Wednesday, March 2, 2011

রোডসে অ্যাপোলো

0 comments
যুদ্ধ কখনোই শান্তি বয়ে আনতে পারে না। পৃথিবীতে অসংখ্য ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হলেও এখানে শান্তিকামী মানুষের সংখ্যাই বেশি। যুগে যুগে পৃথিবীতে যেমন শান্তির বার্তা নিয়ে মহাপুরুষ এসেছেন, তেমনি এসেছেন যুদ্ধবাজ দুষ্কৃতকারী। এরা পৃথিবীতে কোনো কিছু সৃষ্টি করে যায়নি, ধ্বংস ছাড়া। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে তার অধিকাংশই ধর্মীয় যুদ্ধ। ক্ষমতার জন্য হোক আর ধর্মীয় আধিপত্যের জন্যই হোক যুদ্ধবাজরা যখন কোনো দেশ বা জাতিকে জয় করেছে, তখন তারা ধ্বংস করেছে সেই জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যকলাকে। এ রকমই এক যুদ্ধে ধ্বংস করা হয়েছে প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য, রোডসের 'অ্যাপোলোর মূর্তি'। ইজিয়ান সাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম রোডস। খ্রিস্টপূর্ব ২৪৮ অব্দে এই দ্বীপে নির্মিত হয় অ্যাপোলো দেবতার এক বিশাল মূর্তি। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ১২ বছর। মূর্তিটি দুই স্তরবিশিষ্ট ছিল। প্রথম স্তর ছিল ৪০ মেট্রিক টন ওজনের পাথরের ভিত্তি। এ ভিত্তির ওপরই তৈরি করা হয়েছিল মূর্তির মূল কাঠামো। মূর্তিটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে। তবে কিছু লোহাও ব্যবহার হয়েছিল। ব্যবহৃত তামার ওজন ছিল ২৫০ মেট্রিক টন। এর উচ্চতা ছিল ১২০ ফুট। খ্রিস্টপূর্ব ২২৪ অব্দে এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মূর্তিটির একটি পা ভেঙে যায়। আমরা এখন কল্পনা করতে পারি, ১২০ ফুট উঁচু একটি দেবতার মূর্তি আকাশ ভেদ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার তাম্রদেহ যেন বলে যাচ্ছে_ 'পৃথিবীতে তোমরা ভালো থাক'। সেই প্রাচীন যুগে এমন একটি বিস্ময়কর মূর্তি তৈরি করা যে কত কঠিন ছিল তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। এই আধুনিক যুগেও অমন একটি মূর্তি তৈরি করা কম সাধ্যের ব্যাপার নয় অথচ তারা সেই অসাধ্য সাধন করেছিল। এই মূর্তিটি তৈরি করতে কত লোকবল লেগেছিল বা কত টাকা খরচ পড়েছিল তা আমরা জানি না, জানার দরকারও নেই। শুধু আমরা কল্পনা করলে আজো দেখতে পাই, বিশাল অ্যাপোলোর তাম্রমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে মেঘ ভেদ করে। সূর্যের আলোয় চকচক করে উঠছে তার মুখমণ্ডল। কিন্তু এ মূর্তিটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝিতে সেরাসেন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করে মূর্তিটি ধ্বংস করে।

-তৈমুর রেজা

0 comments:

Post a Comment