ঝিনাইদহ শহরের পার্শ্ববর্তী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ৫২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ঢোলসমুদ্র দিঘি। রহস্যময় এ দিঘিটি নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। লোকশ্রুতিতে জানা গেছে, এখানে মুকুট রায় নামে এক রাজা বাস করতেন। তার রাজত্বকালে একবার পানির কষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাঁওড়, নদী, দিঘি কোথাও পানি ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দিঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিনরাত পরিশ্রমে দিঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিন্তু পুকুরে পানি উঠল না। হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রানি যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে পানি উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রানী পূজার নৈর্বেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রানী পুকুরের তলদেশে উপস্থিত হয়ে ইস্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো। প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রানী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উত্থিত হলো। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনা করতে থাকল। এরমধ্যে রাজা মুকুট রায় বাড়িবাথানের যুদ্ধে নবাব ও পাঠান সৈন্য বাহিনীর কাছে পরাজয়বরণ করেন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মুকুট রায়ের পরিচয় জেনে নবাব মুক্তি দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে রাজার পরিবারের সদস্যরা রাজার নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে সবাই দিঘির পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। মুকুট রায়ও ফিরে এসে শুনতে পান পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করেছে। তিনিও ওই একই কায়দায় দিঘির পানিতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মুকুট রাজার রাজত্বে জলকষ্টের অভাব দেখা দিলে তিনি একটি দিঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যে সময়ে দিঘিটি খনন সম্পন্ন হয় ঠিক ওই সময়ে পুকুরের তলদেশ হতে বিশাল স্রোতে পানি উঠতে থাকে। পানি উঠার দৃশ্য রাজা ও পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে দেখতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান। এমনকি তাদের লাশ পর্যন্ত প্রজারা খুঁজে পায়নি এবং কিছুকাল স্থানীয় লোকজন দিঘির পানিতে থালা-বাসন ও সোনাদানা পেত। পরবর্তী সময়ে একজনের দেওয়া জিনিস আরেক জন চুরি করায় তা পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । সেই স্মৃতি স্মরণে আজো লোকজন এ দিঘিকে ঢোলসমুদ্র দিঘি বলে জানে।
শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ
0 comments:
Post a Comment