Wednesday, March 9, 2011

নাকে দুর্গন্ধের চিকিৎসা

0 comments
অনেকের নাকে দুর্গন্ধ হয়। যেসব কারণে সাধারণত নাকে দুর্গন্ধ হয় সেগুলো হচ্ছে_ সাইনোসাইটিস, নাকের প্রদাহ বা ইনফেকশন, নাকের মধ্যে বাইরের কোনো জিনিস ঢুকানো এবং এট্রোফিক রাইনাইটিস নাকের রোগ, যে রোগে নাকের ঝিলি্ল ধীরে ধীরে মরে যায়। যে রোগের কারণে নাকে দীর্ঘমেয়াদি দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় সেটি হলো এট্রোফিক রাইনাইটিস।

এট্রোফিক রাইনাইটিস : এটি নাসারন্ধ্রের ঝিলি্ল এবং নাকের ভেতরের দুই পাশের হাড় বা টার্বিনেটগুলোকে আবৃত করে রাখা ঝিলি্লর দীর্ঘমেয়াদি এমন একটি রোগ যাতে ঝিলি্লগুলো ক্রমশ মরে গিয়ে চুপসে যেতে থাকে। যার ফলে নাকের মধ্যকার জায়গা বেড়ে যায় এবং মরা ঝিলি্ল খসে পড়ে পচে গিয়ে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এট্রোপিক রাইনাইটিস সাধারণত দুই ধরনের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি।

প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিস : প্রাইমারি এট্রোফিক রাইনাইটিসের কারণ এখনো অজানা। তবে কারণ অনুসন্ধানের জন্য কিছু তত্ত্বকে এক্ষেত্রে দায়ী বলে গণ্য করা হয়। যেমন_ রোগের উত্তরাধিকার : যদি পরিবারে কারও এই রোগ থাকে অন্যদের ভবিষ্যতে এই রোগ হতে পারে বলে মনে করা হয়।

হরমোনজনিত বিঘ্নতা : এক্ষেত্রে সাধারণত পিউবারটি বা যৌবনোদ্গমের সময় এই সমস্যা শুরু হয়, মেয়েদের মধ্যেই বেশি হয়, দুর্গন্ধ এবং নাকে মরা ঝিলি্লর শুকনো খণ্ড বা ক্রাস্ট জমার প্রবণতা মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ হওয়ার পর কমে যায় বা চলে যায়। অপুষ্টিজনিত কারণ : ভিটামিন 'এ', 'ডি' এবং আয়রন অথবা খাবারের অন্য কোনো খাদ্য উপাদানের অভাবে এটি হতে পারে। এ কারণে উন্নত বিশ্বে এ রোগের প্রকোপ কম দেখা যায়।

ইনফেকশন : এট্রোফিক রাইনাইটিসের রোগীর নাকের শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে যেসব জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলো_ ক্লেবসেলা ওজায়েনা, ডিপথেরয়েড, পি. ভালগারিস, ই-কোলাই, স্ট্যাফাইলোক্কাই, স্ট্রেপটোক্কাই। তবে এসব জীবাণুর সবই দ্বিতীয় ধাপে ইনফেকশন সৃষ্টি করে দুর্গন্ধ ছড়ায়। প্রথম ধাপে অর্থাৎ প্রাইমারি কারণ হিসাবে এ জীবাণুগুলোকে ঠিক দায়ী করা যায় না।

স্ববিরোধী দেহ প্রতিরক্ষা : নাকের মধ্যে সংবেদনশীল উপাদানের প্রতিক্রিয়ার ফলে নাকের ঝিলি্লর ভাঙনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভাইরাল ইনফেকশন এবং অন্য কিছু অচেনা উপাদান রয়েছে নাকের এই সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াকে উস্কে দেয়।

