Wednesday, May 12, 2010

যাত্রা উৎসব

0 comments

যাত্রাশিল্প আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম। যাত্রা আমাদের গ্রামীণ সমাজের অনেকটাই প্রধান বিনোদন মাধ্যম হবার পরেও নানা কারণে যাত্রাশিল্প বর্তমানে সংকটে। স্যাটেলাইট যুগে গ্রামীণ সমাজের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেখানে বিনোদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন হওয়ার ফলে যাত্রাশিল্প সমকালীন গ্রামীণ সমাজের বিনোদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রকৃতি প্রতিভাবান যাত্রাশিল্পী, পালাকারসহ সংগঠকের অভাব থাকার ফলে অনেক অ-শিল্পী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখান থেকে সুস্থ যাত্রা শিল্প অবরুদ্ধ অবস্থায় মুক্তাঙ্গনের আলো-বাতাসের স্পর্শ পাবে তা বেশ কঠিন। ফলশ্রুতিতে যাত্রায় অশ্লীল নৃত্য এবং যাত্রাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর যাত্রা সংগঠকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ও পৃষ্ঠপোষকতায় জুয়া ও অন্যান্য অপকর্ম হতে দেখা যায়। উৎসাহিত করতে হবে যাত্রাশিল্পের পরিশীলিত চর্চাকে। যাত্রা শিল্পের বিকাশে বর্তমান সময়ের নবীন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি ও চর্চার বিকল্প নেই। যাত্রাশিল্প কখনই অশ্লীল নয়। যাত্রাশিল্পের সময়োপযোগী প্রযোজনা এবং স্বাভাবিক মঞ্চায়নের প্রবাহ বজায় থাকলে শিল্প মাধ্যমটি গতিশীল হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যাত্রাশিল্পের শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোার সফল প্রয়াসে আন্তরিক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ৬ মে শুরু হয়ে ১২ মে শেষ হলো যাত্রা উৎসব ২০১০। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বেশ জমে উঠেছিল যাত্রা উৎসব। বিপুল দর্শকের অংশগ্রহণে সফলভাবে সমাপ্ত হয় যাত্রা উৎসব ২০১০। উৎসবের প্রথম দিন ৬ মে বৃস্পতিবার প্রদর্শিত হয় পালাদেবী সুলাতানা। হাবীব সারোয়ারের নিদের্শনায় পালাকার ছিলেন ভৈরব নাথ গঙ্গোপাধ্যায়। চৈতালী অপেরা পরিবেশিত দেবী সুলতানার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন বাবু হেমকান্তি সেন, ফরিদ রানা, কুতুব উদ্দিন, আবুল কালাম, সুলতান, সবুজ মন্ডল, দৌলত খাঁ, শিল্পী বাসন্তী বেগম ও মীনু বেগম। শুক্রবার অগ্রগামী যাত্রা ইউনিট পরিবেশন করে স্বামী-স্ত্রী। পুর্নেন্দু রায়ের পালা পরিচালনা করেন সুলতান সেলিম। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন বৈদ্যনাথ মোস্তাফি, মোর্শেদ, মশিউর, ছোটবাবু, আবুল কাশেম, মোল্লা সিরাজ, দীনেশ, মৌসুমী, শিল্পী, সুমিতা ও অঞ্জলী দাস। ৮ মে শনিবার প্রদর্শিত হয় কোহিনুর। যশোরের আনন্দ অপেরায় পরিবেশনায় ব্রজেন্দ্র কুমার দে’র পালার নির্দেশনায় ছিলেন কবির খান ও বকুল হায়দার। অভিনয় করেন নূরু চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, আশিষ, মনা দাস, নজরুল, কবির খান, শিলা বণিক, সুফিয়া বেগম, লক্ষ্মী কর্মকারসহ অনেকে। যাত্রা উৎসবের চতুর্থ দিন রবিবার নিউ রঙমহল অপেরার পরিবেশনায় নির্মল মুখোপাধ্যায়ের পালার নির্দেশনায় ছিলেন সুকুমার বিশ্বাস। নেপথ্যে ছিলেন অজিত মল্লিক ও সুজাতা কির্ত্তনীয়া। ১০ মে সোমবার পরিবেশিত হয় সংগীত যাত্রা ইউনিটের জালিম সিংহের মাঠ। প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের পালা নিদের্শনায় ছিলেন অশোক ঘোষ ও তাপসী নন্দী। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সুনীল মন্ডল, বিনোশ বাবু, রাখী বিশ্বাস, তুষার হিরদাশ, সুব্রত, অখিন, অঞ্জনা, পূরবী দত্ত ও অশোক ঘোষসহ অনেকে। মঙ্গলবার চারনিকা যাত্রা সমাজ পরিবেশন করেন মহীয়সী কৈকেয়ী। ব্রজেন্দ্র কুমার দে’র পরিবেশনায় এতে নির্দেশক ছিলেন জ্যোৎস্না বিশ্বাস। অভিনয় করেন একদল যাত্রা শিল্পী। শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্রতি মাসে একটি করে যাত্রা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রা শিল্পের উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যেই বহু দূর এগিয়ে গেছে। সকল সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আমাদের যাত্রাশিল্পের উন্নতি ঘটুক।

0 comments:

Post a Comment