Tuesday, October 19, 2010

ত্বকের যত্নে ভেষজ উপাদান

1 comments
এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষ ত্বকের যত্নের ব্যাপারে খুব একটা সচেতন ছিল না। পুরুষরা তো নয়ই এমনকি নারীরাও। কিন্তু যুগ যত আধুনিক হচ্ছে, ততই মানুষ সচেতন হচ্ছে তাদের ত্বকের ব্যাপারে। সর্বোপরি রূপচর্চার ব্যাপারে। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, রূপচর্চা বলতে এখনও অনেকেই বুঝে থাকেন বাজারে বিক্রিত বিভিন্ন কোম্পানির রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারকে। কিন্তু এসব দ্রব্য তথা কসমেটিক্স সাময়িকভাবে ত্বককে সুন্দর করলেও পরবতর্ীতে কতটা ক্ষতি করে, এটা অনেকেরই জানা নেই। অথচ একটু মনোযোগী হলেই এমন একটি দ্রব্য দিয়ে রূপচর্চা করা যায়, যা ত্বকের কোনরকম ক্ষতি করে না। এই দ্রব্যটির নাম ভেষজ। অর্থাৎ ভেষজ উপকরণ বা উপাদান। ভেষজ উপাদান দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা, বিশেষ করে ত্বকের যত্ন নিতে হয়, এটা জানা নেই অনেকেরই। রূপবিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে তেমনি কিছু পদ্ধতি এখানে জানিয়ে দেওয়া হলো_

টোনার

অনেকের ত্বকই অতি মাত্রায় তৈলাক্ত। ত্বকের এই তৈলাক্তভাব দূর করতে হলে, যে পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা জরুরি, সেটি হলো টোনার। টোনার ত্বকের তৈলাক্তভাব ততটা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে, যতটা ত্বকের জন্যে দরকারি। তৈলাক্ত ত্বকের জন্যে তেঁতুলের জুস, মধু ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কমলার রস এবং দুধ মেশালেও ভালো টোনারের কাজ করে। আর এটি শুধু তৈলাক্ত ত্বকের জন্যেই না, মিশ্র-ত্বকের জন্যেও কাজ করে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সতর্কতা_ সেটি হলো, টোনার বেশি সময় ধরে ত্বকে রাখা যাবে না। তাহলে ত্বকের ক্ষতি হবে। এমনও হতে পারে, ত্বক অতি মাত্রায় রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।

ক্লিনজিং

শুধু তৈলাক্ত ত্বক কিংবা রুক্ষ ত্বকই নয়, সব ধরনের ত্বকের জন্যেই ক্লিনজিং মানানসই এবং উপকারী। ক্লিনজিং পদ্ধতিতে আপনি নানা উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। যেমন ছোলার ডালের গুঁড়ার সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। অনেকের ত্বকই এমন হয়ে যায় যে, মনে হয় রোদে পুড়ে গেছে। রোদেপোড়াভাব দূর করতে হলে ব্যবহার করতে পারেন টকদই এবং গোলাপজল। গোলাপজলে টকদই ছেঁকে মিশিয়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। আমলকির পেস্টও সব ধরনের ত্বকের জন্যে ক্লিনজিংয়ের কাজ করে। মুলতানি মাটির গুঁড়া এবং গোলাপজল একসঙ্গে ডিপ-ক্লিনজিংয়ের কাজ করে। এটা শুকানো পর্যন্ত রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। শুকানো পর্যনত রাখতে হবে এই জন্যে, যেহেতু শুকানোর আগে ধুয়ে ফেললে ভেতর থেকে ময়লা পরিষ্কার হয় না। তৈলাক্ত ত্বকে শসার রসও মেশানো যেতে পারে। এতে ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক হবে আরো কোমল এবং সুন্দর।

স্ক্রাব

স্ক্রাব সবচেয়ে, যে প্রয়োজনীয় কাজটি করে থাকে তা হলো, এটি ত্বক থেকে মৃতকোষ দূর করে। স্ক্রাব কিভাবে তৈরি করবেন? জি্ব, জানিয়ে দিচ্ছি। চালের গুঁড়া, শসা অথবা গাজরের রস ও টকদই তৈলাক্ত এবং মিশ্র ত্বকের জন্যে স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে, টকদইয়ের ক্ষেত্রে দুধ ব্যবহার করবেন। এছাড়া মুলতানি মাটি ও শসা বা গাজরের রসের মিশ্রণও ভালো স্ক্রাবের কাজ করে। স্ক্রাব করতে হবে সাত থেকে দশ দিন পর পর।

ময়েশ্চারাইজার

উপরোক্ত শব্দগুলো সবার কাছে পরিচিত না হলেও ময়েশ্চারাইজার শব্দটি সবার কাছেই পরিচিত। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বকে মসৃণভাব আনতে ময়েশ্চারাইজারের কোনো বিকল্প নেই। গিস্নসারিন, জনসন ওয়েল বা নারকেল তেল অথবা অলিভ ওয়েলের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে ময়েশ্চারাইজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তৈলাক্ত ত্বকে আর তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। তেলের পরিবর্তে লেবু ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

কিছু প্রয়োজনীয় ভেষজ উপাদান

কিছু ভেষজ উপাদান সব সময়ের জন্যেই প্রয়োজনীয়। যেমন_

হলুদ : হলুদ ত্বকের জীবানু নাশ করতে সহায়তা করে। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।

মধু : মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্যেই মধু দরকারি। তবে ত্বকের জন্যে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। মধু ত্বককে সতেজ এবং পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি রাখে জীবানুমুক্ত।

লবণ : লবণ এমনিতে কিছুরোগীর জন্যে ক্ষতিকর হলেও যাদের ত্বকে সমস্যা আছে, তাদের জন্যে বেশ উপকারি। কারণ লবণ ত্বকের মৃতকোষ বের করে আনতে সহায়তা করে।

লেবু : ত্বকে এসিডের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে লেবু কাজ করে থাকে।

জায়ফল : মুখের ব্রণের দাগ দূর করতে জায়ফলের কোনো জুড়ি নেই।

কিছু টিপস

শুষ্ক ত্বকে মাস্ক হিসেবে সপ্তাহে একদিন তিল ও সাদা সরষে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ করে পানিতে গুলিয়ে ত্বকে ১৫ থেকে ২০মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে প্রতিদিন ময়দা, মধু ও দুধ মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে চাইলে সপ্তাহে একদিন আলুসেদ্ধ ব্যবহার করতে পারেন। হলুদ, টকদই এবং লেবুর রসের মিশ্রণ প্রতিদিন একবার করে ত্বকে লাগাতে পারেন। অনেকের ত্বকেই এলার্জি থাকে। যাদের ত্বকে এলার্জি আছে তারা এসব উপাদান ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। নইলে সমস্যা হতে পারে।

1 comments:

Post a Comment