প্রকৃতির সাজানো বিচিত্র আর অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ-রহস্যে ঘেরা কাপাসিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ব-দ্বীপের মতো জেগে ওঠা 'ধাঁধারচর'। শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা ধাঁধারচরের চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ধাঁধারচরটি প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বৃক্ষরাজিতে ভরা সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা সবুজে ঘেরা। বর্ষাকালে নদীর বিশাল ঢেউ দেখলে মনে হয় এ যেন আরেক সমুদ্র সৈকত। বর্ষাকালে শুধু এই ঢেউ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে সমুদ্রপিপাসু পর্যটকরা। হারিয়ে ফেলতে চায় নিজেকে এই ঢেউয়ের মাঝে। কয়েক শত বছর পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদীর বুকে জেগে ওঠা এই চর নিয়ে নদীর দুইপাড়ের লোকজনের মধ্যে দখল নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়া-বিবাদ হতো। ঝগড়ার কারণে মোগল সরকারের আমলে নদীর স্রোতের মধ্যে কলসি ভাসিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করে। কলসিটি যে পাড়ে যাবে সেই পাড় এলাকার দখলে চর থাকবে। তখন নদীর স্রোতের সময় একটি কলসি ভাসিয়ে দিলে কলসিটি কাপাসিয়া এলাকায় অর্থাৎ চরের পশ্চিম পাড়ে এসে ভিড়ে। তারপর থেকেই ধাঁধারচরটি কাপাসিয়া উপজেলা এলাকার দখলে আছে। সবুজে ঘেরা চরটিতে রয়েছে বড় বড় পেয়ারার বাগান, আমগাছ, কাঁঠাল গাছ, কলাবাগান ও ফসলি ক্ষেত। চরে প্রচুর ইরি-বোরো ধান হয়। তবে ধাঁধারচরটির জন্ম কত সালে এটা কেউ সঠিক করে বলতে পারে না। এখানকার বয়স্কদের কাছ থেকে জানা যায় যে, ব্রিটিশ আমলেই এর নাম রাখা হয় ধাঁধারচর। ধাঁধারচরে রয়েছে কাশফুলের বাগান, বাতাসে দুল খাওয়া কাশফুলগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে মনের সব গ্লানিকে ধুয়ে-মুছে দিতে। এ যেন এক মমতাময়ী নারীর ছোঁয়া। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে মনে হয় কারা যেন দলবেঁধে গান করছে। যে কেউ পাখিদের এই গান শুনলে ইচ্ছা করবে তারও পাখিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গান গাইতে এবং উড়ে বেড়াতে চাইবে চরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ধাঁধারচরটি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার খেয়াঘাট হতে মাত্র ২ মিনিট শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে নৌকাযোগে যেতে হয়। ঢাকার খুবই কাছে এই সবুজে ঘেরা লীলাভূমি। ঢাকা থেকে সড়কপথে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সড়কপথে ঢাকা থেকে মাত্র ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময়ে এখানে পৌঁছানো যায়। সড়কপথে ঢাকার গুলিস্থান থেকে রানীগঞ্জগামী গাড়িতে অথবা মহাখালী এসে ভাওয়াল, সম্রাট, জলসিঁড়ি, এগারসিন্দুর, ঢাকা পরিবহন অথবা গাজীপুর চৌরাস্তা হতে রাজদূত, মাধুলী পরিবহনে কাপাসিয়া হয়ে রানীগঞ্জ বাজারে যেকোনো গাড়িতে উঠে মাত্র ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে অনায়াসে পৌঁছা যায়। রানীগঞ্জ বাজারের ঘাটে অনেক ট্রলার অপেক্ষা করে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে চরে পেঁৗছে দেওয়ার জন্য। তবে এই সুন্দরতম স্থানকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কেউ তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার এই চর পরিদর্শন করেছে। এতে পর্যটন কেন্দ্র করলে দেশ লাভবান হবে। চর ও কাপাসিয়া উপজেলাবাসী ধাঁধারচরটিকে গ্রামীণ পর্যটনের আওতায় নিয়ে দেশের পর্যটনশিল্পে বিপ্লব ঘটাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
-শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, কাপাসিয়া
0 comments:
Post a Comment