Saturday, February 5, 2011

ঘাড়ে ব্যাথা

0 comments
সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস-ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন_
বাতের ব্যাথা বলতে আমার বুঝি হাত পা বা মেরুদন্ডের দীর্ঘকালীন ব্যাথাকে।“বাত” শব্দ টা নির্দিষ্ট কোন একটা রোগ নয় বরং এক প্রকার রোগ বলা যায় যার সংখ্যা শতাধিক। বাত সম্পর্কে প্রচলিত ধারনা নেতি বাচক।তাই তো রোগীদের সাধারন প্রশ্ন “ডাক্তার সাহেব রোগ টা কি বাত?” উত্তর যদি হ্যাঁ বলি তবে রোগীরা ধরে নেন বয়েস হয়েছে বাতের ব্যথা ত ধরবেই আর এটা সারবেও না।কথাটা নিতান্ত অমুলক ও নয়।অধিকাংশ বাতই বুড়ো বয়সের রোগ আর নিরাময়যোগ্য ও নয়।এটা সত্যি যে বয়স বাড়া এবং এর পরিবর্তন গুলো আমরা রোধ করতে পারি না তবে চিকিৎসা করে রোগীর উপসর্গ কমিয়ে কষ্টের লাঘব করা সম্ভব।

সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কিঃ-

ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন হল সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস।ব্যাপার টা একটু খুলে বলি। মেরুদন্ডের ক্ষয়(degenerative condition) রোগ হল স্পন্ডাইলোসিস আর মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া হল সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস।আমাদের মেরুদন্ড হল হাড়, মাংশপেশী, গিঠ ইত্যাদি নিয়ে। কশেরুকা বা ভারটিব্রা গূলো একটার উপর আরেকটা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক এবং অনান্য গিঠ দিয়ে জুড়ে তৈরি হল মেরুদন্ড। দুটো হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক, অনান্য গিঠ, লিগামেন্ট সব কিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে।মেরুদন্ডের হাড় ঘিরে রাখে একটা নালি বা ক্যানাল ,( ভারটিব্রাল ক্যানাল) যার ভিতর দিয়ে মস্তিস্ক থেকে নেমে আসে স্পাইনাল কর্ড এবং তা থেকে গাছের শিকড়ের মত নার্ভ গূলো বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদন্ডের হাড়ে পরিবর্তন হতে থাকে। ভারটিব্রা বা কশেরুকার মধ্যকার ডিস্কে পানি কমে গিয়ে ভঙ্গুর হয়,উচ্চতা কমে চিপ্টে যায় এবং তা অনেক সময় পিছনে সরে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে যাকে বলে ডিস্ক প্রোলাপ্স।এই ডিস্ক এর উচ্চতা কমার সাথে সাথে তৈরী হয় ছোটো ছোটো হাড়ের টুকরো বা অস্টিওফাইট যা।এই টুকরো গুলোও নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃস্টি করতে পারে।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারনঃ-
বয়সঃ বৃদ্ধ বয়সের রোগ এটি।স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয় ৪০ বৎসর বয়সের পর থেকে কোনো কোণো ক্ষেত্রে আগে থেকেও।
আনুপাতিক হার পুরুষ বা মহিলা রোগীদের মধ্যে প্রায় সমান সমান।
পেশাঃ- ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব পেশাতে রোগটি বেশী দেখা যায়।যেমন চেয়ার টেবিলে বসে কাজ, কমপিউটারে কাজ, টাইপ রাইটার ইত্যাদি।ঘাড়ের ঝাকুনি হয় এমন পেশা যেমন নর্তকী, সাইকেলে চলাচল করতে হয় এমন পেশা ইত্যাদি।।
ঘাড়ে আঘাত এর ইতিহাস থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
উপসর্গঃ=
প্রধান উপসর্গ হল ঘাড়ে ব্যাথা আর চল্লিশোর্ধ বয়সে ঘাড়ে ব্যাথার প্রধান কারন ও এটি।

ঘাড়ের ব্যাথা অনেক সময় কাঁধ থেকে উপরের পিঠে,বুকে , মাথার পিছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।ঘাড়ের থেকে হাতে নেমে আসা নার্ভের উপর চাপ পড়লে সমস্ত পুরো হাতেই ব্যাথা হতে পারে।

সার্ভিক্যাল স্পন্ডোলাইসিসের সবচে মারাত্মক দিক হল যখন স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ পড়ে।এটা থেকে চার হাত পায়ে দুর্বলতা, হাটতে অসুবিধা,পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া,ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে ।এটি হল সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোটিক মাইলোপ্যাথি(Crevical spondylotic myelopathy)।

ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যাথা লাগে।একিউট ক্ষেত্রে ডাইনে, বায়ে ঘাড় ঘোরান মুস্কিল হয়।ঘাড়ে জ্যাম মেরে ধরে থাকে।

