সিনেমা বিষয়ে স্ট্যানলি কুবরিক এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। হাই স্কুল শিক্ষা যখন শেষ করেন তখন আমেরিকায় মন্দা চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেই দেশে নিয়ম করা হয়েছিল, ৬৭% এর উপর নম্বর না থাকলে কেউ কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। তাই হাই স্কুলের পর আর কুবরিকের পড়াশোনা করা হয় নি। পরবর্তীতে মন্তব্য করেছিলেন যে, স্কুল তাকে কিছুই শেখাতে পারে নি, এমনকি স্কুলের কোনকিছুতে তিনি কোনদিন উৎসাহও পান নি। ছোটবেলা থেকে শখ ছিল ছবি তোলা, ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়ানোটা তার জন্য একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেয়ে তাই বেরিয়ে পড়েন ক্যামেরা হাতে। শুরু হয় কুবরিকের ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি জীবন। সমাজ-বাস্তবতার শৈল্পিক রূপায়ন তার এই জীবনকে বেশ সার্থক করে তোলে, অচিরেই সেকালের বিখ্যাত ‘লুক’ ম্যাগাজিনের নজরে পড়ে যান। লুক এর জন্য তিনি পরবর্তীতে প্রায় ৫-৬ হাজার ছবি তুলেছিলেন। এই ফটোগ্রাফি জীবনই তাকে সিনেমা বানাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। লুক এর পর তার পৃষ্ঠপোষক হয়েছে হলিউডের স্টুডিওগুলো। কিন্তু কুবরিক পুরো সময় জুড়ে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন, অনেকে তাকে পৃথিবীর প্রথম স্বাধীন চলচ্চিত্রকার হিসেবে আখ্যায়িত করে। তার সিনেমায় স্টুডিওর বলার কিছু ছিল না, অর্থ যোগান দেয়া ছাড়া তাদের আর কোন কাজ ছিল না।
এ কারণেই কুবরিকের সিনেমায় সমাজ-সচেতনতা এবং সভ্যতার অবক্ষয় মূর্ত হয়ে উঠেছে। আধুনিক জনপ্রিয় শিল্প এবং সংস্কৃতিকে তিনি মেনে নিতে পারেন নি, এগুলোকে অবক্ষয়ের চিহ্ন হিসেবে দেখেছেন। সিনেমার মাধ্যমে এর মর্মমূলে আঘাত করতে চেয়েছেন। বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকরা সাধারণত মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন, কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম কুবরিক, যিনি মনোবিজ্ঞানের বদলে বেছে নিয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞান। কোন সিনেমার থিম মাথায় আসার পর কুবরিক গবেষণায় লেগে যেতেন। সিনেমা বানাতে প্রায় ৪-৫ বছর লাগতো, গবেষণার জন্যই বরাদ্দ থাকতো একটা বড় সময়। তার সিনেমার প্রায় প্রতিটি চরিত্রই সমাজের একটা বৃহৎ অংশের প্রতিনিধিত্ব করতো। কিন্তু চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি এক্সপ্রেশনিস্ট ধারা মেনে চলতেন। অর্থাৎ, সমাজে চরিত্রগুলো যেভাবে আছে সেভাবে ফুটিয়ে না তুলে, সেগুলোর একটি কাল্পনিক সংস্করণ সৃষ্টি করতেন, নিজের মনের মত করে। আর এই সৃষ্টির উদ্দেশ্য থাকতো চরিত্রগুলোকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করা। যাতে তাদেরকে দেখে করূণা হয়, উপহাস করতে ইচ্ছে হয়, ভলতেয়ার এর মত ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসতে মন চায়।
কুবরিকের তেমনি একটি চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য এই লেখা শুরু করেছি। চরিত্রটির নাম “ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ”। সিনেমার নামও এই চরিত্রের নামে। তবে সিনেমাটির একটা বড় নাম আছে: “Dr. Strangelove: or How I Learned to Stop Worrying and Love the Bomb”।
(ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ)
যার নামে সিনেমার নাম তাকে কিন্তু মাত্র বিশ মিনিটের জন্য দেখা যায়, শেষের ২০ মিনিট। সিনেমাটা দেখার পর তাই অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখা যায়, এই চরিত্রের এতো তাৎপর্য কেন? তার নামেই কেন সিনেমার নাম রাখা হল? তার চরিত্রকে এভাবে সাজানোর অর্থই বা কি?
