুরা সেখানে। কিন্তু শিশুদের চর্মরোগ চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে শিশু বিশেষজ্ঞগণ বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করছেন অথবা অপ্রয়জনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভূল চিকিৎসার ঘটনাও ঘটছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই শিশুদের চর্মরোগের চিকিৎসা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞগণই করে থাকেন। পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজি বিভাগ নামে শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা বিভাগ। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অর্থের পিছনে ছুটতে গিয়ে প্রফেসর থেকে নবীন ডার্মালোজিস্ট সবাই সব ধরণের রোগী দেখি। তাই ডার্মাটোলজিতে সাব স্পেশালিটি গড়ে উঠছেনা। অথচ বিশ্বব্যাপী শিশু ডার্মাটোলজির ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশেও শিশু ডার্মাটোলজির ক্ষেত্রে পৃথক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ গ্রুপ গড়ে উঠতে পারে। এতে বাণিজ্যিক সুবিধার পাশাপাশি স্পেশালিটি গড়ে উঠতে পারে।
শিশুদের একজিমার প্রধান উপসর্গ হলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে র্যাশ উঠে এবং চুলকায়। অনেক সময চুলকানোর স্থান লাল হয়ে যায় এবং কিছুটা খসখসে হয়ে যায়। এমনকি আক্রান্ত স্থান থেকে তরল জাতীয় ফ্লুইড নি:সরিত হতে পারে। শিশুদের এটোপিক ডার্মাটাইটিস ৫ বছর বয়সের মধ্যেই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরণের একজিমা অত্যন্ত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আমি শিশুদের একজিমার চিকিৎসার চাইতে শিশুর পিতা-মাতাদের গাইড করে থাকি বেশী। এতে বাবা-মারা শিশুকে বারবার ডাক্তারের কাছে নেয়ার পরিবর্তে ঘরে বসেই যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারেন। তবে একজিমা প্রথমে প্রয়োজন যথাযথ ডায়াগনসিস। অনেক ক্ষেত্রে গরম র্যাশ, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস ও সোরিয়াসিস এর সঙ্গে প্রায় একই রকম দেখা যায়। তাই ডায়াগণসিসে সমস্যা হয়। তবে একজন দক্ষ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চর্মরোগের ধরণ দেখে সঠিক ডায়াগনসিস করতে পারেন। সাধারণত একজিমা কপাল, মুখ, হাত, পা ও ত্বকের ভাজে প্রথমে দেখা দেয়। তবে শরীরের অন্যান্য স্থানেও হতে পারে।
এটোপিক একজিমা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে কতগুলো অতিসাধারণ নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হবে। যেমন: আক্রান্তের ধরন বুঝে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক, উপযুক্ত কোন সেটরয়েড ব্যবহার, চুলকানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন সেবন এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন ভালো ময়েশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ঠিক করবেন কোন ধরণের ওষুধ শিশুর জন্য প্রয়োজন। এছাড়া নন ষ্টেরয়ডাল ক্রিমও দেয়া যায়।
মনে রাখতে হবে ক্ষারযুক্ত সাবান, গরমপানিতে গোসল, সিনথেটিক কাপড়, এলার্জিক ফুড, গরম আবাওয়া আক্রান্ত শিশুর রোগের তীব্রতা বাড়াতে পারে।
তাই শিশুদের একজিমা প্রতিরোধে পিতামাতার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী। শিশুর ত্বকে যে কোন ধরণের র্যাশ হলে প্রাথমিক অবস্থায় কোন ডাক্তারের কাছে না গিয়ে যে কোন ধরণের ময়েশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে এলার্জিক ফুড যেমন: বেগুন, চিংড়ি মাছ, ইলিশমাছ দেবেন না। বিরত রাখতে হবে উলেন বা সিনথেটিক কাপড় পরানো থেকে। রাতে যে কোন ধরণের এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় যদি ভালো না হয় তবে অবশ্যই কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
০০ ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম, চুলপড়া, চর্মরোগ ও এলার্জি এবং যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ, লেজার এন্ড কসমেটিক সার্জন, কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা
0 comments:
Post a Comment