Monday, March 14, 2011

ফুড এলার্জির চিকিৎসা

0 comments
নানা রকম জিনিস যা আমরা খেয়ে থাকি, আমাদের শরীরে লাগে বা ভেতরে ঢোকে এবং তার বিরুদ্ধে পরিবর্তিত-বর্ধিত প্রতিক্রিয়া শরীরে হলে তবে তাকে এলার্জি প্রতিক্রিয়া বলে। গরুর দুধ, গরুর গোশত, ডিম, কলা, বেগুন, চিংড়ি, ইলিশ মাছ তো আমরা সবাই খাই। কেউ কেউ এসব খেয়ে পেটে ব্যথা, হাঁপানি বা সর্দিতে ভোগেন। এগুলোই খাদ্যের এলার্জিক রি-অ্যাকশন।

প্রকার ভেদ

ফুড এলার্জি : খাদ্য গ্রহণ করার পর অস্বাভাবিক ইমুনোলোজিক্যাল ছাড়া অন্য প্রতিক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করার পর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কোন কোন খাদ্য থেকে এলার্জি হয়ে থাকে? গরুর দুধ, ডিম, বাদাম, সয়াবিন, ইলিশ, চিংড়ি, পুঁটি, বোয়াল, শৈল, বেগুন, কচু প্রভৃতি।

লক্ষণ : ত্বক বা চামড়া চুলকাতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে চাকা চাকা হয়ে লাল হয়ে ওঠে। চোখ চুলকানো, পানিপড়া, লাল হয়ে ওঠা, ফুলে ওঠা শ্বাসনালী, নাক ও গলা চুলকাতে থাকে। গলা ফুলে গেছে বলে মনে হয়, এমনকি কথা বলার সময় অসুবিধা হয়, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ ভাব অনেক সময় শব্দও থাকে। নিচের শ্বাসনালীতে শ্বাসকষ্ট, কাশি, দম খাটো খাটো ভাব, বাঁশির মতো আওয়াজ। পরিপাকতন্ত্র_ বমি বমি ভাব, পেটে ক্যাম্প বা ব্যথা, ডায়রিয়া দেখা যায়। জননতন্ত্র_ স্ত্রী ও পুরুষ অঙ্গে চুলকাতে থাকে ও ইউটেরাসে ক্রাম্প বা ব্যথা শুরু হয়।

কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম_ মাথাব্যথা ও রক্তের চাপও কমে যেতে পারে।

চিকিৎসা : পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এলার্জিক খাবার চিহ্নিত করে তা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে সর্বোত্তম চিকিৎসা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। এর মধ্যে মুখে খাওয়ার ক্রমোলিন, এন্টিহিস্টামিন ইপিনেফ্রিন খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। রোগীদেরও রোগ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে ধারণা দিতে হবে। যে খাদ্যদ্রব্য থেকে এলার্জি হয়ে থাকে তা সাধারণত পরিহার করা হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন তাকে বাড়ির বাইরে খেতে হয়। কোনো অনুষ্ঠানে বা হোটেলে যারা রান্নার দায়িত্বে ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে এই খাবারগুলোতে কি কি আছে অথবা তার এলার্জিক খাবারগুলো আছে কিনা তা জেনে এলার্জিক খাবারগুলো বাদ দিয়ে খেতে হবে। আর বড়দের ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার কৌশল শিখিয়ে দিতে হবে এবং সব সময় সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিতে হবে। প্রথম কয়েক বছরেই সাধারণত খাদ্যে এলার্জি দেখা দেয়। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম বছরে দেখা দেয়। যদি ১ থেকে ২ বছর ওই খাদ্যে এলার্জি থাকে না। গর্ভাবস্থার শেষের ৩ মাস মায়েরা যদি এলার্জি জাতীয় খাদ্য তাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেন তবে বাচ্চাদের এটপিক ডার্মাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এলার্জিপ্রবণ বাচ্চাদের অর্থাৎ যেসব পরিবারে এলার্জি আক্রান্ত রোগী থাকে সেসব পরিবারে বাচ্চাদের ১ম বছর গরুর দুধ, ১২-১৫ মাস বয়স পর্যন্ত ডিম ও ৩ বছর বয়স পর্যন্ত বাদাম খাওয়া পরিহার করা উচিত। এ জন্য খাদ্যে এলার্জি রোগীদের প্রথমেই এলার্জি পরীক্ষা করে জানা দরকার তার কোন কোন খাদ্য থেকে এলার্জি হয়। এজন্য এলার্জি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে এই এলার্জি পরীক্ষা করতে হবে। অনেকেরই ধারণা এলার্জির কোনো চিকিৎসা নেই এবং তাদের ধারণা এর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। কিন্তু এলার্জি টেস্টসহ এর যাবতীয় চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদেশের চিকিৎসা সেবাও উন্নত হচ্ছে।

ডা. শাহজাদা সেলিম
বারডেম একাডেমী, শাহবাগ, ঢাকা
e-mail: selimshahjada@gmail.com

0 comments:

Post a Comment