ওপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা আর এপাশে বাংলাদেশের জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা। সীমান্ত ঘেঁষা বকশীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছবির মতো গারো পাহাড়ের সারি, বনভূমি মানুষকে আকৃষ্ট করেছে সবসময়। গারো আদিবাসীদের পাহাড়ি গ্রাম, বনভূমি, পাহাড়-টিলা, পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝরনাধারা, পাখির কলকাকলী আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজসব মিলিয়ে নিঃসর্গ সুন্দরের অপূর্ব এক বিশাল ক্যানভাস। লাউচাপড়া পিকনিক স্পট। ভ্রমণপিয়াসী যারা তাদের মায়াবী ডাকে টানবেই এই পাহাড়ভূমি। প্রকৃতি, আলো-হাওয়া, সুন্দরের টানে যারা বেড়াতে ভালোবাসেন তারা নির্দি্বধায় চলে আসতে পারেন এখানে।
জামালপুর জেলা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলা। বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পাকা রাস্তায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে এগুলেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিশাল পাহাড়ি এলাকা। গারো পাহাড়। এলাকাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। পুরো পাহাড় আর বনভূমি লাউচাপড়া এবং ডুমুরতলা এ দুটি মৌজায় বিভক্ত।
এ দুটি মৌজায় গারো পাহাড়ের ভাঁজে-ভাঁজে অবস্থিত লাউচাপড়া, দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানীপাড়া, পলাশতলা, মেঘাদল, শুকনাথপাড়া, গারোপাড়া, বালিজোড়া, সোমনাথপাড়া ও বাবলাকোনা গ্রামে বাস করে প্রায় ৭০০ গারো, কোচ, হাজং আদিবাসী পরিবার। সব মিলিয়ে এ গ্রামগুলোতে আদিবাসী লোকসংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।
প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গ্রামগুলো। বন, পাহাড়, পাথর, ঝরনা আর আদিবাসীদের নিজেদের মতো জীবনযাপন সব দেখতে আর নগর কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে ডুবে যেতে মানুষ আসে এখানে। আকণ্ঠ উপভোগ করে সবুজ-সুন্দর দৃশ্য। এ সুন্দরের টানে শীত মৌসুমে এখানে ছুটে আসে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। শীত মৌসুমে লাউচাপড়া হয়ে ওঠে পিকনিক স্পট। ভ্রমণপিয়াসী আর পিকনিক করতে আসা অসংখ্য মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে নির্জন নিভৃত এ অঞ্চলটি।
পর্যটকদের কথা ভেবে জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে ২৬ একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে পিকনিক স্পট 'ক্ষণিকা'। গারো পাহাড়ের ১৫০ ফুট চূড়ায় 'ক্ষণিকা' পিকনিট স্পটে নির্মাণ করা হয়েছে ৬০ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠলেই এক লাফে চোখের সামনে চলে আসবে দিগন্ত বিস্তৃত সারি সারি সবুজ পাহাড়-টিলা। চোখে পড়বে সীমান্তের ওপারের মেঘালয় রাজ্যের সুবিস্তৃত পাহাড় ছাড়াও তুরা জেলার পাহাড়ি ছোট্ট শহর মহেন্দ্রগঞ্জ। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল পাহাড়ি শহর মহেন্দ্রগঞ্জ। এছাড়া পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে বেশকটি মিনি টাওয়ার।
লাউচাপড়ার সৌন্দর্যের টানে শীত মৌসুমে শত শত মানুষ আসে এখানে পিকনিক করতে। ভ্রমণপিয়াসী মানুষের আবাস নিশ্চিত করতে 'ক্ষণিকা' পিকনিক স্পটের পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল টুরিস্ট কমপ্লেক্স 'বনফুল'।
সব মিলিয়ে গারো পাহাড়ঘেরা লাউচাপড়া একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে আরো বিস্তৃত হতে পারে এমন কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সবুজে ঘেরা গারো পাহাড়ের নিবিড় পরিবেশ সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষকে মুগ্ধ করবেই। আরো আবাসন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে লাউচাপড়া।
-সফিক জামান, জামালপুর
0 comments:
Post a Comment