রোগে ক্ষতিগ্রস্ত নাসারন্ধ্র : এই রোগে নাকে উঁচুস্তরীভূত স্তরটি ক্ষয় হয়ে অপেক্ষাকৃত পাতলা স্তরে পরিবর্তিত হতে থাকে। সে সঙ্গে পানির মতো তরল (সেরাস) পদার্থ নিঃসরণকারী গ্ল্যান্ড, ব্লাড সাইনোসয়েড, স্নায়ু বা নার্ভ মরে যেতে থাকে। একইরকম পরিবর্তন দেখা দেয় রক্তনালীগুলোতে। রক্তনালীর প্রান্তগুলো বন্ধ হয়ে মরে যেতে থাকে। এছাড়া নাসারন্ধ্রের দুই পাশে ঢাকনার মতো হাড়গুলো ক্রমশ শুষে ছোট হতে থাকে। ফলে নাসারন্ধ্রের পথ প্রশস্থ হতে থাকে। নাকের দুই পাশের সাইনাসগুলোর বৃদ্ধি ধীরগতির হওয়ার কারণে সেগুলো কিছুটা ছোট থাকে।

উপসর্গ ও লক্ষণ : যৌবনের শুরুতেই এই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। নাক পর্যবেক্ষণ করলে রোগীর নাকের মধ্যে সবুজাভ কিংবা হালকা ধূসর রংয়ের বস্টি বা ময়লা খণ্ড দেখা যায়। নাকের পাশের দিকে অবস্থিত শেডের মতো উপর নিচ করে বসানো তিনটি হাড় ক্ষয় হয়ে গিয়ে সামান্য উঁচু দাগের মতো মনে হয়। অনেক সময় মধ্যবর্তী দেয়ালটি ছিদ্র থাকতে পারে। কারো কারো নাক বসে যেতে পারে। নাকের ভেতরের ঝিলি্ল শুকিয়ে যাওয়ার এই প্রবণতা গলার পেছনের দিকেও লক্ষ্য করা যায়।

চিকিৎসা পদ্ধতি : ওষুধ : শুধু ওষুধে এই রোগ পুরোপুরি সারবে এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে নাককে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত রাখা। এজন্য নাক পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। একটি বিশেষ সিরিঞ্জের (হিগিনসন্স সিরিঞ্জ) সাহায্যে ক্ষার জাতীয় বিশেষ দ্রবণ দিয়ে নাক দৈনিক ২/৩ বার পরিষ্কার করা যায়। এছাড়া গি্লসারিনে ২৫% গ্লুুকোজ মেশানো সলিউশন নাক পরিষ্কার করার পর নাকে দিতে হয়। এই সলিউশন প্রোটিন নষ্টকারী জীবাণুকে বেড়ে উঠতে বাধা দেয়। নাকের মধ্যে স্থানীয়ভাবে এন্টিবায়োটিক মলম বা স্প্র্রে ব্যবহার করা যায়। অস্ট্রাডিওল স্প্র্রে ব্যবহার করা যেতে পারে আক্রান্ত স্থানের রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর জন্য।

অপারেশন : ইয়াংস অপারেশন নামে একটি অপারেশন আছে। এই অপারেশনের মাধ্যমে নাকের ছিদ্র অন্তত ৬ মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাক খুলে দেওয়ার পর আবারও একই অবস্থা দেখা দেয়।

সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস : নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে যখন একই সমস্যা হয় তখন তাকে বলা হয় সেকেন্ডারি এট্রোফিক রাইনাইটিস। যেসব রোগে এই অবস্থা হয় সেগুলো হলো_ সিফিলিস, লেপ্রোসি বা কুষ্ঠ, লুপাস এবং রাইনোস্ক্লেরোমা, কোনো রোগের জন্য নাকে রেডিওথেরাপি দিলে কিংবা নাকের কিছু অপারেশনে (অতিরিক্ত টার্বিনেকটমী) একই ধরনের সমস্যা হতে পারে। নাকের হাড় একদিকে বাঁকা হয়ে থাকলে অন্যদিকের ছিদ্রতেও একই সমস্যা তৈরি হতে পারে।



ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, নাক-কান ও গলা বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফোন : ০১৭১৬৩০৬৬৩১

0 comments:

Post a Comment