Tuesday, February 22, 2011

লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল

0 comments
শ্রীমঙ্গল শহরের কাছেই জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বাংলাদেশের অন্যতম একটি জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া। দুই-একদিনের সময় হাতে নিয়ে সহজেই বেড়িয়ে আসা যায় জাতীয় এ উদ্যান থেকে। কড়চার এবারের বেড়ানো শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।

লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশেই রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যানে রয়েছে_১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, বিশ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। প্রধান সড়ক ফেলে কিছুদূর চলার পরে ঢাকা-সিলেট রেল লাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হলো উলস্নুক, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদি। উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি ট্রেকিং পথ আছে। একটি তিন ঘণ্টার, একটি এক ঘণ্টার এবং অন্যটি আধ ঘণ্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পলস্নীও আছে।

আধ ঘণ্টার ট্রেকিং

এ পথটির শুরু রেললাইন পেরিয়ে হাতের বাঁ দিক থেকে। এ পথের শুরুতে উঁচু উঁচু গাছগুলোতে দেখা মিলতে পারে কুলু বানরের। নানা রকম গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে তৈরি করা এ হাঁটা পথটিতে চলতে চলতে জঙ্গলের নির্জনতায় শিহরিত হবেন যে কেউ। এ ছাড়া এ পথের বড় বড় গাছের ডালে দেখা মিলবে বুনো অর্কিড। যদিও এ সময়টা অর্কিডে ফুল ফোটার সময় নয়। নির্দেশিত পথে হাতের বাঁয়ে বাঁয়ে চলতে চলতে এই ট্রেইলটির শেষ হবে ঠিক শুরুর স্থানেই।

এক ঘণ্টার ট্রেকিং

এক ঘণ্টার ট্রেকিংয়ের শুরুতেই দেখবেন বিশাল গন্ধরুই গাছ। এ গাছের আরেক নাম কস্তুরী। এগাছ থেকে নাকি সুগন্ধি তৈরি হয়। এ ছাড়া এ পথে দেখবেন ঝাওয়া, জগডুমুর, মুলী বাঁশ, কাঠালি চাঁপা, লেহা প্রভৃতি গাছ। আরো আছে প্রায় শতবষর্ী চাপলিশ আর গামারি গাছ। এ ছাড়া এ পথে নানারকম ডুমুর গাছের ফল খেতে আসে উলস্নুক, বানর, হনুমান ছাড়াও এ বনের বাসিন্দা আরো অনেক বন্যপ্রাণী। ভাগ্য সহায় হলে সামনেও পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এ পথে দেখা মিলতে পারে মায়া হরিণ আর বন মোরগের।

রোমাঞ্চকর ট্রেকিং

তিন ঘণ্টার হাঁটা পথটিও বেশ রোমাঞ্চকর। এ পথের বাঁয়ে খাসিয়াদের বসত মাগুরছড়া পুঞ্জি। এ পুঞ্জির বাসিন্দারা মূলত পান চাষ করে থাকেন। ১৯৫০ সালের দিকে বনবিভাগ এ পুঞ্জি তৈরি করে। এ পথে দেখা মিলবে বিশাল বাঁশবাগান। এ বাগানে আছে কুলু বানর আর বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর। লজ্জাবতী বানর নিশাচর প্রাণী। এরা দিনের বেলায় বাঁশের ঝারে ঘুমিয়ে কাটায়। এ ছাড়া এ পথে দেখা মিলবে নানান প্রজাতির পাখির, আর পথের শেষের দিকে দেখা মিলতে পারে এ বনের অন্যতম আকর্ষণ উলস্নুক পরিবারের। এরা বনের সবচেয়ে উঁচু গাছগুলোতে দলবদ্ধভাবে বাস করে।

কিছু তথ্য

জঙ্গল ভ্রমণে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। বেশি উজ্জ্বল রঙের পোশাক না পরে অনুজ্জল পোশাক পরতে হবে। ইনসেক্ট রিপল্যান্ট ব্যবহার করা উচিত। বনে হৈচৈ করলে বন্যপ্রাণীদের দেখা যাবে না। তাই সর্বোচ্চ নিরবতা পালন করতে হবে। বনের মধ্যে কোনোরকম ময়লা-অবর্জনা ফেলা যাবে না। ট্রেকিংয়ের সময় সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার পানি নিন। আইপ্যাকের প্রশিক্ষিত গাইড সঙ্গে নিয়ে ট্রেকিংয়ে যাওয়া উচিত। নয়তো পথ হারানোর ভয় আছে।

খরচপাতি

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্ক ২০ টাকা, ছাত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১০ টাকা, বিদেশি নাগরিকদের জন্য ৫ মার্কিন ডলার কিংবা সমমূল্যের টাকা। এ ছাড়া কার, জিপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং ২৫ টাকা, সিনেমা ও নাটকের শুটিং প্রতিদিন ৬,০০০ টাকা, পিকনিক স্পট ব্যবহার জনপ্রতি ১০ টাকা।

শ্রীমঙ্গল কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক ও বেলপথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস শ্রীমঙ্গল যায়। ভাড়া ২৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫২৬ টাকা, এসি সিট ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩০০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২০০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৩৪৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৩৫ টাকা, শোভন ১১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৭০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৫০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিজর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)। শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ সড়কে আরেকটি ভালো আবাসন ব্যবস্থা হলো রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০২-৯৫৫৩৫৭০, ০১৯৩৮৩০৫৭০৭)। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য হোটেল হলো হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫), কলেজ রোডে হোটেল পস্নাজা (০৮৬২৬-৭১৫২৫) ইত্যাদি। এসব হোটেল- রিসোর্টে ৫০০-৩ হাজার টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।

লেখা: মুস্তাফিজ মামুন
ছবি: সৌম্য
ভিডিও: রেজওয়ান

0 comments:

Post a Comment