Thursday, May 6, 2010

বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বরিশাল

0 comments
বরিশাল নেছারাবাদ মহাসড়কের পাশে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ায় অপূর্ব স্থাপত্যকলার মনোরম শৈল্পিক কাজসমৃদ্ধ ইসলামী ঐতিহ্যপূর্ণ অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেঙ্। বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ১৯ কি.মি দূরে দক্ষিণাঞ্চলের তথা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এই মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেঙ্। এই মসজিদ কমপ্লেঙ্রে প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সমাজসেবী, ধর্মপ্রাণ, দানবীর এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। ১৪ একর জমির ওপর আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত সুবিশাল এ কমপ্লেঙ্রে মধ্যে মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকলে ডান পাশে রয়েছে পুকুর, পুকুরের চারপাশে নানা রঙের ফুল ও নানা জাতের গাছ। মাঝখান দিয়ে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য রয়েছে কালো পিচঢালা পথ। সৌন্দর্যমণ্ডিত নীল জলরাশির পুকুরটিতে রয়েছে মোজাইক করা চমৎকার একটি ঘাট তার ওপর রয়েছে বিশাল বসার স্থান একটু বাম দিকে তাকালে দেখা যাবে পুরনো মসজিদের স্থানে রয়েছে একটি স্তম্ভ। স্তম্ভটি বিশ্বের ২১টি পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যা দেখে পর্যটক, দর্শনার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়বেন। পুকুরের পশ্চিম দিকে রয়েছে মসজিদ ও ঈদগাহ। এর প্রবেশপথে রাস্তার দু'ধারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন দু'টি ফোয়ারা। কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে সোজা প্রবেশপথ ছাড়াও আর্কেডের ভেতর দিয়ে দু'টি পথ মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিক দিয়ে লাগানো। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো পুরো মসজিদটি। মাঝখানের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং গম্বুজের চারপাশে বৃত্তাকারে লেখা রয়েছে আয়াতুল কুরসী। ভেতরে চারকোণের চার গম্বুজের নিচে প্রবেশ তোরণের সম্মুখভাগে এবং ভেতরের চারপাশজুড়ে স্পষ্ট শোভা পাচ্ছে আল-কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি ও আলপনাগুলো করা হয়েছে বর্ণিল কাচও সিরামিক দিয়ে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে মূল্যবান মার্বেল পাথর ও গ্রানাইড পাথর বসানো হয়েছে। ভেতরে ৯টি গম্বুজে বড় বড় অত্যাধুনিক ৯টি ঝাড়বাতি রয়েছে যা রাতের বেলায় দেখলে যেকোনো আগন্তুকের চোখ জুড়িয়ে যায়। ১৮৩ ফুট উঁচু মসজিদটির মিনার। মসজিদের ভেতরে দেড় হাজার এবং বাইরে পাঁচ হাজারের অধিক মুসলি্ল একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মুসলি্লদের নামাজের সুবিধার্থে মক্কা-মদিনা শরিফের ন্যায় অনুরূপভাবে স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন রঙ এবং ডিজাইনের পাঁচ শতাধিক বাতি এবং কমপ্লেঙ্জুড়ে রয়েছে লাইটপোস্ট। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি স্পটে রয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। মসজিদের উত্তর পাশেই দোতলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক একটি ভবন। মসজিদের আঙ্গিনাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন গন্ধের-বর্ণের ফুলের বাগান। কেন্দ্রীয় কবরস্থান, গাড়ি পার্কিং ও বিদেশি পর্যটকদের আসার জন্য হেলিপ্যাড।
এছাড়া ১৫০/১৫৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব ৩টি জেনারেটর। দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুদের কমপ্লেঙ্রে নিরাপত্তার জন্য মসজিদের তিন দিকে তৈরি করা হয়েছে নীল জলরাশির মনোরম লেক, আর একদিকে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। দেশের অন্যতম এই সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদটি তৈরি করতে একনাগাড়ে ৪ বছর ১ মাস সময় লেগেছে। এতে প্রতিদিন ৪০ জন বিভিন্ন শ্রেণীর কারিগর, ৪০ জন সহকারী ও ৬০ জন সাধারণ শ্রমিক কাজ করেছেন (প্রতিদিন ১৪০ জন করে)। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত এই মসজিদটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের গর্ব এবং দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment