আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের সবচেয়ে প্রাচীন জাতি বুশম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, লেসেথো ছাড়াও জিম্বাবুয়ে, জিবুতি ও রুয়ান্ডায় এদের বসতি রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশে বিভিন্ন নামে এদের সম্বোধন করা হয়। রুয়ান্ডার সাধারণ জনগণ এদের বুশম্যান, সো, বাসারওয়াহ, ক্যাং ইত্যাদি নামে সম্বোধন করে। বুশম্যানদের বিভিন্ন নামে ডাকার কারণ হিসেবে বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও বিশ্বাসযোগ্য মতবাদ হলো_ এই জাতি শিকার সংগ্রহ করে প্রাচীনকাল থেকেই জীবনযাপন করে আসছে। তারা যখন বনে-জঙ্গলে দলবেঁধে শিকার করতে যেত তখন একে অন্যকে নানা নামে সম্বোধন করত । মূলত ওই নানা নাম থেকেই স্যান, সো ও বুশম্যান নামের উৎপত্তি। বুশম্যানরা আফ্রিকা মহাদেশের প্রাচীন জাতি হলেও এরা অন্য সাধারণ মানুষের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা কম ভোগ করে থাকে। আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে এ জাতি শুধু আফ্রিকা মহাদেশে নয়, অন্যান্য মহাদেশের অনেক জাতির চেয়ে অধিকতর প্রাচীন। নামিবিয়াতে যেসব বুশম্যান বসবাস করে তাদের গায়ের রং কালো, নাক চ্যাপটা, উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। নামিবিয়ার বুশম্যানরা যখন শিকারে যায় তখন তারা স্যান ভাষা ব্যবহার করে। তবে মজার ব্যাপার হলো স্যান ভাষা বুশম্যানরা ছাড়া অন্য কোনো জাতি সহজে বুঝতে পারে না। ১৯৯৬ সালে নামিবিয়া সরকার স্যান ভাষা বুশম্যানদের জন্য স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। বতসোয়ানা ও লেসেথোর বুশম্যানরা নামিবিয়ার বুশম্যানদের চেয়ে একটু ফর্সা, উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি তবে তারা শিকার করার সময় 'নামা' ভাষা ব্যবহার করে, যা বতসোয়ানা ও লেসেথোর অন্য জনগণও বুঝতে পারে। শিক্ষা-দীক্ষায়, চলন-বলনে আফ্রিকার অন্য জাতির চেয়ে বুশম্যানরা অনেক পিছিয়ে। পোশাক-পরিচ্ছেদ হিসেবে এখনো অনেক বুশম্যান গাছের পাতায় তৈরি জামা-কাপড় পরিধান করে, তবে প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে বুশম্যানরাই সবচেয়ে এগিয়ে। ১৯৯০ সালের দিকে নামিবিয়া সরকারের সঙ্গে হাজার বছরের প্রাচীন জাতি বুশম্যানদের জাতিগত দাঙ্গা হয়। দাঙ্গায় বুশম্যানদের বেশি ক্ষতি হলেও অধিকার রক্ষায় সফল হয়। ২০০৬ সালের পর থেকে আজ অবধি জাতিসংঘ বুশম্যানদের সভ্য জাতিতে পরিণত করার কাজ করে চলছে।
-মো. রিয়াজুল ইসলাম
0 comments:
Post a Comment