আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে শয়তানের ত্রিভুজ বলা হয়। এটিকে পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান বলে মানা হয়। কারণ এ পর্যন্ত এখানে যত রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, অন্য কোথাও এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা এ অঞ্চলটির নামকরণ করে শয়তান বা পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।
জাদুকর পিসি সরকারের জাদুর কারিশমায় অনেক কিছু ভ্যানিশ হওয়ার গল্প আমাদের জানা। কিন্তু এই ম্যাজিকে ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া জিনিস হুবুহু রয়েই যায়। মাঝে কেবল আমাদের বুদ্ধি আর ইন্দে য়গুলোকে বোকা বানানো হয়। কিন্তু কুখ্যাত শয়তানের দ্বীপ কিংবা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে কেন্দ্র করে প্রচলিত গল্প কিংবা ঘটনাগুলোর রহস্য আজো উন্মোচিত হয়নি।
'এলেন অস্টিন' জাহাজটির কথাই ধরা যাক। এ জাহাজের মাঝি-মাল্লারা যেভাবে হারিয়ে গিয়েছিলেন তার হদিস আজো কেউ করতে পারেনি। ফিরে পাওয়া যায়নি তাদের। মধ্য আটলান্টিকে পাড়ি দেওয়ার সময় এলেন অস্টিন জাহাজের নাবিকরা একটু দূরে একটি খালি জাহাজ ভাসতে দেখে ভীষণ অবাক হন। ঠিক করলেন, নিজের জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের পাঠিয়ে একটু দেখে আসা যাক। পাঠালেনও সেই মতো। মাঝিরা জাহাজের কাছাকাছি পেঁৗছতেই ঘনকুয়াশা চারদিক ঢেকে গেল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কি হলো? কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে গেল। খালি জাহাজটি দেখা গেল। কিন্তু মাঝি-মাল্লারা গেল কোথায়? তারা তো ফিরছে না! ঘটনার রহস্য সমাধান করতে আরও একটি দলকে পাঠানো হলো। ওই দলটিও জাহাজে পেঁৗছামাত্র শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড়। এবারও কিছুই দেখা গেল না। ঝড় থামার পর দেখা গেল সব ভ্যানিশ। মাঝি-মাল্লাদের আর দেখা গেল না। এমনকি জাহাজটিও কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে! চারদিকে তোলপাড় পড়ে গেল। চলল অনেক খোঁজাখুঁজি। কিন্তু কোথাও এর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের ত্রিভুজের রহস্য এমনই। এখানে কোনো বিমান কিংবা জাহাজ হারিয়ে গেলে তার ধ্বংসাবশেষ কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে কোনো মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায় না। কোনো কিছুরই নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ত্রিভুজ অঞ্চলে এমন অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে মানুষ, জাহাজ কিংবা উড়োজাহাজ। এরকম অসংখ্য অন্তর্ধানের গল্প বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে পৃথিবীর সেরা রহস্যাবৃত অঞ্চলে পরিণত করেছে। অনেকে মনে করেন, এসব অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী অতি-প্রাকৃতিক কোনো শক্তি বা ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতি। জায়গাটির রহস্যময়তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, বানানো হয়েছে অসংখ্য ডকুমেন্টারি। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা শোনা যায়। আবার যেসব দুর্ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল, আবার অনেক কিছুই লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত বলে মনে করা হয়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে কি?
ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত ত্রিভুজ এলাকা হলো শয়তানের ত্রিভুজ। আটলান্টিক মহাসাগরের তিন প্রান্ত দিয়ে সীমাবদ্ধ ত্রিভুজাকৃতির একটি বিশেষ এলাকা যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। এর মূল নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। তবে এর কুখ্যাতির জন্য একে শয়তানের ত্রিভুজ বলা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, আরেক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এ অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। অবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
বেশিরভাগ লেখক-গবেষকই এই নির্দিষ্ট অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন সীমানা বরাবর মিয়ামি, সানজুয়ান, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিক আর বারমুডা নিয়ে তৈরি একটি ত্রিভুজ বা বলা ভালো একটি ট্রাপিজিয়াম আকৃতির চতুর্ভুজ। তবে বেশিরভাগ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো ঘটেছে দক্ষিণ সীমানায় বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে এবং ফ্লোরিডা উপকূলের আশপাশে। কত জাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে এ এলাকায় যেগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি আজও।
বিভিন্ন লেখকের বর্ণনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিস্তৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এই ত্রিভুজের ওপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এখানকার আবহাওয়া এমন যে, হঠাৎ ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া এটি হলো প্রমোদতরীর বিচরণক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভুজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন, এর আকার ট্রাপিজয়েডের মতো, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর (অুড়ৎবং) পূর্ব দিকের আটলান্টিক অঞ্চলজুড়ে। আবার কেউ কেউ এগুলোর সঙ্গে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান জুয়ান (ঝধহ ঔঁধহ), পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্টেইটসের দক্ষিণ সীমানা। আর এখানেই ঘটেছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এ ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।
সেই কলম্বাসের সময় থেকে শুরু করে এখনো এখানে ঘটছে একই ব্যাপার। এখানে এখনো হারিয়ে যায় জাহাজ, সাবমেরিন কিংবা বিমান। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সবকিছু। এর নামই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অভ্যন্তরে আছে শ'তিনেক কোরাল দ্বীপ। এর বেশির ভাগই জনবসতিহীন। আর এর মধ্যে একটি দ্বীপ হচ্ছে 'বারমুডা'। দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ১৫৬৫ সালে। এক দুঃসাহসী নাবিক জুয়ান ডি বারমুডেজ দ্বীপের আবিষ্কারক। তার নামানুসারেই এই দ্বীপের নামকরণ করা হয়। এ এলাকার ধার ঘেঁষে গেলেও দেখা যায় অদ্ভুত কিছু কাণ্ড-কারখানা। মাঝে মাঝে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বাতিল করে দেয়, রেডিও বিকল করে দেয়, কম্পাস ইত্যাদির বারোটা বাজিয়ে দেয়। ক্ষুদ্র আলোক শিখা, ধূমকেতুর পুচ্ছ, সবুজ রঙের কুয়াশা, বিদঘুটে জলস্তম্ভ, প্রচণ্ড ঘূর্ণিপাক, পথ ভুলে যাওয়া, হিংস ভাবে জাহাজ গিলতে আসা পাহাড় সমান ঢেউসহ ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড-কারখানা। আবার এক মাস আগে যে জাহাজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সে জাহাজকেও ভুতুড়েভাবে ভাসতে দেখা যায় এখানে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের দ্বীপকে ঘিরে রহস্যময় ঘটনার কোনো অন্ত নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দুর্ঘটনা হলো ৫টি টর্পেডো বম্বারের দুর্ঘটনা। ১৯৪৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওই ত্রিভুজ স্থানে যানগুলো রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘটনাটিকে বলা হয় মেরি সিলেক্ট অব দি স্কাই। মেরি সিলেক্ট জাহাজটির অন্তর্ধান কাহিনীও অদ্ভুত। সেটি অবশ্য বারমুডার সীমানার মধ্যে ঘটেনি, তবু এটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আকাশে বিমান মহড়া চলছে। এরকম প্রতিদিনই হয়। প্রতিটি বিমানেই পাইলটকে নিয়ে তিনজন ক্রু থাকে। সেদিন ছিল একজন কম। তারিখ ৫ ডিসেম্বর। ফলে আবহাওয়া পরিষ্কার। কন্ট্রোল টাওয়ার বিশেষ জরুরি। ভীত একটি কণ্ঠস্বর। মনে হচ্ছে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি। আমরা মাটি দেখতে পাচ্ছি না। টাওয়ার জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের পজিশন জানাও। তাও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছি। বিকাল গড়িয়ে গেল। তখনো তারা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই। ১৩ জন ক্রু নিয়ে একটি বিরাট মার্টিন মেরিনার ফ্লাইং বোট পাঠানো হলো তাদের উদ্ধার করে আনার জন্য। এ ফ্লাইং বোটটি অশান্ত সমুদ্রেও নামতে পারে এবং এমনভাবে তৈরি যে, পানিতে ডুবে না। ফ্লাইট নাইনটির উদ্দেশ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বার্তা প্রেরণ করল-যেখানে আছ সেখানেই থাক। সাহায্য পাঠানো হলো। কিন্তু আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। মেরিনার আকাশে উঠে কোনো বিমান দেখতে পেল না। এটুকু খবর পাওয়ার পরই ব্যস। মেরিনারের সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা গেল না। দমকা হাওয়া। কোথায় যে গেল, কী যে হলো কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে, তল্লাশি চালিয়ে, হইহই ফেলে দিয়েও বিমানের একটি টুকরারও কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। নেভার বোর্ড অব ইনকুয়ারির বৈঠক বসল। তদন্ত হলো। তদন্তের জন্য যারা বিমান নিয়ে গেল তারা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যে পথভ্রষ্ট হলো না। তার মানে সব বিমান বা জাহাজের ক্ষেত্রেই যে এমনটি ঘটেছে তা নয়।
