রাজধানী থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক জনপদ মুন্সিগঞ্জ। এর উত্তরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, পূর্বে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলা এবং পশ্চিমে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলা। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও শীতলক্ষা এ জেলার প্রধান নদী। এ জেলার বেশিরভাগ বেড়ানোর জায়গাই প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনাকেন্দ্রিক। কড়চার এবারের বেড়ানো একদিনে মুন্সিগঞ্জ ভ্রমণ।
ইদ্রাকপুর দুর্গ
মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ইদ্রাকপুর দুর্গ। ইতিহাস থেকে জানা যায় মুঘল সুবাদার মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে পুরনো ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরের ইদ্রাকপুরে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা দুর্গের চেয়ে এটি আয়তনে কিছুটা ছোট। সে সময় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই দুর্গটি। সুরঙ্গ পথে ঢাকার লালবাগ দুর্গের সাথে এই দুর্গের সংযোগ ছিল বলে একটি জনশ্রুতি আছে। উঁচু প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গের চারকোণে রয়েছে একটি করে গোলাকার বেস্টনী। দুর্গের ভেতর থেকে শত্রুর প্রতি গোলা নিক্ষেপ করার জন্য চারদিকের দেয়ালের গায়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। বাংলাদেশে মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নির্দশন হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯০৯ সালে।
রামপাল দীঘি
জেলার রামপালে অবস্থিত। বিক্রমপুরের রাজধানী রামপালের রাজা বল্লাল সেন জনগণের পানীয় কষ্ট দূর করার জন্য এই বিশাল দীঘিটি খনন করেন। কিংবদন্তি আছে, বল্লাল সেনের মা প্রজাদের পানীয় জলের কষ্ট দূর করতে তাকে একটি দীঘি খনন করার আদেশ দেন। বল্লাল সেন মাকে আশ্বাস দেন, তিনি (মা) যতদূর হেঁটে যেতে পারবেন ততটুকু জায়গা নিয়ে দীঘি খনন করে দিবেন। পরের দিন সকালে তার মা দক্ষিণ দিকে হাঁটতে শুরু করেন। বল্লাল সেন দেখলেন তার মা অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে চলে গেছেন। তখন তার অসুস্থতার সংবাদ পাঠালে তিনি ফিরে আসেন। সেদিন বল্লাল সেনের মা যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততটুকু দীর্ঘ দীঘি খনন করেন বল্লাল সেন।
বল্লালবাড়ি
রামপাল দীঘির উত্তর পাশে অবস্থিত বল্লাল সেনের বাড়ি। এখানে ছিল বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ ও একটি পরিখা। বর্তমানে পরিখার চিহ্ন থাকলেও রাজপ্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
বাবা আদম শহীদ মসজিদ
জেলার রামপালের রেকাবি বাজার ইউনিয়নের কাজী কসবা গ্রামে অবস্থিত বাবা আদম শহীদ মসজিদ। এর কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপরের একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুলতান ফতেহ শাহ’র শাসনামলে, ১৪৮৩ সালে মালিক কাফুর মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১০.৩৫ মিটার ও ৩.৭৫ মিটার। এর দেয়াল প্রায় ২ মিটার পুরু। মসজিদের উপরে দুই সারিতে ছয়টি গম্বুজ আছে। মসজিদের পাশেই আছে বাবা আদমের সমাধি। জনশ্রুতি আছে, বল্লাল সেনের রাজত্বকালে বাবা আদম নামে একজন ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। বল্লাল সেনের নির্দেশে বাবা আদমকে হত্যা করা হলে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়।
মীরকাদিম পুল
মুন্সিগঞ্জ শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মীরকাদিম খালের ওপর নির্মিত মুঘল আমলের পুল। প্রায় ৫২.৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের এ পুলটি বেশ কয়েকবার সংস্কারের ফলে এর পুরনো রূপ এখন আর নেই। চুন-সুরকিতে তৈরি এ পুলটির সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি।
পণ্ডিতের ভিটা
সদর উপজেলার বজ্রজোগিনী ইউনিয়নের সোমপাড়ায় অবস্থিত শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের বসতভিটা। বর্তমানে এখানে থাই স্থাপত্য রীতিতে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধ বর্তমান।
শ্যাম শিদ্ধির মঠ
জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ মঠ। মঠটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের উপরের বাংলা শিলালিপি অনুযায়ী, ১৮৩৬ সালে জনৈক শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। ইট নির্মিত বর্গাকোর এ মঠের দৈর্ঘ্য ৬ মিটার এবং উঁচু প্রায় ২০ মিটার।
সোনারং জোড়া মঠ
জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি মঠ। এর বড়টি শিবের উদ্দেশ্যে এবং ছোটটি কালীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। শিব মন্দিরটি ১৮৪৩ সালে এবং কালী মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মিত। জানা যায়, রূপচন্দ্র নামক এক হিন্দু বণিক এর নির্মাতা।
পদ্মা রিজর্ট
জেলার লৌহজংয়ে পদ্মার চরের মনোরম একটি জায়গায় নির্মিত পদ্মা রিজর্ট। এখানে আছে কাঠের তৈরি ষোলোটি কটেজ। পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে থাকা-খাওয়ারও সুব্যবস্থা আছে। এখানকার রেস্তোরাঁটির খাবার মানও ভালো। কটেজে অবস্থান না করতে চাইলে শুধু জায়গাটি বেড়িয়ে আসা যায়। পদ্মা রিজর্টের আগাম বুকিং দেয়া যাবে এই নম্বরে ০১৭১৩০৩৩০৪৯।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও জলপথে মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান ও বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশ থেকে নয়ন পরিবহন, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট ছাড়াও বেশ কিছু বাস মুন্সিগঞ্জ যায়। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। এছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে ছোট ছোট কিছু লঞ্চ, চাঁদপুরগামী সব বড় লঞ্চই মুন্সিগঞ্জ কাঠপট্টি স্টেশনে থামে। ভাড়া ১৫-২০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে দিনে দিনে মুন্সিগঞ্জ ভ্রমণ শেষ করে ফিরে আসা সম্ভব। তাছাড়া জেলাশহরে থাকার সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। শহরের দু-একটি হোটেল হলো- হোটেল থ্রি স্টার (০১৭১৫৬৬৫৮২৯, ০১৭১৫১৭৭৭১৬) এবং হোটেল কমফোর্ট। এসব হোটেল ১৫০-৬০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে। ভ্রমণে গেলে মুন্সিগঞ্জের জায়গাগুলো দেখে সবশেষে পদ্মা রিজর্টে (০১৭১৩০৩৩০৪৯) এসে থাকলে ভালো লাগবে।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2010
(616)
-
▼
May
(64)
- চাঁপাই নবাবগঞ্জ
- Musa Ibrahim
- রেকর্ড বুকে এভারেস্ট
- ব্যান্ডউইডথ
- বিশ্বের প্রথম সাহিত্য
- নগোর্নো কারাবাখ
- নওগাঁ
- নিউজিল্যান্ড
- গরমে চুলের যত্ন
- সাধু থমাস চার্চ
- ফ্রিক ওয়েভ
- জামালপুরের নকশি কাঁথা
- প্রাচীন মেক্সিকোর রাজধানী তিয়ুতিহুয়াকান
- হাঁটা পীর হায়দার বাবা
- বারকোড
- পুরুষের স্তন সমস্যা
- হেরাসিম
- রাজা হরিশ চন্দ্রের প্রাসাদ ঢিবি
- গঙ্গাসাগর ঢাকার একমাত্র দিঘি
- দারুশিল্প
- ঢাকা
- ঝাপান খেলা
- বিজ্ঞান জাদুঘর
- মুন্সীগঞ্জ
- আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম
- বাংলার গাড়ী
- বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট
- বাংলায় জাদুঘর
- ম্যাকডোনাল্ড
- জব্বারের বলী খেলা
- রমনা পার্ক
- কলকাতার বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
- Awards of Military
- Awards of Air Force Military
- ছাই থেকে ইট
- বাংলাদেশের ঘর
- বৈজ্ঞানিক যন্ত্র
- লোহিত সাগর
- কারণ
- হায়ারোগ্লিফ
- মৎস্য বৃষ্টি
- রংপুর জেলা
- বাংলাদেশ
- সবচেয়ে বড়
- রাখাইনদের অবাক করা আদি সামগ্রী
- বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
- যাত্রা উৎসব
- মূকাভিনয়
- লাঙল
- টেরাকোটা
- অজান্তা পর্বত গুহা
- টুবু
- হাম্মাস
- নৌকা
- নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মুখানাচ
- শাঁখারিবাজারের শঙ্খশিল্প
- বাংলাদেশ
- জিব্রালটা এয়ারপোর্ট
- বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বরিশাল
- তালাকের শীর্ষে প্রেমের বিয়ে
- দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি
- কাশি প্রসাদ রায় ও তার জমিদার বাড়ি
- পাহাড়পুর
- শতরঞ্জি
-
▼
May
(64)
Monday, May 17, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment