কত রক্ত আর কত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, তা অজানা নেই কারও। সেসব রক্তঝরা প্রাণের প্রতি, জানা-অজানা লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই দেশের নানা স্থানে বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। কিন্তু আমাদের একটি জাতীয় স্মৃতিসৌধ আছে। সাভারে নির্মিত এই সৌধ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের অস্তিত্ব আর জাতীয়তাবোধের প্রতীক। আমাদের ইতিহাসের স্মারক। প্রতিবছর স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে জাতীয়ভাবে এ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণের জন্যই নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের আরও ইতিহাস। যে ইতিহাস, যে ঘটনা আমাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে দ্রুত গতিতে এবং স্বল্প সময়ে। আমরা হয়ে উঠেছি অপ্রতিরোধ্য। একটি স্বাধীন দেশের নেশায় বাংলার নারী-পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। শিল্পীর ভাবনা আর ইতিহাস চিন্তায় নির্মিত আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে এর গঠন বোঝার উপায় নেই। যারা শুধু স্মৃতিসৌধের সামনের ছবি দেখেছেন, তারা কখনোই এর গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন না, বুঝতে পারবেন না এটা কীভাবে আর কী ইতিহাস মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এটা বুঝতে হলে সৌধের খুব কাছে যেতে হবে, পাশ থেকে দেখতে হবে। ভালোভাবে। দেখলেই বোঝা যাবে স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত। আমরা অনেকেই জানি না, এই সাত জোড়া ত্রিভুজের মানে কী।
স্কুলের পাঠ্যে বা পত্রপত্রিকায় বারবার সাধারণভাবে যেটুকু তথ্য প্রকাশ করা হয়, তা হলো জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে সাভারে অবস্থিত। এর স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন।
এছাড়া অনেকেই এর যে তথ্যগুলো জানেন তা হলো স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট। সৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। দেয়ালগুলো ছোট থেকে বড়গুলো ক্রমানুসারে সাজানো। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও এর চেয়ে বেশি কিছু জানে না। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে তাদের জানানোর ব্যবস্থাও করা হয়নি। এছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষকদের শিক্ষা দেওয়ার সীমাবদ্ধতা, জানার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি কারণেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ সম্পর্কে থেকে গেছে অজ্ঞ। হয়তো অনেকে বলবেন, স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে সব তথ্যই আমি জানি। কিন্তু জানার মানুষ আমাদের মধ্যে ক'জন আছে?
অনেক বয়স্ক মানুষও জানেন না, জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায় নির্দেশ করে। পর্যায়গুলো হলো_
১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,
২. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,
৩. ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন,
৪. ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন,
৫. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন,
৬. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং
৭. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করেই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে।
-সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী
0 comments:
Post a Comment