Sunday, February 13, 2011

প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

0 comments
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০৪ সালে। আর চর্যাপদকেই বিবেচনা করা হয় বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে। ধারণা করা হয় হাজার বছর ধরে বৌদ্ধ সহজিয়াদের ব্যবহৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি, পর্তুগিজ, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার নানা উপাদান মিশে গেছে বাংলা ভাষার সঙ্গে। আর এতদিন বাংলা ভাষার সৌকর্য বিকাশে বাঙালিরা নির্ভর করত সংস্কৃত ব্যাকরণের ওপর। রবীন্দ্রনাথ, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মতো পণ্ডিতরা শত বছর আগে প্রমিত বাংলা ভাষার একটি ব্যাকরণ রচনার কথা বলেন। সম্প্রতি বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিয়েছে। একাডেমীর বর্তমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে সরকার ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার জন্য বাংলা একাডেমী দেশীয় স্কলারদের নিয়ে ৩টি কর্মশালা ও ১৫টি সভার আয়োজন করে। যার মাধ্যমে ব্যাকরণের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা, ব্যাকরণ প্রণয়নের নীতিমালা, কর্মপদ্ধতি, সম্ভাব্য লেখক তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। একপর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়। এ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ভাষাবিদ রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম, মাহবুবুল হক, দানীউল হক, জিনাত ইমতিয়াজ আলী, স্বরোচিষ সরকার, সৌরভ সিকদার ও পশ্চিমবঙ্গের পবিত্র সরকার, অনিমেষ কান্তি পাল, মীনা দা প্রমুখ। 'প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ' রচনার কর্মসূচি পরিচালক ড. আবদুল ওয়াহাব বলেন, বাংলা একাডেমীর বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করলে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা অপরিহার্য। সমগ্র বাংলা ভাষাভাষীর জন্য প্রয়োজন। আমরা পরিকল্পনা গ্রহণের পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিকে জানালেই তারা সানন্দে রাজি হয়। তখন যৌথভাবে বাংলা ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে আমরা ৩৫ জন স্কলারের লেখা পেয়েছি। লেখাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এখন নিবিড় সম্পাদনার কাজ চলছে। জানা গেছে, ৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রবন্ধগুলো নিবিড় সম্পাদন হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সম্পাদনার কাজ চলে।

দুই খণ্ডে প্রণীত 'প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ' ১২শ' পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামী ২৫শে বৈশাখ ঢাকার বাংলা একাডেমী ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে প্রথম খণ্ড এবং ১১ জ্যৈষ্ঠ দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হবে। মুদ্রণসংখ্যা হবে ৫ হাজার। প্রথম খণ্ডে স্থান পাবে ধ্বনিতত্ত্ব ও রূপতত্ত্ববিষয়ক প্রবন্ধ। দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পাবে বাংলা ভাষার বিভিন্ন দিক।

ড. আবদুল ওয়াহাব আরও জানান, ইতোপূর্বে প্রণীত বাংলা ব্যাকরণের সব ঋণ স্বীকার করে নিয়ে প্রণীত হবে এই ব্যাকরণ। এ গ্রন্থের মাধ্যমে ২০০ বছরের প্রমিত বাংলা ব্যাকরণের অভাব দূর হবে। অন্যদিকে আন্তঃবাংলা ভাষাভাষিরা ব্যাপক উপকৃত হবে। বাংলা ভাষার মর্যাদা আরও বেড়ে যাবে।

শেখ মেহেদী হাসান

0 comments:

Post a Comment