Thursday, May 13, 2010

রংপুর জেলা

45 comments
০০ এম.এম. রাজু ০০
রঙ্গরসে ভরপুর রংপুর উত্তরবঙ্গের একটি প্রাচীন জনপদ। শস্য আর ফুলে ফুলে সুশোভিত এই জেলাটি বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
নামকরণর ইতিহাস
রংপুর নামকরণের পেছনে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। রংপুর বা ‘রঙ-পুর’ শব্দটি ফারসি অর্থে ‘রঙে পূর্ণ’। মতান্তরে সংস্কৃত অর্থে পুর মানে শহর। মহাভারতের বিবরণ অনুসারে প্রাগজ্যোতিষ অধিপতি রাজা ভগদত্তের উদ্যান বা রঙ-মহল অবস্থানের জায়গাটিই রঙ্গপুর নামে অভিহিত ছিল। উক্ত বিবরণ অনুযায়ী রাজা ভগদত্তের রঙ মহলের নামানুসারে রঙ্গপুর বা রংপুরের নামকরণ করা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। তারিখ-ই-ফেরিশ থেকে জানা যায়, ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুর প্রতিষ্ঠিত হয়। তখনকার রংপুর তিস্তা নদীর তীরে রঙ্গাপু নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এই এলাকা তিস্তায় বিলীন হয়ে গেলেও রংপুর নামটি রয়ে গেছে। শরৎচন্দ্র মিত্রের মতে, বহু প্রাচীনকালে রংপুর বস্ত্র রঞ্জনীর জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। তাই রংপুর শব্দের সাথে সম্পর্ক রেখে তিনি রংপুরের প্রাচীন নাম রংবেজপুর বলে আখ্যা দিয়েছেন। রংবেজ ফারসি শব্দ, যার অর্থ রঞ্জনকারী (উুবৎ) রংপুর। রংবেজপুর ফারসি নামের অপভ্রংশ।
আয়তন ও অবস্থান
আয়তনের ভিত্তিতে রংপুর জেলা বাংলাদেশে ২৯তম বৃহত্তম জেলা। জেলার মোট আয়তন ২০০৭.৭৮ বর্গ কিমি যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১.৫৬%। রংপুর জেলা ২৫-১র্৮ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৫০-৫র্৭ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০-৫র্৬ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯০৩র্২ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত। জেলার উত্তরে লালমনিরহাট জেলা ও তিস্তা নদী। দক্ষিণে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা, পূর্বে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা এবং পশ্চিমে দিনাজপুর নীলফামারী জেলা অবস্থিত।
প্রশাসনিক পটভূমি
দেওয়ানি লাভের ফলে রংপুর এলাকা কোম্পানি শাসনভুক্ত হয়। ১৮৫৮ সালে ভবনীগঞ্জ মহাকুমা স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ সালের ৭ ডিসেম্বর সদর মহকুমা গঠিত হয়। কোতোয়ালি বা রংপুর থানা ১৮৭৫ সালে প্রথমে মাহিগঞ্জ এলাকায় (পুরাতন রংপুর) স্থাপিত হয়। ১৮১৬-১৮ সালের মধ্যে কোতোয়ালি থানা ভাগ করে গঙ্গাচযা থানা সৃজন করা হয়। ১৯১৮ সালে মাহিগঞ্জ থানা বিলুপ্ত করে পীরগাছা ও কাউনিয়া নামক দুটি পৃথক থানা গঠন করা হয়। কুমারগঞ্জ থানার নাম পরিবর্তন করে বদরগঞ্জ রাখা হয়। ১৯১৪ সালে লালমনির হাট থানা বিভক্ত হয়ে লালমনিরহাট ও ফুলবাড়ী থানা এবং উলিপুর ও চিলমারী থানা বিভক্ত করে উলিপুর, রৌমারী ও চিলমারী থানা গঠিত হয়। ঐ একই বছর গাইবান্ধা বিভক্ত করে গাইবান্ধা ও ফুলছড়ি, থানা এবং ১৯১৫ সালে নাগেশ্বরী থানা বিভক্ত করে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি থানা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালে জেলা পুনর্বিন্যাসের ফলে বৃহত্তর রংপুর জেলা বিভক্ত হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা স্থাপিত হয়। বর্তমানে রংপুর জেলায় ৩টি পৌরসভা, ৮টি উপজেলা, ৮৪টি ইউনিয়ন, ২১৫১টি মৌজা, ১৫১৯টি গ্রাম আছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ।
নদ-নদী: তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া ও চিকলী। জেলাশহর ঘাঘট নদীর তীরে অবস্থিত।
জলবায়ু: বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২.৩০ সে. এবং সর্বনিম্ন ১১.২০ সে., বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৯৩১ মি মি।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
রংপুরের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভবন, পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বাড়ি, মন্থনার জমিদার বাড়ি, কেরামতিয়া মসজিদ, রংপুর জাদুঘর, মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরীর মাজার, ঝটা দুয়ারে ইসমাইল গাজীর মাজার, তাজহাটের জমিদার বাড়ি, লতিবপুরে (মিঠাপুকুর) তক্কা মসজিদ (মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত), চার গম্বুজ বিশিষ্ট তারাগঞ্জ মসজিদ, নয়া গম্বুজ বিশিষ্ট রাধানগর (বদরগঞ্জ) মসজিদ (মুঘল আমল), মানসিংহপুর ভীমেরগড় (বদরগঞ্জ), রায়পুর জমিদার বাড়ি (পীরগঞ্জ), রাজা নীলাম্বরের বাড়ির ধ্বংসাশেষ (পীরগঞ্জ), ডিমলারাজ কালীমন্দির, দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি (পীরগাছা) ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে শিরিন পার্ক, টিকলির বিল, চিড়িয়াখানা, ভিন্নজগত, বড় বিলা ইত্যাদি।
তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর


যোগাযোগ ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে রংপুর যাতায়াতের জন্য আগমনী, গ্রীনলাইন, টি.আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, নাবিল ইত্যাদি পরিবহন আছে। সড়কপথে ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব ৩৩৫ কিমি। জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা।

45 comments:

Post a Comment