বগুড়া জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে ২০ কিলোমিটার দূরে সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি ইউপির অধীন হরিণা গ্রামে এককালের প্রতাপশালী জমিদার কাশি প্রসাদ রায়ের জমিদার বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ২৫০ বছরের প্রাচীন চুন-সুড়কির তৈরি এই জমিদার বাড়িটি। সুরক্ষিতভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাশ্র্বে শয়নকক্ষ ছিল। প্রাসাদের উত্তর পাশ্র্বে ছিল নাচঘর, জেলখানা আর দক্ষিণে ছিল কাচারিঘর, ভোগঘর ও মন্দির। মন্দিরের উঠোনে ছিল ইন্দারা। খরা মৌসুমে ওই ইন্দারার তলদেশের দেখা পাওয়া যেত না। এই জমিদার বাড়ির মূল প্রবেশ পথে রয়েছে লোহার পাতের তৈরি অত্যাধুনিক দরজা। বাড়ির জানালা খিলান সবই মজবুত লোহার পাতের তৈরি । বর্তমানে দরজা-জানালাগুলো অবিকৃত অবস্থায় পড়ে আছে। উক্ত হিন্দু জমিদার কাশি প্রসাদ রায় ও তার জমিদার বাড়িটি ঘিরে এখনো মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত আছে বহু কাহিনী ও ঘটনা। জমিদার কৃষ্ট প্রসাদ রায় পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত জমিদারি চালাতে জমিদার কাশি প্রসাদ রায় নানা অজুহাতে প্রজাদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করত। জমিদার কাশি রায় ছিলেন খুবই নারীলোভী। তার কুনজর একবার কোনো সুন্দরী নারীর ওপর পড়লে সে আর রেহাই পেত না তার কবল থেকে। নারীলোভী এ জমিদার তার জমিদারি এলাকায় কোনো নারীকে বিবাহ দিতে হলে তার কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হত। তার অনুমতি ছাড়া কোনো বিবাহ হলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হত প্রজাদের ।
এককালের প্রতাপশালী জমিদার কাশি প্রসাদ রায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তার সহায়সম্পত্তি কমতে থাকে। সেই সঙ্গে তার প্রতাপও দিন দিন কমে আসে। জনশ্রুতি আছে ওই জমিদার জীবনের শেষ পর্যায়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবনযাপন করার একপর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যুর পর দু'পুত্র কুপেন্দ নাথ রায় ও রাজেন্দ নাথ রায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় তাদের পিতার জমিদার বাড়িটি উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের দবিরুদ্দীন প্রাং-এর কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে যায়।
বর্তমানে বাড়িটিতে দবিরুদ্দীন প্রাং-এর উত্তরসূরি ওয়ারিশরা বসবাস করছেন। বাড়িটি বর্তমানে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঐতিহাসিক এ জমিদার বাড়িটিকে ঘিরে এখনো নানা ঘটনা ও স্মৃতি মানুষের মুখে মুখে বয়ে বেড়াচ্ছে।
আমাদের সারিয়াকান্দিতে এটা! সত্যিই জানতাম না।