রাজশাহী মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে হেতম খাঁ সদর হাসপাতালের সামনে প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্তি্বক সংগ্রহশালা এবং বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এ বছর বরেন্দ্র সংগ্রহশালার শতবর্ষ পূর্ণ হলো।ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের সংষ্কৃতিপ্রেমী মানুষ তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে উৎসাহী হন। তারা বাংলা অঞ্চলের প্রত্ন নিদর্শন এবং ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। সাহিত্য পরিষদের প্রথম অধিবেশন হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ১৯০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কাশিমবাজারে। পরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন নাটোরের দিঘাপাতিয়ার রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদার শরৎকুমার রায়, খ্যাতনামা আইনজীবী ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ। অধিবেশনে তারা বরেন্দ্রভূমির পুরাকীর্তি সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।১৯১০ সালে তারা বগুড়া জেলার সঞ্জপুরে পুরাতাত্তি্বক অভিযানে যান। ওই সময় তারা ঐতিহ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য ঐকমত্য হয়ে গঠন করেন বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি। সমিতি অনুসন্ধান চালিয়ে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কালো পাথরের বিখ্যাত গস্থা মূর্তিসহ ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। সমিতির সম্পাদক রমাপ্রসাদ চন্দ প্রাপ্ত নিদর্শন, পুরাতন ভাস্কর্য, জ্ঞান ধর্ম সভ্যতার নিদর্শন এই তিন ভাগে বিভক্ত করেন। তারা তিনজন ব্যক্তিগত যে অর্থ প্রদান করেন তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। তৎকালীন সরকার বঙ্গীয় সাহিত্য সমিতিকে ১০০ টাকা হারে অনুদান দিত। এই আর্থিক অনটনের মধ্যেই সংগৃহীত নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণের জন্য একট মিউজিয়াম ভবন নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। মিউজিয়াম নির্মাণ ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল তারপরও শরৎকুমার বন্ধুদের অনুরোধে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বরেন্দ্র জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯১০ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৩ সালে। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘর উদ্বোধন করেন। ১৯১১ সালে কলকাতা জাদুঘর হঠাৎ করে দাবি করে, বরেন্দ্র জাদুঘরের যাবতীয় সংগ্রহ তাদের। ওই সময় এ জাদুঘরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার এফজে মোহনের প্রচেষ্টায় বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল বরেন্দ্র জাদুঘর পরিদর্শনে এসে সংগ্রহ দেখে মুগ্ধ হন। এরপর ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় জাদুঘরগুলোকে সংগ্রহের বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হলে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের অস্তিত্ব রক্ষা হয়।১৯১৪ সালে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ 'তারাতন্ত্রম', ১৯১৯ সালে প্রকাশিত 'ধাতু প্রদীপ', ১৯২৬ সালে প্রকাশিত 'অলংকার কৌস্তুভ' আজও রক্ষিত আছে এই জাদুঘরে। যা গবেষণার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাদুঘরটি পরিদর্শন করে ধন্য করেছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, স্যার আশুতোষ মুখ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারের অধিক। ১৯৬৪ সালে এটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে এর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিগ্রহণ করে। এবং নতুনভাবে পরিচালনা শুরু করে। তখন থেকেই জাদুঘরটি একটি পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা শুরু হয়। বরেন্দ্র জাদুঘর নানান কারণে সমৃদ্ধ। এখানে হাজার বছরের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন আছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত অসংখ্য প্রত্নতত্ত্ব এবং সহস্রাধিক পাথরের ভাস্কর্য এই জাদুঘরের অনন্য নিদর্শন যা পৃথিবীর অন্য কোনো জাদুঘরে নেই। খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে নির্মিত সূর্য মূর্তি, বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, দূর্গা-মহিষ, অর্ধনারী-শিবের মূর্তি, গঙ্গা মূর্তি বরেন্দ্র জাদুঘরের অমূল্য সম্পদ। প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহের দিক দিয়ে জাদুঘরটি অনেকবেশি সমৃদ্ধ। মোগল আমলের রৌপ্যমুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রাসহ অমূল্য শিলালেখ জাদুঘরটির বিশেষ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। পুঁথির বিশাল ভাণ্ডার (৫০০০ পুঁথির মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত এবং বাকি বাংলা পুঁথি), অষ্ট্র সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা, পালযুগ থেকে মুসলিমযুগ পর্যন্ত অংকিত চিত্রকর্ম, প্রজ্ঞা পারমিতা পুঁথিচিত্র থেকে মুঘল যুগের বিভিন্ন মিনিয়েচার, সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অলংকৃত চিত্র নিয়ে এটি সমৃদ্ধ জাদুঘর হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিতি পেয়েছে। বরেন্দ্র জাদুঘর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে একটি গ্রন্থাগার উন্মুক্ত রেখে শিক্ষানুগরী রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, পিএইচডি ও সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং লেখক, গবেষকদের গবেষণাকর্মে সহায়তা করছে এ জাদুঘর। ১৯৪৭-এর পর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর মারাত্দক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যার ফলে এটি রক্ষা ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর হস্তান্তর করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। বর্তমানে এ জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2010
(616)
-
▼
May
(64)
- চাঁপাই নবাবগঞ্জ
- Musa Ibrahim
- রেকর্ড বুকে এভারেস্ট
- ব্যান্ডউইডথ
- বিশ্বের প্রথম সাহিত্য
- নগোর্নো কারাবাখ
- নওগাঁ
- নিউজিল্যান্ড
- গরমে চুলের যত্ন
- সাধু থমাস চার্চ
- ফ্রিক ওয়েভ
- জামালপুরের নকশি কাঁথা
- প্রাচীন মেক্সিকোর রাজধানী তিয়ুতিহুয়াকান
- হাঁটা পীর হায়দার বাবা
- বারকোড
- পুরুষের স্তন সমস্যা
- হেরাসিম
- রাজা হরিশ চন্দ্রের প্রাসাদ ঢিবি
- গঙ্গাসাগর ঢাকার একমাত্র দিঘি
- দারুশিল্প
- ঢাকা
- ঝাপান খেলা
- বিজ্ঞান জাদুঘর
- মুন্সীগঞ্জ
- আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম
- বাংলার গাড়ী
- বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট
- বাংলায় জাদুঘর
- ম্যাকডোনাল্ড
- জব্বারের বলী খেলা
- রমনা পার্ক
- কলকাতার বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
- Awards of Military
- Awards of Air Force Military
- ছাই থেকে ইট
- বাংলাদেশের ঘর
- বৈজ্ঞানিক যন্ত্র
- লোহিত সাগর
- কারণ
- হায়ারোগ্লিফ
- মৎস্য বৃষ্টি
- রংপুর জেলা
- বাংলাদেশ
- সবচেয়ে বড়
- রাখাইনদের অবাক করা আদি সামগ্রী
- বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
- যাত্রা উৎসব
- মূকাভিনয়
- লাঙল
- টেরাকোটা
- অজান্তা পর্বত গুহা
- টুবু
- হাম্মাস
- নৌকা
- নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মুখানাচ
- শাঁখারিবাজারের শঙ্খশিল্প
- বাংলাদেশ
- জিব্রালটা এয়ারপোর্ট
- বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বরিশাল
- তালাকের শীর্ষে প্রেমের বিয়ে
- দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি
- কাশি প্রসাদ রায় ও তার জমিদার বাড়ি
- পাহাড়পুর
- শতরঞ্জি
-
▼
May
(64)
Wednesday, May 12, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment