Saturday, October 30, 2010

রুশ বিপ্লব

0 comments
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আলোড়ন ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলছিল। ফরাসি দেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইংল্যান্ডে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রচলন হয়। সামন্ততান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণীর পতন ঘটতে থাকে এবং শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নতুন শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয়। কিন্তু রুশ দেশ তখনও প্রাচীন যুগে বাস করতে থাকে_ রুশীয় সম্রাট বা জারদের স্বেচ্ছাচারী শাসনাধীনে পড়ে থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী না থাকায় রাশিয়ায় শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হয়_ ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। রুশ পুঁজিপতিরা বিদেশি মূলধন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন শ্রমিকদের মজুরি কেটে। তাতে শ্রমিকদের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। শ্রমিকদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এমনকি দুরবস্থার সামান্যতম সংস্কার সাধনেরও কোনো উপায় তাদের হাতে ছিল না। রুশ সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাস যার রাজত্বকালে বিপ্লব সংঘটিত হয়। তিনি রাজাদের স্বর্গীয় অধিকারে বিশ্বাস করতেন। সর্বেসর্বাভাবে রাজ্য শাসন করা তার পবিত্র কর্তব্য বলে তিনি মনে করতেন। একমাত্র অভিজাত শ্রেণী এবং উচ্চশ্রেণীর ধর্মীয় যাজকরাই তাকে সমর্থন করতেন। বিরাট রুশ সাম্রাজ্যের বাকি সব লোকই তার বিরুদ্ধবাদী ছিল। জাররা যে আমলাতন্ত্র গড়ে তোলেন তা ছিল মাথা ভারী, অনমনীয় এবং অকর্ম্য। কারণ তাদের কোনো যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো না। তাদের দেওয়া হতো বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীর মধ্য থেকে। রুশীয় জারদের ইউরোপ ও এশিয়াব্যাপী বিরাট সাম্রাজ্য ছিল। এসব রুশ সাম্রাজ্যভুক্ত দেশের জনসাধারণের ওপর তারা রুশ ভাষা চাপিয়ে দেয় এবং তাদের সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে তাদের বিরোধ ঘটে। নিপীড়িত শ্রমিক ও কৃষকশ্রেণী সমাজবাদী নীতি সম্পর্কিত মার্কসের শিক্ষা থেকে উদ্দীপনা লাভ করে। তারা ১৯১৭ সালে তখনকার শাসক জার দ্বিতীয় নিকোলাসের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ফলে জারের শাসনতন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। কারণ যে সৈন্য বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয় তারাই গুলি করতে অস্বীকার করে। বরং তারা বিদ্রোহী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেয়। ১৯১৭ সালের ১২ মার্চ রাশিয়ায় তখনকার রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ বিপ্লবীরা দখল করে। এরপর তারা মস্কো দখল করে। জার সিংহাসন ত্যাগ করে এবং লেনিন রাশিয়ার শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে রুশ গগনে উদীয়মান হন। তার নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি যুদ্ধের অবসানের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি ঘোষণাসহ জমি কৃষকদের হাতে হস্তান্তর করে। এ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় শ্রমজীবী শ্রেণীর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলস্বরূপ কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া অত্যাশ্চর্য প্রগতি অর্জন করে! পুরনো সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে ওঠে। এ নতুন সমাজের সবাই স্বাধীন, সমান এবং ন্যায্য মজুরির অধিকারী।



প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment