মোগল আমলের একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যের নিদর্শন হচ্ছে ধানমণ্ডির আবাসিক এলাকার সাতমসজিদ রোডের ৭/এ-(পুরনো ১৫) তে অবস্থিত ঈদগাহটি। এটি বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ সালে নির্মাণ করেছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার রাজধানীতে পরিণত হওয়ার পর এর মর্যাদা পরবর্তী এক শতাব্দী পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল। এ সময় প্রশাসনিক সদর দফতর ছিল ঢাকায়। এখানে ছিল সুবেদারের বাসস্থান ও কার্যালয়। এ সময়ের মধ্যে মোগলদের দ্বারা বিভিন্ন মসজিদ, ঈদগাহ এবং সরাইখানা নির্মিত হয়। বাংলাদেশের স্থাপত্যরীতি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। একটি দেশের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও কৌশল নির্ভর করে সেখানকার ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিশেষ করে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর। পাথর ও মার্বেলের অভাব এবং প্রচুর পলিমাটি দ্বারা ইট তৈরি স্থাপত্যরীতি বা 'ব্রিক স্টাইল'-এর উদ্ভব হয়। এই ঈদগাহটিতেও অন্য মোগল স্থাপত্যগুলোর মতো পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ধানমণ্ডির ঈদগাহটি মাটি থেকে ৪ ফুট উঁচু একটি সমতলভূমিতে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ২৪৫ ফুট প্রস্থ, ১৩৭ ফুট। বিস্তৃতি তিন দিকে। পশ্চিমে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর, যেখানে রয়েছে মিহরাব ও মিম্বার। তখন এর পাশ দিয়ে বয়ে যেত পান্ডু নদীর একটি শাখা। এই শাখা নদী জাফরাবাদে সাতগম্বুজ মসজিদের কাছে মিলিত হতো বুড়িগঙ্গার সঙ্গে। সে আমলে ঈদের দিন এই ঈদগাহটিতে শুধু মোগলরাই যেতেন। সাধারণ মানুষের স্থান সেখানে ছিল না। সুবাদার, নাজিম ও অন্য মোগল কর্মকর্তারা নামাজ পড়তেন এখানে।
-হাফিজ মোল্লা
0 comments:
Post a Comment