Friday, December 11, 2009

জব্দ করা শব্দ যত

0 comments
আছে, কিছু শব্দ আছে বড় জব্দ করে ছাড়ে আমাদের। এগুলোকে বাগে রাখার জন্য মনোযোগের ভাণ্ডে একটু বাড়তি কিছু ঢালতে হয়। কেউ কেউ নিজের মতো করে এক ধরনের সূত্রও বের করে নেন।
যেমন, ‘দাঁড়ানো’ লিখতে চন্দ্রবিন্দু লাগে, ‘দৌড়াতে’ লাগে না কেন! একজন আরেকজনকে বুঝিয়ে দিলেন—ব্যাপারটা খুব সহজ, মানুষ যখন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে দৌড়াতে শুরু করে, চন্দ্রবিন্দুটা মাথা থেকে পড়ে যায়। সোজা হিসাব!
এ রকম কঠিন কঠিন ‘সোজা হিসাব’ আয়ত্ত আছে। সব ‘ঊন’ লিখতে ‘ঊ’, যেমন ঊনত্রিশ, ঊনচল্লিশ, ঊনপঞ্চাশ, ঊননব্বই ইত্যাদি, কিন্তু ‘উনিশ’ লিখতে ‘ঊ’ লাগে না কেন! উদ্ভট হলেও মনে রাখার যুক্তি হচ্ছে—উনিশ তো উনিশ, সেটি যদি ‘ঊনবিশ’ হতো, তাহলে তারও একটি ‘ঊ’ না হলে চলত না।
এই ‘উ’ আর ‘ঊ’ যখন ‘দ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন আমরা এক ভজকট অবস্থায় পড়ে যাচ্ছি। আমরা কেউ কেউ কিছু শব্দের সঙ্গে ঊ ( ূ) না জুড়লে যেন শান্তিই পাচ্ছি না। তাই লিখে ফেলছি ‘দূঃখ’, ‘দূর্যোগ’, ‘দূর্বার’ ইত্যাদি; অথবা ‘দূরবীণ’, ‘দূরদর্শন’ ইত্যাদি।
এমন যখন করছি, ‘যাচ্ছি চলে ধর তো দেখি’ বলতে বলতে গলদ দুই জায়গায়ই ঢুকে যাচ্ছে। ঢুকবে না, যদি খুব সোজা একটা ফর্মুলা মনে রাখি। যত কিছু মন্দ, যত কিছু কঠিন, যত কিছু নিন্দার এবং যত কিছু ‘না’ বোঝানোর, সবগুলোতে আমি চোখ বুজে ‘দু’ দেব; আর যত কিছু দূরবর্তী, তার সবকিছুতেই ‘দূ’ লাগাব। ভুল হবে না। যেমন—দুঃখ, দুর্বল, দুর্বার, দুঃশীল, দুর্দান্ত, দুর্মর, দুর্গম, দুর্দম, দুর্দমনীয়, দুরাঙ্ক্ষা, দুশ্চেষ্টা, দুর্নিবার, দুর্যোগ, দুর্গতি, দুর্গতিনাশিনী (দুর্গা), দুর্জয়, দুরতিক্রম্য, দুরধিগম্য, দুর্বিনীত ইত্যাদি; আবার দূরবর্তী, দূরদেশ, দূরালাপন, দূরদর্শন, দূরবার্তা, দূরবীক্ষণ, দূরবীণ ইত্যাদি।
এমন এক সূত্র আরও একটি শব্দজোড়ে খাটানো যায়—‘কি’ ও ‘কী’। মনে আমরা অনেকেই করি, হলেই হলো একটা; অত খুঁতখুঁতুনির দরকার নেই।
কিন্তু, আছে। দরকার আছে; এবং একটা কিছু হলেই কিন্তু হলো না। কারণ, দুটির দুই অর্থ।
সোজা করে যদি বোঝার চেষ্টা করি, এভাবে বুঝতে পারি। একটি সরাসরি জিজ্ঞাসা অথবা সোজাসুজি জিজ্ঞাসা; অন্যটি বিশেষ রকম জিজ্ঞাসা।
‘কি’ হচ্ছে শুধু জিজ্ঞাসা; কেউ কিছু করছে কি না, কেউ কিছু খাচ্ছে কি না, কেউ কোথাও যাচ্ছে কি না—এমন সব জিজ্ঞাসা। এসব জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার জন্য খুব বেশি শব্দ খরচ করতে হয় না। শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’; তাতেই জবাব শেষ।
যেমন, তুমি কি স্কুলে যাবে? জবাব, হ্যাঁ বা না-ই যথেষ্ট হবে। আমি স্কুলে যাব অথবা যাব না। কিন্তু, আমি যদি কারও স্কুলের নামটি জানতে চাই, তখন তাকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বললে হবে না। তখন তাকে স্কুলের পুরো নামটি বলতে হবে। প্রশ্ন করার সময় তখন ‘কি’-কে সরিয়ে ‘কী’ বসাতে হবে। ‘তোমার স্কুলের নাম কী?’
যদি সে বলে—অমুক স্কুল, তমুক স্কুল বা সমুক স্কুল—কোনো অসুবিধা নেই, সে একটা স্কুলের নাম বলল। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ যদি সে বলে—তার আসলে কিছুই বলা হবে না। কোনো স্কুলের নাম তো ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ হতে পারে না!
স্কুল থেকে এবার অন্য বিষয়ে আসা যাক। মিষ্টি। যেমন, যদি বলি—তুমি কি মিষ্টি খাবে(?), আমি জানতে চাইছি—কেউ মিষ্টি খাবে কি খাবে না। জবাব হ্যাঁ বা না। আমি মিষ্টি খাব অথবা খাব না। প্রশ্নটি যদি এমন হয়—তুমি কী মিষ্টি খাবে? তখন একটি মিষ্টির নাম বলতে হবে (যেমন সন্দেশ, রসগোল্লা, জিলাপি ইত্যাদি) অথবা বলতে হবে—আমি যা খাব তা এখানে নেই। শুধু হ্যাঁ বা না দিয়ে কাজ হবে না।
কথা হচ্ছে—শব্দ নিয়ে বিপদে না পড়ে আমাদের ঠিক করে নিতে হবে—আমরা কি শিখব অথবা আমরা কী শিখব।

0 comments:

Post a Comment