ব্যাথার সাথে হতে পারে হাতে, বাহুতে ঝিন ঝি্ন, সির সির্, অবশ ভাব, সূচ ফোটানোর অনুভুতি সাথে হাত দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা।

লক্ষনঃ-
ঘাড় উপরের পিঠ এবং বাহুতে চাপ দিলে ব্যাথা অনূভুত হয়। ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়।
ঘাড় ব্যাথা কখন দুঃশ্চিন্তার কারনঃ-
ঘাড়ে ব্যথার সাথে নীচের লক্ষন থাকলে-
• বিনা কারনে হঠাৎ পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে বা নিয়ন্ত্রন করতে অসুবিধা হলে।
• হাত বা পায়ে অস্বাভাবিক দুর্বলতা
• জ্বর থাকলে
• ওজন কমতে থাকলে
• ৬ সপ্তাহের বেশী ব্যাথা থাকলে
• অনান্য নার্ভের সমস্যা যেমন, কথা বলতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা, চোখে দেখতে অসুবিধা।
• রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে,


• যে সমস্ত প্রশ্ন রোগীর মনে স্বাভাবিকভাবেই জাগেঃ-
• কি কারনে ব্যাথা হচ্ছে?
• সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলসিস ছাড়া অন্য কোন কারনে উপসর্গ গুলো হতে পারে কিনা
• কি কি পরীক্ষা করান উচিত।
• চিকিৎসা কি?
• অপারেশানের দরকার আছে কিনা?থাকলে কি কেন বা কখন।
• কিভাবে ঘাড়ের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
• ঘাড়ের বিশ্রাম বা কাজ করা বন্ধ রাখার দরকার আছে কিনা?
• চিকিতসা করলে ভাল হবে তো ? হলে পুরোপুরি কিনা?
• সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস থেকে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
• বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর দরকার আছে কিনা?


পরীক্ষাঃ-
সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস ডায়াগনোসিসের জন্য ঘাড়ের এক্স-রে প্রধান পরীক্ষা।৩০ উর্ধ বয়সে শতকরা ৫ থেকে ১৫ ভাগ এবং ৭০ উর্ধ বয়সের ৭০ থেকে ১০০% ভাগ লোকের এক্স-রে তে স্পন্ডোলাইসিসের লক্ষন ধরা পড়ে । এক্স রে’র সাথে রোগীর লক্ষনের মিল কম।এক্স রে তে স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন ধরা পড়লেও মাত্র ৫% লোক ঘাড় ব্যাথা তে ভোগেন অর্থাৎ অধিকাংশ লোকেরই ব্যাথা হয় না।অনেকের দেখা যায় এক্সরে তে ক্ষয় অনেক কিন্তু সেই তুলনায় ব্যথা কম আবার সামান্য ক্ষয়ে প্রচুর ব্যাথা হয়ে থাকে অনেকের।

অনান্য পরীক্ষাঃ- রক্তের গ্লুকোজ, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা।
বিশেষ পরীক্ষাঃ-ঘাড়ের এম আর আই(MRI), ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি( Electromyography nerve conduction study)।
চিকিৎসাঃ-
১) ঔষধঃ- ব্যাথার ঔষধ(Analgesics), মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ(Muscle relaxants), দুশ্চিন্তা কমানোর ঔষধ(Anxiolytics)।
২)ফিজিওথেরাপীঃ- ঘাড়ে টানা বা সার্ভিক্যাল ট্রাকশান(Cervical Traction), শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি(Short Wave Diathermy), ম্যাসাজ(Massage), ট্রান্সকিঊটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান(Transcutaneous electric nerve stimulation, TENS)।
সার্ভিক্যাল কলার(Cervical Collar)।
৩)ঘাড়ের ব্যায়ামঃ
৪) উপদেশঃ-
 শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশে চিত হয়ে ঘুমাবেন।ঘাড় যাতে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দেয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজন মনে করলে বালিশ নিচে টেনে নামিয়ে নেবেন বা কম উচ্চতার বালিশ ব্যাবহার করবেন।
 ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে বেশিক্ষন কাজ করবেন না
 কাজের জায়গায় চেয়ার টেবিল এমন ভাবে রাখবেন যাতে ঘাড় সামনে না ঝুকিয়ে কাজ করতে পারেন।
 ঘাড়ে গরম সেক দিতে পারেন,
 মাঝে মাঝে ঘাড়ের ব্যায়াম করে নেবেন।

অপারেশানঃ- শতকরা প্রায় একশতভাগ রোগী অপারেশান ছাড়া ভাল থাকেন। অপারেশানের দরকার পড়ে কচিৎ কদাচিত।

লিখেছেনঃ বীরেনদ্র

0 comments:

Post a Comment