Monday, October 18, 2010

সিংহবাড়ি, সিলেট

0 comments
প্রকৃতির নিপুণ হাতে সাজানো সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে মুগ্ধতার পরশ তিনি তার কবিতায়ও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কবিতায় সিলেটকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন 'সুন্দরী শ্রীভূমি' হিসেবে। তবে ভালোবাসার সে শ্রীভূমিতে কবিগুরু স্মৃতিচিহ্নগুলো ভালো নেই। হারিয়ে যেতে বসেছে কবির স্মৃতিমাখা স্থাপনাগুলো। আর যেসব স্থানে এখনো বিশ্বকবির স্মৃতিচিহ্ন টিকে আছে তাও পড়ে আছে অনাদরে। কবি ১৯১৯ সালে শিলং থেকে রেলপথে সিলেট আসেন। সিলেটে তিনি আন্তরিকভাবে অভ্যর্থিত হন। কবি সিলেট শহরের চৌহাট্টাস্থ গোবিন্দ সিংহের বাসভবনে (বর্তমানে এটি সিংহবাড়ি হিসেবে পরিচিত) অতিথি হিসেবে ওঠেন। আর নয়াসড়কে অবস্থিত মিশনারি বাংলোয় তার থাকার ব্যবস্থা হয়। সিংহ বাড়িটিতে এখনো বসবাস করছেন গোবিন্দ সিংহের উত্তরসূরিরা। তবে তাদের উচ্ছেদ করে বাড়িটি দখলেরও চক্রান্ত করছে একটি মহল। বিগত জোট সরকার আমলে এ বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি উল্লেখ করে একটি প্রভাবশালী মহলকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে আন্দোলনের মুখে পরে বন্দোবস্ত বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্য সচিব লোকমান আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিংহ বাড়িটি সিলেটের ঐতিহ্য। আন্দোলনের মুখে বাড়িটির বন্দোবস্ত বাতিল হলেও এখনো মহলবিশেষ এ বাড়ি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। অপরদিকে নয়াসড়কের মিশনারি বাংলোটির অস্তিত্বই এখন নেই। খ্রিস্টান মিশনারি নেতারা বাংলোসহ ওই জায়গাটি অনেকটা গোপনে বিক্রি করে দেন জামায়াত নেতাদের কাছে। বর্তমানে ওই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 'ছোট বাংলো' হিসেবে পরিচিত মিশনারির ওই বাংলোকে সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ দাবি করে সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনড ট্রাস্টের সাবেক সেক্রেটারি রবীন জওহর দাস বলেন, অর্থলিপ্সু কতিপয় নেতার কারণে ঐতিহ্যবাহী এ বাংলো বিলুপ্ত হয়েছে। ওই বাংলোতে শুধু রবীন্দ্র নাথ নন, মহাত্মা গান্ধীও রাত যাপন করেছেন। ওই বাংলোতে বসেই সিলেটকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

বাঙালিকে বিশ্বসভায় পরিচয় করিয়ে দেওয়া কবিগুরুর পদচিহ্ন পড়েছিল সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজেও। সেখানে তিনি বক্তব্যও দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া তার সে বক্তব্য 'আকাক্সক্ষা' নামে পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তার এ বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েই সেদিনের ছাত্র-সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী কবির সানি্নধ্য পেতে ঠিকানা গাড়েন শান্তিনিকেতনে। কিন্তু রবীন্দ্র নাথের এ স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো চেষ্টাই নেওয়া হয়নি পরবর্তীকালে। রবীন্দ্রনাথের মন কেড়েছিল সিলেটের মণিপুরী নৃত্যও। নগরীর মাছিমপুরের মণিপুরী পল্লীতে মণ্ডপে বসে রাসনৃত্য দেখেছিলেন তিনি। সে নৃত্যে তিনি এতটাই মজেছিলেন যে, পরে শান্তিনিকেতনেও এর প্রবর্তন করেন। অন্যান্য স্মৃতির মতো অনাদরে পড়ে আছে রবীন্দ্র স্মৃতিমাখা এ মন্দিরটি।



-শাহ দিদার আলম, সিলেট

0 comments:

Post a Comment