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর একটু রহস্য করে দেয়া যায়। সিনেমার পুরো নামের মধ্যেই উত্তরটি দেয়া আছে। or how I learned to stop worrying and love the bomb. এখানে “I” মানেই ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ। তিনিই এক মহান উপায় বের করেছেন, যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবী বোমার তোড়ে ধ্বংস হয়ে গেলেও অসুবিধা নেই, নো টেনশন। কাহিনীটা এমন: আমেরিকা-রাশিয়া স্নায়ুযুদ্ধের ডামাডোলে পুরো পৃথিবী ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। পতিত হয় বললে ভুল হবে, বলা যায় একটু পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু মার্কিন ও রুশ নেতারা এখনও দুই দেশের আধিপত্যের প্রতিযোগিতা নিয়ে ব্যস্ত। মারা যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তেও কি কোনভাবে প্রমাণ করে যাওয়া যায় না যে, আমরাই বস আর তোমরা গান্ধা। উপায় বাতলে দেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ, তার কথার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি, এই মহাবিলয়ের যুগেও তিনি কিভাবে এতো শান্তিতে আছেন, যদিও তার কালো গ্লাভস পরা হাত দুটো তাকে পুরো শান্তি দিচ্ছে না। বোমা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে তিনি উল্টো তাকে ভালোবেসেই ফেলেছেন। কেন? তার পরিকল্পনা হল, কোবাল্ট-থোরিয়াম জি এর অর্ধায়ু ৯৩ বছর। তার মানে ৯৩ বছরের মত পুরো পৃথিবী ঘন ধূলি ও আবর্জনার কুয়াশায় ঢেকে যাবে, পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন মানুষ বাস করতে পারবে না, সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু আমেরিকার গভীর গভীর খনিগুলো কাজে লাগালেই আর চিন্তা নেই। গভীর খনিগুলোর তলদেশে হাজার খানেক মানুষের বাসস্থান করা যাবে অনায়াসে। তবে তার মতে, এই মাইন শ্যাফ্টগুলোতে ছেলে:মেয়ে অনুপাত হতে হবে ১:১০। ছেলেদের নির্বাচন করা হবে যোগ্যতা ও আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে, আর মেয়েদের নির্বাচন করা হবে যৌন উর্বরতার উপর ভিত্তি করে। এসব নির্বাচনের ভার নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেয়া হবে কম্পিউটারের হাতে। বাস আর কে পায়! ১০০ বছর পর পৃথিবীর বুকে উঠে এসে এক ঝাপ্টায়ই পুরো পৃথিবীতে আবার রাজত্ব বিস্তার করে ফেলতে আমেরিকা। মাস্টার প্ল্যান, হা হা হা… আর এই ১:১০ অনুপাতই কিন্তু বোমাকে ভালোবাসার মূল কারণ। বোমার তোড়ে পুরো পৃথিবী ভেসে না গেলে কি আর স্ট্রেঞ্জলাভের যৌনলিপ্সা-র কোন হিস্যা হতো? ও বেচারা বোমাকে ভালোবাসবে না কেন বলুন?
এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা না যে, এই ব্ল্যাক কমেডির প্রতিটি চরিত্রই পাগল কিছিমের। কুবরিক দেখিয়েছেন, আমরা কিভাবে আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এসব পাগলের হাতে সঁপে দিয়ে বসে আছি। ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ হল পাগলা বিজ্ঞানী। এমন পাগলের উদাহরণ কিন্তু পৃথিবীতে বিরল নয়? অসংখ্য বিজ্ঞানীর একাগ্রতা এবং অক্লান্ত পরীশ্রম না থাকলে পারমাণবিক বোমা বানানো কি সম্ভব হতো? হয়তো বা বলতে পারেন, ম্যানহাটন প্রজেক্ট এ যে ৫৫,০০০ মানুষ কাজ করতো তাদের কেউই এতো ডিটেল জানতো না। কিন্তু মূল পরিকল্পনা ও ইনস্টলেশনের দায়িত্বে যে বিজ্ঞানীরা ছিলেন তাদের দায় কে নেবে? পাগলা সেনানায়ক, পাগলা রাষ্ট্রপ্রধান আর পাগলা বিজ্ঞানীর সুমহান সম্মিলন না ঘটলে কি দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় বলুন? আমেরিকা তো এইসব পাগলের সফল সম্মিলনের বিস্ময়কর রূপায়ন। কুবরিক কিন্তু তার ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ কে তৎকালীন আমেরিকার এমন পাগলা বিজ্ঞানীদের আদলেই তৈরি করেছেন। চরিত্রের একটু খুটিনাটি বিশ্লেষণ করলেই সেটা বেরিয়ে আসবে। আসুন শুরু করি:
নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির আদলে কি ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ চরিত্র সাজানো হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সমালোচকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়েছেন। উঠে এসেছে সন্দেহভাজন চার জনের নাম যাদের মধ্যে এই পাগলা বিজ্ঞান, অমানবিকতা ও জাতীয় অহংবোধের প্রাবল্য ছিল:
- হেনরি কিসিঞ্জার (প্রাক্তন হার্ভার্ড অধ্যাপক, নিক্সন ও ফোর্ড সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)
- ভের্নার ফন ব্রাউন (প্রাক্তন নাৎসি রকেট বিজ্ঞানী যে যুদ্ধের পর মার্কিন সরকারের হয়ে কাজ শুরু করে)
- এডওয়ার্ড টেলার (হাঙ্গেরীয় পদার্থবিজ্ঞানী যে আমেরিকার প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ করেছিল)
- হারমান কান (র্যান্ড কর্পোরেশনের নিউক্লীয় যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ও মিলিটারি স্ট্র্যাটেজিস্ট)
হেনরি কিসিঞ্জারের পক্ষে যুক্তিগুলো হল: সে জন্মসূত্রে জার্মান, তার অ্যাকসেন্ট স্ট্রেঞ্জলাভ এর খুব কাছাকাছি। তাছাড়া প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচেন্স কিসিঞ্জারের ক্যারিয়ারকে pathology of a serial killer এর সাথে তুলনা করেছেন যা স্ট্রেঞ্জলাভের পাগলা সহিংসতার সাথে মিলে যায়। কুবরিক এ নিয়ে যেহেতু অনেক গবেষণা করেছেন সুতরাং তিনি নিশ্চয়ই বিখ্যাত কাউকেই স্ট্রেঞ্জলাভ বানাতে চাইবেন, সেদিক দিয়ে কিসিঞ্জার কে সন্দেহ করা যায়। কিন্তু কথা হলো, কিসিঞ্জার তখনও (১৯৬৪) এতোটা বিখ্যাত হয়ে উঠেনি যে তাকে নিয়ে প্যারডি বানানো যায়। তাই কিসিঞ্জার-স্ট্রেঞ্জলাভ মেলবন্ধনের নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।
ভের্নার ফন ব্রাউনের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে: সে জার্মান, শুধু প্রাক্তন নাৎসি নয়, যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত সে নাৎসিদের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল এবং সে অনেক বিখ্যাতও ছিল। ফন ব্রাউন সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় মানবতা ধ্বংসের প্রচণ্ড রকমের ইনোভেটিভ সব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিতো। তার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার কাছে নৈতিকতার কোন মূল্যই ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ফন ব্রাউন নিউক্লীয় বিজ্ঞানী ছিল না, তার তত্ত্বগুলোর সাথে নিউক্লীয় যুদ্ধের কোন সম্পর্কও ছিল না। তাই শক্তিমান আমেরিকার এই সুমহান চামচাকেও খুব একটা প্রশ্রয় দেয়া যায় না।
এডওয়ার্ড টেলার এর পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে ম্যানহাটন প্রজেক্ট এবং ওপেনহাইমার অ্যাফেয়ার এর সাথে সক্রিয় সংযুক্তি। সে আজীবন হাইড্রোজেন বোমা তৈরি এবং এর মাধ্যমে মানুষ মারার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে গেছে। সে অনেকদিন লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি-র এর প্রধান ছিল। ম্যানহাটন এর প্রধান বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমার পারমাণবিক আঘাতের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ায় এই টেলারই রাজনীতিবিদদের বুঝিয়েছিলেন যে, ওপেনহাইমার পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য এক বিরাট ঝুঁকি। সে-ই রোনাল্ড রেগান কে বলেছিল যে, স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ ভাল ফল দেবে। বিখ্যাত মার্কিন ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ম্যানচেস্টার বলেছিলেন, টেলারকেই ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভের সবচেয়ে নিখুঁত জান্তব মডেল ধরে নেয়া যায়। টেলার এর অ্যাকসেন্ট ইংরেজ না, সেদিক দিয়েও তাকে স্ট্রেঞ্জলাভের সাথে তুলনা করা যায়।
কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচক ব্রায়ান সায়ানো-র মতে, ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে হারমান কান। কান ছিল বহুল আলোচিত র্যান্ড করপোরেশন এর প্রথম দিককার কর্মকর্তা। এই করপোরেশন প্রতিষ্ঠাই করা হয়েছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীকে কৌশলগত পরামর্শ দেয়ার জন্য। সিনেমাতেও দেখা যায়, ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ ব্ল্যান্ড করপোরেশন নামের এক প্রতিষ্ঠানের সাথে পুরো পৃথিবী ধ্বংসের কলা-কৌশল উদ্ভাবনের কাজ করে। হেরমান কান সামরিক কুশলবীদদের সবচেয়ে নিখুঁত আইকন এর স্রষ্টা: সিনিয়র আর্মি অফিসারদের মত নির্বিকার, যেখানে যেই মারা যাক কোন বিকার নেই, সবার যে প্রশ্ন করতে আত্মা কাঁপে নির্দ্বিধায় সেই প্রশ্ন উত্থাপনের মানসিকতা, সাধারণ মানুষ যা কল্পনাও করতে পারে না সেটা বাস্তবায়নের চিন্তা করা। যুদ্ধে মানুষের মারা যাওয়াটা যেন খুব সিরিয়াস কিছু মনে না হয় এজন্য কান মৃতের সংখ্যার আগে “only” শব্দ যোগ করার প্রচলন করেছিল। ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভে এই শব্দের ছড়াছড়ি দেখা যায়: only 10 million deaths, tops, no more… কত কম দেখেন? ২০ মিলিয়নও তো মারা যেতে পারতো, আমরা তো নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি যাতে ২০ এর বদলে মাত্র ১০ মিলিয়ন মারা যায়…
তাছাড়া ইদানিং এত গণহারে মানুষ মারা যাচ্ছে যে মিলিয়ন টিলিয়ন বলে দাঁত ব্যথা হয়ে যায়। এজন্যই হারমান কান “মেগাডেথ” (Megadeath) নামে একটি এককের প্রচলন করেছিল যার অর্থ যথারীতি ১ মিলিয়ন মৃত্যু। মার্কিন উত্তরাধুনিক রাজনীতি-বিদ্রোহী মেটাল ব্যান্ড “মেগাডেথ” (Megadeth) এই একক থেকেই তাদের নাম নিয়েছিল। তবে নামটা নিতে গিয়ে তারা ইচ্ছা করে বানান ভুল করেছে, death কে লিখেছে deth, বিদ্রোহের চিহ্ন হিসেবে।
হেরমান কান এর একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম “On Thermonuclear War” (১৯৬০), সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান এই বইয়ের রিভিউ করতে গিয়ে বলেছে, “a moral tract on mass murder; how to plan it, how to commit it, how to get away with it, how to justify it.” আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে সিনেমায় স্ট্রেঞ্জলাভ যে মাইন শ্যাফ্ট এবং ১:১০ অনুপাতের কথা বলে কান এর ও এই ধরণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল। কুবরিক এসব আকাশ থেকে আনেন নি। এসব প্ল্যান দিয়েই কান মহান ফিউচারিস্ট খ্যাতি পেয়েছিল। তবে কান কে নিয়ে ঘাপলা আছে। কান এর কোন জার্মান সংশ্রব নেই, সে একেবারে বিশুদ্ধ আমেরিকান। তাকে একবার ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ নিয়ে প্রশ্নও করা হয়েছিল। তার উত্তর ছিল: “Dr. Strangelove would not have lasted three weeks at the Pentagon… he was too creative.”
এটুকু ব্যাখ্যার পর ক্রিটিক ব্রায়ান সায়ানো যা বলেছেন তার সাথেও আমি একমত। কুবরিক হয়ত হেরমান কান এর চরিত্র থেকেই সবচেয়ে বেশী উপাদান নিয়েছিলেন। কিন্তু ডিটেল এর দিকে যার এত নজর তিনি নিশ্চয়ই অন্যান্য চরিত্রের কিছু উপাদান মেশানোর সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কুবরিক ঠিক এ কাজটাই করেছেন। উপর্যুক্ত চারটি চরিত্র থেকেই কিছু উপাদান নিয়েছেন। এই পাঁচমিশালীর মাধ্যমে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভয়ানক চরিত্রটি উপস্থাপন করেছেন। তার সাথে যোগ করেছেন কিছু অতিপ্রাকৃত ও স্পিরিচুয়াল বৈশিষ্ট্য। পাগলা বিজ্ঞানীদের এ ধরণের সুযোগসন্ধানী পাগলা গবেষণা যে ঈশ্বরের স্থান দখল করতে পারে সেটা ফুটিয়ে তোলার জন্য স্ট্রেঞ্জলাভ চরিত্রে আরও হাজার টা গুণাগুণ মেশানো হয়েছে। সে নাৎসিদের হয়ে কাজ করতো। তার মূল নাম Merkwürdigliebe যার ইংরেজি অর্থ strange-love, হিটলার এর পর মার্কিন সরকারের পোষা বিজ্ঞানীতে পরিণত হওয়ার পর সে নাম পরিবর্তন করে রেখেছে স্ট্রেঞ্জ লাভ। সত্যিই বড় অদ্ভুত এই ভালোবাসা, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতি কি ভালোবাসা দেখেন, নারীর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে কোন অংশেই কম না।
প্রথম সফল কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র বোধহয় ফ্রিৎস লাং এর মেট্রোপলিস (১৯২৭)। এই সিনেমাতেও এক পাগলা বিজ্ঞানীর চরিত্র ছিল। C. A. Rotwang নামক এই চরিত্রের এক হাত ছিল কাটা, কাটা অংশে মেকানিক্যাল হাত লাগানো হয়েছিল। ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ এর এক হাতে একটি কালো গ্লোভস আছে যা তার কথা শুনে না। এই অবাধ্য হাত যেন আরেকটি পৃথক সত্ত্বা যে তার পাগলা চিন্তায় বারবার বাঁধার সৃষ্টি করছে। এর মাধ্যমে যেন কুবরিক বোঝাতে চাইছেন, নিজের সাথে যুদ্ধ করে হলেও সে মানবতা ধ্বংসের কাজ করে যাবে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে অবাধ্য অংশের রং ও কালো। বোঝাই যায়, এর মাঝে মেট্রোপলিস এর অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ও কিন্তু এমন একটা পাগলা বিজ্ঞানীর চরিত্র তৈরি করেছিলেন, “হীরক রাজার দেশে” সিনেমায়, তবে আরও দুই দশক পরে। এই সিনেমাতেও পাগলা বিজ্ঞানীর যন্তর-মন্তর ঘর দেখেছি, বুঝেছি এমন বিজ্ঞানীরা অন্ধ গবেষণার তোড়ে উন্মাদ হয়ে গেছে, যে তাকে উদ্ভাবনের সুযোগ করে দেবে সে তার হয়েই কাজ করবে। যথারীতি শক্তিমান সমাজ এমন বিজ্ঞানীকে পুষবে, যত টাকাই লাগুক…
সিনেমার শেষ কথাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ পঙ্গু, হুইল চেয়ারে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সিনেমার শেষে হঠাৎ আবিষ্কার করে যে সে হাঁটতে পারছে। হুইলচেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে সে চিৎকার করে বলে, “Mein Führer! I can walk!” তার এই চিৎকারের পরই পৃথিবী ধ্বংসের খেলা শুরু হয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে। এই অনবদ্য ধ্বংস দৃশ্যের সাথে অনেকে গ্রুপ সেক্স এর মিল খুঁজে পেয়েছেন। স্ট্রেঞ্জলাভ পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দিয়েছে, কারণ এছাড়া তার পক্ষে শত শত রমণীর সাথে চিরন্তন রমণে রত হওয়া সম্ভব না। পৃথিবী ধ্বংসের এই মন্টাজ যেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভের অর্জি-রই রূপায়ন। ১:১০ পৃথিবীতে শিশ্ন-চর্চায় রত এক সুমহান বিজ্ঞানী যে নিজের স্বাভাবিক জীবন উৎসর্গ করেছিল পুরো পৃথিবী ধ্বংসের তাগিদে।
তথ্যসূত্র
- A Commentary on Dr. Strangelove by Brian Siano
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2009
(230)
-
▼
December
(79)
- অন্যের গর্ভে নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান
- মাঝের আঙুলটি লম্বা কেন
- শকুন্তলা
- ঢাক
- কোকাকোলা, পেপসি, নোভা,
- বিদ্যুৎ ব্যবহারের শুরু যেভাবে
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘোড়া
- অর্জুন
- বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু
- ইকারোস
- গরুড়
- ক্রিসমাস ট্রির কথা
- সুমন্ত্র
- চিত্রসেন
- হুলহুলিয়া : যেন রূপকথার এক গ্রাম
- আনুশেহ্ আনাদিল
- নারীর জরায়ুর ক্যান্সার, প্রয়োজন সচেতনতা
- চলে গেলেন ব্রিটানি মরফি
- শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন
- মাইকেল মুর
- CV আর Resume এর মধ্যে তফাত কি?
