Wednesday, March 9, 2011

আইসবার্গ

0 comments
আইসবার্গকে সাগর বা মহাসাগরের ভূত বলা হয়। এর কারণ অবশ্য অনেক। রাতের অন্ধকারে বিশাল বরফের টুকরোগুলো পানির তলায় লুকিয়ে থেকে জাহাজের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওইরকম একটি আইসবার্গের আঘাতে বিখ্যাত 'টাইটানিক' জাহাজ ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়। বরফময় উত্তর বা দক্ষিণ মেরু থেকে বিরাট আকৃতির বরফের চাকা ভেসে সাগরে নেমে পড়ে এবং ভাসতে ভাসতে চলে যায় এদিক-সেদিক। যে কোনো আইসবার্গের সাধারণত দশ ভাগের নয় ভাগ পানির নিচে ও এক ভাগ থাকে পানির ওপর। গড়পড়তা আইসবার্গটির ওজন ১ থেকে ১০ হাজার টন। কিন্তু সবচেয়ে বড় আইসবার্গটির ওজন ১ কোটি ১০ লাখ টন পর্যন্ত হতে পারে। ১৯৮৭ সালে বি-৯ নামে যে আইসবার্গটি দক্ষিণ মেরু থেকে নেমে এসেছিল সেটি ছিল ৯৫ মাইল লম্বা ও ২২ মাইল চওড়া। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, এতে যে পরিমাণ বরফ আছে তাতে পৃথিবীর সব মানুষ প্রতিদিন দুই গ্লাস করে খেলে দুই হাজার বছর পানি খেতে পারবে এবং এটি গলতে সময় নেবে প্রায় ২০ বছর। ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজডুবির পর সবার টনক নড়ে। ১৯১৪ সালে ১৩টি সমুদ্র উপকূলীয় দেশ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল আইস পেট্রল (আইআইপি) বা আইসবার্গ পাহারা দেওয়ার সংগঠন গঠিত হয়। মার্চ থেকে জুলাই এই পাঁচ মাস আইসবার্গ নেমে আসার সময় সবচেয়ে বেশি নজর রাখে আইআইপি। প্রায় ৮০ বছর ধরে আইআইপির নির্দেশ মেনে চলায় এখনো পর্যন্ত আইসবার্গ দ্বারা বড় ধরনের ক্ষতিসাধন হয়নি। এ সংস্থার আছে নিজস্ব আইসব্রেকার জাহাজ। এ আইসবার্গ দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক উপস্থিত হন। বিশেষ করে আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট জনস টীপের কাছাকাছি এসব আইসবার্গ মে থেকে জুলাই পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গলতে শুরু করেছে বরফ। আর বাড়ছে সাগরের পানির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচু দেশগুলো অধিকাংশ ডুবে যাবে। ফলে আইসবার্গটির সমুদ্রে নেমে আসা ঠেকানোর জন্য সতর্ক হওয়া উচিত।

আমিন রহমান নবাব

0 comments:

Post a Comment