Sunday, March 6, 2011

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

0 comments
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়াদর্ী উদ্যান) বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিঘের্াষ ঘোষণাই ছিলো প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের শত নিপীড়ন উপেক্ষা করে বীর বাঙালী অস্ত্র ধারণের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এদিনই স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, 'আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি। ভাষণে তিনি বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশা'লস্নাহ।' বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক রেসকোর্সে এ ভাষণ যখন দিচ্ছিলেন ঠিক ওইদিনই ঢাকায় এসে পৌঁছান জেনারেল টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর আলোচনার অন্তরালে সামরিক প্রস্তুতির এক পর্যায়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। মূলত: ৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই গণতান্ত্রিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ছিলো। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে ৬ মার্চ পর্যন্ত ঘোষিত হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন গতকাল শেষ হয় ৬ মার্চ। ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত পল্টনের জনসমাবেশে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ৬ মার্চের মধ্যে যদি সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঘোষণা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক সেই সাত মার্চের জনসভা। গত ৪/৫ দিনের ঘটনাবলীতে বিক্ষুব্ধ মানুষ নতুন কর্মসূচীর অপেক্ষায় ছিলেন। সকাল থেকেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। লক্ষ মানুষের পদভারে ঢাকা পরিণত হয় উদ্বেলিত নগরে। 'পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা', 'তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ' সেস্নাগানে মুখরিত হয় রেসকোর্স ময়দান।

বঙ্গবন্ধু জনসভায় আসতে একটু বিলম্ব করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হবে কি হবে না এ নিয়ে তখনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে নেতৃবৃন্দের মধ্যে। পরে বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন এভাবে-"আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বুঝেন, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায় ।"

এরপর গত কয়েকদিনের ঘটনাবলী, শাসক শ্রেণীর সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বাংলাদেশীদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু পরবতর্ী আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেণ। এরপর তিনি ভাষণে বলেন-'এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়-তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।ঃ আমি যদি তোমাদের হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা সব বন্ধ করে দেবে।ঃ সৈন্যরা তোমরা ব্যারাকে থাক তোমাদের কেউ কিছুৃ বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা কর না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।ঃ.আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআলস্নাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

এদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বক্তা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বে আ স ম আব্দুর রব, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মঞ্চ থেকে মাইকে নানা ধরনের সস্নোগান দিয়ে উপস্থিত জনতাকে উজ্জীবিত রাখেন।

০০ফারাজী আজমল হোসেন

0 comments:

Post a Comment