Monday, October 18, 2010

বরফ মানব রহস্য

0 comments
আল্পস পর্বতেই পাওয়া গিয়েছিল বরফ মানবের সন্ধান। ৫ হাজার বছর আগের বরফ মানবের জিনোম আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান যুগের মানুষের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের হদিস মিলবে। বিজ্ঞানীদের আশা, জটিল সব রোগের উদ্ভবের কারণও জানা যাবে এর ফলে। ২০ বছর আগের কথা। আল্পসে উঠছিলেন দুই জার্মান হেলমুট আর এরিকা সিমন। হঠাৎ সেখানে এক আদি মানবের সন্ধান পান তারা। অবশ্য জীবন্ত নয়, একটি মমি। সেটিই বরফ মানব। এই অজানাকে জানার চেষ্টার শুরু সেখানেই। হিসাব করে বের করা হলো, আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে এই বিশ্বেই চলাফেরা ছিল বরফ মানবের। হোমো স্যাপিয়ন্সের মানে বর্তমান মানবের নিকটতম আদি পুরুষের অন্যতম তারা। গত সপ্তাহে জানানো হলো, বরফ মানবের সৃষ্টি রহস্যের তথ্য জানা গেছে। তার মানে হচ্ছে, তাদের জিনোম আবিষ্কার হয়েছে, কাজ চলছে জেনেটিক ম্যাপ তৈরির। কাজটি করছেন জার্মানি আর ইতালির একদল গবেষক। তারা আশাবাদী, বরফ মানব শুধু নিজেদের রহস্যই খুলবে না, বর্তমান মানবের সঙ্গে তাদের ছিন্ন সূত্র জোড়াও লাগিয়ে দিবে।

১৯৯১ সালে বরফ মানবের সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তা ব্যস্ত রেখেছে বিজ্ঞানীদের। বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। জোগাড় করা হয় বরফ মানবের ব্যবহার করা বিভিন্ন উপকরণ। অন্যদিকে কী জানা গেল, তা শুনতে আগ্রহী ছিল অনেকে। যা নিয়ে বলছিলেন গবেষক আলবার্ট জিংক। তার কথায়, 'দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছে বরফ মানব নিয়ে, তাই অনেকে জানতে চাচ্ছিল, আমরা কী কী পেয়েছি। এ কৌতূহল অস্বাভাবিক নয় মোটেই।' বরফ মানবের মমিটি রয়েছে ইতালির উত্তরাঞ্চলের দক্ষিণ টিরলের প্রত্নতাত্তি্বক জাদুঘরে। বরফ মানবের মমিটি রয়েছে ইতালির উত্তরাঞ্চলের এ প্রত্নতাত্তি্বক জাদুঘরে। আর এ জাদুঘরটি যে প্রতিষ্ঠানের সেই 'ইনস্টিটিউট ফর মমি অ্যান্ড দি আইসম্যান'-এর প্রধানের দায়িত্বে আছেন জিংক। ইতালির ইউরোপিয়ান একাডেমি অব বোজেনের কর্মকর্তাও তিনি। তিনি বললেন, 'গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এই যে বরফ মানবের জিনোম আবিষ্কারের পরের ধাপ কী? এখন আমাদের আরো রহস্যের জট খুলতে হবে। উত্তর খুঁজতে হবে অনেক প্রশ্নের। তার মানে হলো, কাজ বেড়ে গেল এবং তা গুরুত্বপূর্ণও। তবে তা মনে করতেই আমার ভালো লাগছে।' জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করা মানে হলো, বিজ্ঞানীরা এখন বরফ মানবের জিনগত বৈশিষ্ট্যের নকশা পেয়ে গেলেন। এই নকশা আলাদা হওয়ার কারণেই প্রত্যেকটি জীব দেখতে আলাদা, তাদের আচরণ আলাদা। আধুনিক মানবের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে। এরপর বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জিনোম আবিষ্কারের ঘোষণা থেকেই আসছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলো বরফ মানব। এর পেছনে শ্রম দেওয়ার প্রসঙ্গ সম্পর্কে জিংক বললেন, 'আমরা দেখতে চাই, বিবর্তনের কোন ধাপে, কীভাবে বরফ মানব এলো। তারা কী এমন কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়েছিল, যা কোনো রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমরা জানতে চাই, তাদের খাদ্যাভাস কেমন ছিল, তারা কি দুধ হজম করতে পারত। তাদের বিবর্তনের ধাপগুলো জানতে এসব প্রশ্নের উত্তর মেলা জরুরি।' বরফ মানবের জিনোম বিশ্লেষণে এক সময় উঠেপড়ে লেগেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যানি স্টোন। তখন তিনি শিক্ষার্থী ছিলেন, এখন শিক্ষক। অ্যানি যে সময়টাতে কাজ করেছিলেন, তখন জিনোম সিকোয়েন্স বের করা ছিল অনেক কঠিন। কারণ এখনকার মতো প্রযুক্তি পাওয়া তখন সহজ ছিল না। তাই সফল হতে পারেননি অ্যানি। এখন জিনোম আবিষ্কারের খবরে তিনিও খুশি। তবে আশাবাদী জিংক। তিনি মনে করছেন, একটি নমুনা থেকেও মিলতে পারে অনেক প্রশ্নের উত্তর। ডায়াবেটিসের মতো রোগ কীভাবে এলো, তার কারণও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন জিংক। তা হলে এ রোগের নিরাময় অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। জিংক বলছেন, হয়তো দেখা যাবে আলপাইন অঞ্চলের মানুষ এখনো বরফ মানবের ডিএনএ'র কিছু বৈশিষ্ট্য ধারণ করছেন। তাহলে সেটা হবে বিজ্ঞানীদের জন্য একটা দারুণ খবর। জিংক আরো জানান, 'এটা খুবই মজার হবে যে, এ বরফ মানবের জিনের সঙ্গে যদি অপেক্ষাকৃত দূরের অন্য কোনো আদি মানবের জিনের সমরূপ মিলে। এমনও হতে পারে ওই জিনের কিছু গঠনবৈশিষ্ট্য বর্তমান যুগেও পরিবাহিত হচ্ছে।' সৃষ্টি রহস্য আবিষ্কার হয়েছে। এখন চলছে জেনেটিক ম্যাপ তৈরির কাজ। এতে হাত লাগিয়েছেন হাইডেলব্যার্গের জিনতাত্তি্বক আন্দ্রেয়াস কেলারও।



-আমিন রহমান নবাব

0 comments:

Post a Comment