১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার এরিয়েল নামের একটি বিমান লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিল। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এটি বারমুডার আকাশে উড়ল। তখন আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দর। আর সমুদ্র ছিল শান্ত। ওড়ার ৫৫ মিনিট পর বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেল। এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলো। কিন্তু সমুদ্রের কোথাও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল না। বিমানটি অদৃশ্য হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে। ১৮ তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল জানাল, সেখানকার সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ একটি জায়গা থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনার এক বছর আগে সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমান। সেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান থেকে সিয়ামি। ক্যাপ্টেনের নাম রবার্ট লিংকুইসড। ভোর ৪টা ১৩ মিনিটে বিমানটি থেকে শেষ বেতার বার্তা ভেসে এলো, আমরা অবতরণ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি। দক্ষিণে আর মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরে সিয়ামি বিমানবন্দর। আমরা সিয়ামি শহরের আলোকমালা দেখতে পাচ্ছি। সব ঠিক আছে। কোনো গোলমাল নেই। অবতরণের নির্দেশের অপেক্ষায় রইলাম। এই শেষ বার্তা পাঠিয়ে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর এর আর কোনো হদিস মেলেনি। ১৯৪১ সালে ওই রহস্যময় জায়গাতে অদৃশ্য হয়ে গেল তিনিটি ট্যাঙ্কার, একটি চার ইঞ্জিনের উড়োজাহাজ আর একটি ট্রলার।
আরেকটি বিমান যাচ্ছিল নাসাউ থেকে বাহামার গ্রান্ডটার্ক দ্বীপের দিকে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি এসে পাইলট বেতার সংকেতে জানালেন, 'আমি কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দুটি অজানা দ্বীপের চারপাশে চক্কর মারছি। অথচ নিচে কিছুই দেখেতে পাচ্ছি না। এই ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় আছে কি? যারা এই দুর্ঘটনার সাক্ষী তারা দেখতে পেল ওই হালকা বিমানটি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দ্বীপের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মেঘমুক্ত আকাশে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি রহস্যময় অঞ্চল হলো জলীয়কেন্দ্রের একটি বিন্দু। ফ্লোরিয়া থেকে বাহামার মধ্যে একট অঞ্চলকে বলা হয় রেডিও ডেড স্পট। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেখানে কোনো বেতারতরঙ্গ প্রবেশ করতে পারে না এবং বের হতেও পারে না। এমন একটি বিন্দু আছে যেখানে কম্পাস অচল হয়ে যায়।
১৯১৮ সালে সেখানে ইউএস নেভির কয়েকটি জাহাজ নিখোঁজ হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে সাইক্লোপস জাহাজের অদৃশ্য হওয়া। তাতে ছিল ৩০৯ জন যাত্রী। ১৯ হাজার টন ভারী জাহাজটি বারবাডোস থেকে বাল্টিমোরের দিকে যাত্রা করেছিল। এ জাহাজটি সেখানে অদৃশ্য হয়ে যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে অন্তর্ধান হওয়া ফ্লাইট নাইনটিন। আর এটি নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়, 'বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলনেতাকে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে_ ডব ফড়হ'ঃ শহড় িযিবৎব বি ধৎব, ঃযব ধিঃবৎ রং মৎববহ, হড় যিরঃব। এর অর্থ হলো_ আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ রঙের পানি, কোথাও সাদা কিছু নেই। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। এ নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তার জাহাজের নাবিকরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক-নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ অক্টোবর, ১৪৯২ সালে তার লগবুকে এসব কথা লিখে রাখেন। তবে বর্তমান বিশেষজ্ঞরা লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন, নাবিকরা যে আলো দেখেছেন তা হলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন। আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রথম খবরের কাগজে রিপোর্ট বেরোয় ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ইভিডবি্লউ জোন্স লিখিত এই খবর প্রকাশের দু'বছর পর 'ফেইট' ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড 'সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর' শিরোনামে একটি ছোট্ট প্রবন্ধ লেখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন (ইউএস নেভীর পাঁচটি টিবিএম অ্যাডভেঞ্চার বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়)-এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভুজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনেও লেখা বেরোয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস 'প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল' নামে আরেকটি লেখা লেখেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লেখেন 'ইনভিজিবল হরাইজন' মানে 'অদৃশ্য দিগন্ত' নামের বই। জন ওয়ালেস স্পেন্সার লেখেন 'লিম্বো অব দ্য লস্ট', মানে 'বিস্মৃত অন্তর্ধান', চার্লস বার্লিটজ লেখেন 'দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল', রিচার্ড উইনার লেখেন 'দ্য ডেভিল'স ট্রায়াঙ্গল' বা 'শয়তানের ত্রিভুজ' নামের বই। এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একটি বর্ণিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাই বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। লেখকদের এসব রচনাকে অতিরঞ্জন বলা হলেও বারমুডার প্রকৃত রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। আর এই বারমুডার আরেকটি রহস্যের সমাধানও দিতে পারেনি কেউ। আর তা হচ্ছে একটি অদ্ভুত জৈবের রহস্যময় উপস্থিতি। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করেছেন টেডি টাকার নামের এক ডুবুরি। কয়েক বছর আগের কথা। একদিন সকালবেলা বারমুডার বেলাভূমিতে টেডি একটি অদ্ভুত বস্তু দেখতে পেলেন। সেটি ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ পাউণ্ড ওজনের উজ্জ্বল সাদা একটি পিণ্ড। স্থানীয় লোকেরা ওই রহস্যময় বস্তুটির নাম দিল বারমুডা ব্লপ। সেটি পরীক্ষা করে টেডি বলেন, 'জিনিসটি যে জৈব পদার্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এরকম কোনো প্রাণী কখনও দেখা যায়নি। এই পিণ্ডের একটি টুকরা কেটে নিয়ে গবেষণা করা হলো মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেল, ওই পিণ্ডটি কোনো প্রাণীদেহেরই অংশ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি খুব অদ্ভুত কোনো কোলাজেন টিউমার। আর সেটি অবশ্যই কোনো বড়সড় জলচর প্রাণীর। যেমন তিমি। কিন্তু আরেক দল গবেষক বলেছেন, ওটি একটি প্রকাণ্ড অক্টোপাস। রহস্যময় ব্যাপার হলো_ পিণ্ডটি বেলাভূমিতে পড়ে থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত ভেঙে টুকরা টকুরা হয়ে যায়। অথচ তাতে এতটুকু পচন ধরেনি। বারমুডার এই নতুন রহস্যের মীমাংসা হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় সব অন্তর্ধানের কারণ নিয়ে অনেকগুলো তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়েছে। কেউ বলেছেন, ওখানকার সমুদ্রে বা আকাশে আস্ত একটা ফাটল আছে। প্রকৃতির সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় চিরকালের মতো। কেউ বলেন, অজানা এক সভ্যতার কথা, যেখানে আগুনের গোলা লাফিয়ে ওঠে। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় সব জাহাজ ও উড়োজাহাজ। কারো মতে, ওই অঞ্চলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের জন্য বিশাল জলস্তম্ভ জাহাজ, উড়োজাহাজ সবকিছুকে নিজের গহবরে টেনে নেয়। কেউ বলেছেন, অন্য গ্রহের প্রাণী বা এই জাতীয় কিছু, যা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য। কেউ আবার ব্যাখ্যা করেছেন ফোর্থ ডাইমেনশন বা চতুর্থ মাত্রার। তাদের মতে, সময়ের একটা অনন্ত ফাটল ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকে। ওইসব জাহাজ ও বিমান সময়ের সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে হারিয়ে যায় বর্তমান কালের কাছ থেকে। তারা চলে যায় সুদূর অতীতের কোনো সময়ে। নয়তো ভবিষ্যতের গর্ভে। কেউ আবার চুম্বকীয় তত্ত্বের মাধ্যমে রহস্যটি মীমাংসা করতে চেয়েছেন। তাদের মতে, ওই অঞ্চলে আকাশ ও সমুদ্রের মধ্যে এক তড়িতাহত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। সেখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। কারো মতে, ওই রহস্যময় অংশে পর্যায়ক্রমে অজানা এই রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয়। সেই যৌগ যাবতীয় ইচ্ছাশক্তি ও ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিকে অবশ করে দেয়। সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার ফলে এক অজানা জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। এর ফলে সেখানে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটেছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের দ্বীপ নিয়ে যতসব রহস্য, সব রহস্যেরই একে একে ইতি টেনেছেন বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও লেখক। অনেকেই একে অতিরঞ্জিত গালগল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আবার অনেকে একটি সেরা বাণিজ্যিক রহস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে রহস্যের আবার বাণিজ্য কিসের? আপাতদৃষ্টিতে রহস্যে কোনো বাণিজ্যিক দিক না থাকলেও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। যেহেতু বছরের পর বছর ধরে এ স্থানের রহস্যময়তা কেবল বেড়েই চলেছে তাই এ সম্পর্কে সব ধরনের গুজবই ডালপালা মেলেছে। আর বিশ্বজুড়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পেঁৗছে যায় মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর এখানেই তৈরি হয় এর বাণিজ্যিক ভিত্তি। কি সংবাদপত্র, কি টিভি চ্যানেল অথবা বই-পুস্তক_ সবখানেই এর জয়জয়কার। আর এ কারণেই এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেয়ে গল্প বলায় আগ্রহী ছিলেন সবাই। এরপরও অনেকে এ বিষয়ে গবেষণার পর কিছু কারণ দেখিয়েছেন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব না হলেও এ কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে রহস্যের জট ভাঙায় কিছুটা হলেও সহজ হবে।
কুসচ এর ব্যাখ্যা :
লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং 'দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিস্ট্রি : সলভড' এর লেখক। তার গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ-এর বর্ণনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন।
কুসচ-এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হলো_
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যত সংখ্যক জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয় তার সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় খুব বেশি নয়।
এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকরা এ ধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গেছেন।
অনেক ঘটনার বর্ণনায়ই লেখকরা কল্পনার রং ছড়িয়েছেন। আবার কোনো নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে প্রচার করা হয়েছে।
আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকরা বলেছেন। যেমন_ ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়; কিন্তু তখনকার খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
সুতরাং কুসচ'র গবেষণার উপসংহারে বলা যায়_ লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন।
মিথেন হাইড্রেটস
এখানে দেখানো হয়েছে বিশ্বের যেসব স্থানে গ্যাস হাইড্রেটযুক্ত পলি পাওয়া গেছে অথবা আছে বলে অনুমান করা হয়। কন্টিনেন্টাল সেলভে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে।
কম্পাসের ভুল দিক-নির্দেশনা
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সঙ্গে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে এর দিক-নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু উইসকনসিন থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিকভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। ওই ত্রিভুজ এলাকাজুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যুতি সাধারণের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
হ্যারিকেন
হ্যারিকেন হলো শক্তিশালী ঝড়। ঐতিহাসিকভাবেই জানা যায়, আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হ্যারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর 'ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা' এমনি একটি বিধ্বংসী হ্যারিকেন ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।
গলফ স্ট্রিম
গলফ স্ট্রিম হলো মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। একে বলা যায়, মহাসমুদ্রের মাঝে এক নদী। নদীর স্রোতের মতো গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তুকে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে। যেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর 'উইচক্রাফট' নামের একটি প্রমোদতরীতে। মিয়ামি তীর থেকে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে কোস্টগার্ডকে জানানোর পরই গলফ স্ট্রিমকবলিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় জাহাজটি।
দৈত্যাকার ঢেউ
হঠাৎ করেই সমুদ্রে দৈত্যাকার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি শান্ত সমুদ্রেও এমন ঘটতে পারে। তবে একথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এমন ঢেউ নিয়মিত সৃষ্টি হয়।
মানবঘটিত দুর্ঘটনা : অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। যেমন- কোস্টগার্ড ১৯৭২ সালে ভিএ ফগ-এর নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে বেনজিন-এর পরিত্যক্ত অংশ অপসারণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছে। তবে রহস্যের কারণ হলো_ অনেক নিখোঁজের ঘটনারই উপসংহারে পেঁৗছানো যায়নি, কেননা এর কোনো ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ইচ্ছাকৃত ধ্বংসসাধন
যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রুপক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গেছে বলেও মনে করা হয়। যেমন মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউএসএস সাইক্লপস এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস এবং নিরিয়াসকে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়। তবে পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।
জলদস্যুদের আক্রমণে : আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। ওই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। ১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আখড়া। তাই জলদস্যুদের আক্রমণেও জাহাজ নিখোঁজ হতে পারে।
-
রণক ইকরাম