Sunday, February 13, 2011

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি

47 comments
দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে বিশ্বকবির পদ্মা বিধৌত কুঠিবাড়ির আঙিনা।
জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু হাজারো মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষা সফর অথবা বনভোজনের উদ্দেশ্যে কবিগুরুর এই কুঠিবাড়ি বেছে নেওয়ায় বছরের এ সময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৪শ' দর্শনার্থীর আগমন ঘটে কুঠিবাড়িতে। দিনদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। এসময় শুক্র ও শনিবার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে কুঠিবাড়িতে। রবিবার পূর্ণ এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে কুঠিবাড়ি।

কুঠিবাড়িকে ঘিরে এলাকার অনেক বেকার যুবক ও দরিদ্র পরিবার তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। দর্শনার্থীদের চাহিদা মেটাতে কুঠিবাড়ির প্রবেশদ্বার সংলগ্ন রাস্তার পাশে তারা গড়ে তুলেছে বই, খেলনা, বাদ্যযন্ত্র, শো-পিস, খাদ্যসামগ্রীসহ বাহারি পণ্যের প্রায় অর্ধশত দোকান। বছরের এ সময় দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসায় দোকানেও ভালো বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের আলাউদ্দিন নগর বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা বিধৌত গ্রাম শিলাইদহ। ১৮০৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকনাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি ক্রয় করেন। সে সময় পরিবারের নির্দেশে সর্বপ্রথম ২৭ বছর বয়সে কবিগুরু শিলাইদহে আসেন। কবির জীবনের দীর্ঘ ১০ বছর একটানা শিলাইদহে কাটিয়েছেন বলে জানা যায়। কুঠিবাড়ির চারদিকের দেয়ালে পদ্মার ঢেউ এবং কার্নিসের সুনিপুণ কারুকাজ আজও নদী ও প্রকৃতির প্রতি বিশ্বকবির অগাধ ভালোবাসা ও দুর্বলতার সাক্ষর বহন করছে। প্রকৃতির প্রেমে পড়ে তিনি বিভিন্ন গাছে ভরে তোলেন কুঠিবাড়ির আঙিনা।

৩৩ বিঘা জমি নিয়ে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির তিন তলাবিশিষ্ট এ বাড়িতে রয়েছে ১৭টি কক্ষ। কক্ষ ও বারান্দাজুড়ে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে কবির ব্যবহৃত একটি পালঙ্ক, লেখার টেবিল, ইজি চেয়ার, নদীতে চলাচলের দুটি বোট চঞ্চল ও চপলা, পালকি, ঘাসকাটা যন্ত্র, পানিশোধন যন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে কবিকে ঘিরে তোলা আলোকচিত্র, কবিগুরুর নিজ হাতে আঁকা ছবি ইত্যাদি।

তবে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে আগের সেই নৈসর্গিক পরিবেশ আর নেই। নেই পুকুরপাড়ের সেই বকুল গাছ। যেখানে কবিগুরু নিয়মিত বসতেন। এখানে বসেই তিনি অজস্র কবিতা ও গান লিখেছেন। রবিঠাকুরের ব্যবহৃত দুটি পালঙ্কের একটি চুরি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকেই কবিগুরুর শিলাইদহের কুঠিবাড়িটি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কুঠিবাড়ির আঙিনায় আধুনিকতার ছাপ দেওয়া হয়েছে।



ফারুক আহমেদ
, কুষ্টিয়া

47 comments:

Post a Comment