- ব্রিটেনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রিকশা
- দিনভর ঘুরেও স্বাধীনতা পদক বিক্রি করতে পারলেন না মো...
- বনসাই
- দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা ‘বড় মসজিদ’
- লালবক
- লাল মুনিয়া
- এসকর্ট
- Living to tell the Tale
- ১০০ টি দরকারী উইন্ডোজ শটর্কাট
- ফেসবুকে বাংলা অক্ষর ছোট দেখার সমস্যা দূর করে নিন স...
- Nameless folder
- পুরনো পাসওয়ার্ড না জেনেই নিমেষের মধ্যে পাসওয়ার্ড প...
- যদি Task Manager, Folder option, Registry edit ইত্...
- কয়েক মিনিটে উইন্ডোজ ইনষ্টল করুন
- টরেন্ট দিয়ে কিভাবে ডাওনলোড করা হয়
- বাংলা ফন্টস প্যাক
- Format Factory 2.1
- VOB to AVI Convert
- DU Meter 3.50 Full
- Any Weblock
- XP Codec Pack 2.4
- Uninstaller 2008 v6.2
- কিবোর্ড Remapper
- ৩০০ টাকার জন্য প্রাণ দিতে হলো মুক্তিযোদ্ধাকে
- একবিংশ শতকের ডারউইন
- সর্বকালের সেরা ১০০ চলচ্চিত্রকার
- মাদার তেরেসা
- জঁ ভিগো
- স্ট্যানলি কুবরিক
- ওয়ার্ডে ইকুয়েশন লিখবো কিভাবে
- ফিদেল কাস্ত্রো
- জব্দ করা শব্দ যত
- যুবকশূন্য সেই গাঁয়ের কথা
- বুঝতে হবে ফিগার অব স্পিচ (Rhetoric)
- গায়েবি মসজিদ
- বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন এখন চীনে
- বাংলাদেশকে রুখতে চীন-মার্কিন আঁতাত
- দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই থাইল্যান্ডের মরণ রেলপথ
- ১৯৭১ ঝটিকা আক্রমণ
- মোস্তফা জামান আব্বাসী
- পানি পানের পরিমান
- জীবনানন্দ দাশ - হাসান হাফিজ
- ভিয়েতনামে ভ্রমণ: সম্রাটের সমাধি - মঈনুস সুলতান
- কলম্বাস
- সাগরতলের মৎসকন্যা - রুবিনা মোস্তফা
- মেরিলিন মনরো
- বাংলাদেশে হেমন্তের উত্সব
- জাপানের সম্রাট আকিহিতো ও সম্রাজ্ঞী মিচিকো
- রেমা-কালেঙ্গায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে-বনের খাদ্...
- হিজড়া সম্বন্ধে জানুন আরো কিছু
- মুনতাজের আল জায়েদি
- যেভাবে শুরু হলো যুদ্ধ
- মহাভারতের বাস্তবানুগ পাঠ
- আজম খান এর সাক্ষাতকার
- শিল্পা শেঠির বিয়ে
- ধুপিনিবক
- বাংলাদেশে এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে
- সৌদি আরবে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩
-
▼
December
(79)
Saturday, December 12, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment