ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের চিড়িয়াখানা। সেখানে এক পেঙ্গুইন দম্পতির বাস। একেবারে প্রেমিক দম্পতি যাকে বলে। ছ’বছর ধরে তারা একসাথে আছে। তাদের আলাদা করাই মুশকিল। এরা একে অন্যের গলা জড়িয়ে ধরে রাখে। এক সাথে গলা ছেড়ে ডেকে উঠে। আর শারীরিক যৌনসম্পর্ক তো আছেই। একটি দিকেই কেবল ব্যতিক্রম- এই পেঙ্গুইন দম্পতির দুজনেই পুরুষ। চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে যখন বুঝলেন তখন তো তাদের আক্কেল গুরুম। কার ভুলে প্রথম থেকেই এই পুরুষ পেঙ্গুইন দুটোকে এক সাথে রাখা হয়েছিল কে জানে। তবে এই ‘অস্বাভাবিক’ সম্পর্ক তো আর বেশী দিন চলতে দেয়া যায় না। কাজেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ঠিক করলেন, তাদের খাঁচায় কিছু নারী পেঙ্গুইন ছেড়ে দেয়া হবে। তারা ভাবলেন, নারী সংগ পেয়ে নিশ্চয় তারা এই ‘বেলাল্লাপনা’ ত্যাগ করবে। কিন্তু রয় আর সিলো খাচাঁর নতুন মেয়েদের দিকে ভালমত তাকিয়ে দেখলোই না, সম্পর্ক তৈরি করা তো দূর কি বাত! তারা নিজেদের প্রেমে নিজেরাই মশগুল। কর্তৃপক্ষই আর কি বা করবেন ।
এর মধ্য আরেক ঘটনা ঘটলো। রয় সিলো দম্পতি তাদের বাসার পাশে পড়ে থাকা একটি বড় পাথরের টুকরো তাদের বাসায় নিয়ে এসে নিয়ম করে তা দিতে শুরু করলো। এটা দেখে বোধ হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মনে একটু দয়া হলো। তারা আরেক ‘হেটারোসেক্সুয়াল’ পেঙ্গুইন দম্পতির কাছ থেকে একটি ডিম ধার করে নিয়ে এসে রয় আর সিলোর বাসায় রেখে দিলো। সেই ডিমে মাস খানেক ধরে নিয়ম করে তা দিয়ে রয় আর সিলো বাচ্চা ফুটালো। জন্ম হল এক ফুটফুটে মেয়ে পেঙ্গুইন শিশুর – ট্যাংগো। তারা সেই বাচ্চাকে নিজদের বাচ্চা হিসবেই আদর যত্ন করে বড় করে তুললো। বড় হয়ে ট্যাংগো নিজেও সমকামী পেঙ্গুইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ‘তানুজি’ নামে আরেক নারী পেঙ্গুইনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে।
রয়-সিলো-ট্যাংগোর এই ‘ব্যতিক্রমধর্মী’ ঘটনা নিয়ে ২০০৫ সালে আমেরিকায় প্রথম বাচ্চাদের জন্য একটি বই প্রকাশিত হয় And Tango Makes Three নামে । আমেরিকায় শিশু সাহিত্যের ইতিহাসে সমকামিতাকে গঠনমূলকভাবে উপস্থাপনার প্রথম দৃষ্টান্ত এটি। কিন্তু আমেরিকার রক্ষণশীল মহল এতে খুশি হননি। তারা বইটিকে ‘শিশুদের জন্য ক্ষতিকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে স্কুলের লাইব্রেরীগুলোতে এই বইয়ের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চান। কিন্তু আমেরিকার আদালতের রায়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র
রয়, সিলো আর ট্যাঙ্গোই একমাত্র উদাহরণ নয়। প্রকৃতিতে এ ধরণের উদাহরণ আছে অজস্র। ভেড়ার জীবন যাত্রা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সমকামী প্রবণতার প্রচুর আলামত লক্ষ্য করেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বের করার বহু আগে থেকেই মেষপালকেরা ভেড়ার এই প্রবণতার কথা জানতেন। এই ধরনের ভেড়ার পাল সবসময়ই মেষপালকদের জন্য হতাশা। কারণ এরা বংশবিস্তারে কোন সাহায্য করে না। তারা প্রথম থেকেই ভেড়ীদের প্রতি থাকে একেবারেই অনাগ্রহী। এদের আগ্রহের পুরোটা জুড়েই থাকে আরেকটি পুরুষ ভেড়া বা মেষ। অরেগন হেলথ এন্ড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস রসেলির মতে শতকরা ৮ ভাগ ভেড়া এরকম সমকামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে । এই ধরণের সমকামী ভেড়া সঙ্গমের সময় আরেকটি পুরুষ ভেড়ার দিকে অগ্রসর হয় তাদের আদর সোহাগ জানাতে থাকে আর যৌনাঙ্গ শুঁকতে থাকে। অবশেষে পেছন দিক থেকে ভেড়ার উপর আরোহন করে ভেড়ার উলের উপর বীর্জ নিক্ষেপ করে (এরা কখনোই পায়ুকামে প্রবৃত্ত হয় না)। চার্লস রসেলি এ সমস্ত ভেড়ার মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে দেখান যে এদের মস্তিস্কের কিছু অংশের আকার ‘স্বাভাবিক’ ভেড়াদের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। তিনি ‘সেক্সুয়ালি ডাইমরফিক নিউক্লিয়াস’ বলে মাথার হাইপোথ্যালমাসের একটা অংশে উল্লেখ করার মত পার্থক্য পান । একই ধরনের পার্থক্য আরেক গবেষক সিমন লেভি লক্ষ্য করেছেন সমকামী মানুষের মস্তিস্কেও (সিমন লেভির গবেষণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে একটু পরে) ।
ভেড়া ছাড়াও সমকামী আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডারের মত উভচর এবং বিভিন্ন মাছেও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রাইমেট বর্গের মধ্যে সাধারণ শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে প্রজননহীন যৌনতা (non-reproductive sex) খুবই প্রকট। মানুষের মতই তারা কেবল ‘জিন সঞ্চালনের’ জন্য সঙ্গম করে না, সঙ্গম করে আনন্দের জন্যও। শিম্পাঞ্জীদের আরেকটি প্রজাতি বনোবো শিম্পাঞ্জী (আগেকার প্রচলিত নাম ছিলো পিগমী শিম্পাঞ্জী)দের মধ্যে সমকামী প্রবণতা এতই বেশি যে, ব্যাগমিল তার বিখ্যাত ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : ‘এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে বলেন, এই প্রজাতিটির ক্ষেত্রে ‘সমকামী যৌনসংসর্গ, বিষমকামিতার মতই স্বাভাবিক। একেকটি গোত্রে এমনকি শতকরা ৩০ ভাগ সদস্য সমকামিতা এবং উভকামিতার সাথে যুক্ত থাকে এবং দেখা গেছে ৭৫ ভাগ যৌনসংসর্গই প্রজননহীন। এদের মধ্যে প্রবলভাবে আছে নারী সমকামিতাও। । বিভিন্ন রকমের সমকামী এবং উভকামী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে গরিলা, ওরাং-ওটান, গিবন, সিয়ামাং, লঙ্গুর হনুমান, নীলগিরি লঙ্গুর, স্বর্ণ হনুমান, প্রবোসিক্স মাঙ্কি, সাভানা বেবুন ইত্যাদি প্রাইমেটদের মধ্যেও।
বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামি প্রবণতা খুবই বেশি। বিজ্ঞানীরা এরকম ৪৫০টিরও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন।
১৯৭২ সালে লিন্ডা উলফি নামের এর তরুন গবেষক ল্যাবরেটরীতে জাপানী ম্যাকুয়ি নামের একধরণের প্রাইমেট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, তাদের মধ্যে নারী সমকামিতার ব্যাপারটি প্রকটভাবে দৃশ্যমান। লিন্ডা ভাবলেন নিশ্চয়ই ল্যাবরেটরীর বন্দি পরিবেশে থাকার ফলে তাদের যৌনতার পরিবর্তন ঘটেছে (জেলখানায় থাকার ফলে আসামীদের মধ্যে যে ধরণের সমকামী মনোবৃত্তি জেগে উঠে অনেকটা সেরকম)। তিনি আসল ব্যাপারটি বুঝতে জাপানে গিয়ে বন্য পরিবেশে ম্যাকুয়ি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গিয়ে তিনি কি দেখলেন? হ্যা, যা ভেবেছেন সেটাই – সেখানেও নারী সমকামিতা দেদারসে রাজত্ব করে চলেছে। শুধু লিন্ডা উলফি নয় পল ভ্যাসি নামে আরেক গবেষকও জাপানী ম্যাকুয়িদের উপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনিও ম্যাকুয়িদের মধ্যকার সমকামী প্রবণতা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন এবং বিস্তৃতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। অনেক গবেষক আগে ভেবেছিলেন, ম্যাকুয়ি সমাজে নারীতে নারীতে প্রেম আসলে পুরুষদের আকর্ষণের জন্য। নিশ্চয়ই চোখের সামনে এই ‘লেসবিয়ন পর্ণ’ দেখে পুরুষ ম্যাকুয়িরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং নারী ম্যাকুয়িদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। কিন্তু পল ভ্যাসি তার গবেষণায় পরিস্কার ভাবেই দেখালেন নারী ম্যাকুয়িরা যখন সমকামে মত্ত থাকে তখন তারা কোন পুরুষ ম্যাকুয়ির প্রতি কোন রকম আগ্রহই দেখায় না। তাদের জন্য সমকামিতার ব্যাপারটি ‘হট বাথ’ নেওয়ার মতন কেবলই আনন্দের। ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা প্রানীজগতে ১৫০০‘রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন । আর মেরুদন্ডী প্রাণীর তিনশ’রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব খুব ভালভাবেই নথিবদ্ধ । সংখ্যাগুলো কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে। উইকিপিডিয়ায় সমকামিতার আংশিক তালিকা পাওয়া যাবে এখানে।
তালিকায় স্তন্যপায়ী প্রানী থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উওভচর, কীটপতঙ্গ সবই আছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন, পৃথিবীতে আসলে এমন কোন প্রজাতি নেই যেখানে সমকামিতা দেখা যায় না। এ প্রসংগে জীববিজ্ঞানী পিটার বকম্যানের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য -
“No species has been found in which homosexual behavior has not been shown to exist, with the exception of species that never have sex at all, such as sea urchins and aphids. Moreover, a part of the animal kingdom is hermaphroditic, truly bisexual. For them, homosexuality is not an issue.”
ন্যাশনাল জিওগ্রাগিক চ্যানেলে সম্প্রতি ‘Out in Nature: Homosexual Behavior in the Animal Kingdom’ নামের একটি ডকুমেন্ট্রিতে প্রানীজগতের অসংখ্য সমকামিতার উদাহরণ তুলে ধরা হয় । ইউটিউবে ভিডিওটি ছয় পর্বে রাখা আছে। পাঠকদের জন্য ভিডিওটির প্রথম পর্বটি নীচে দেয়া হল -
ব্রুস ব্যাগমিল এবং জোয়ান রাফগার্ডেনের কাজের উপর ভিত্তি করে অসলোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি যাদুঘরে ‘এগেইনস্ট নেচার?’ নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রদর্শনীটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়ে আগাস্টের ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে। এতে জীবজগতের সমকামিতা, উভকামিতা সহ প্রকৃতির নানা ধরণের বৈচিত্রময় উদাহরণ হাজির করা হয়েছিলো। প্রদর্শনীটি সাড়া বছর জুড়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য দর্শকের আগ্রহ এবং মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয় । মুক্তমনাতেও জৈববৈচিত্র তুলে ধরে অধ্যাপক মীজান রহমানের একটি চমৎকার পোস্ট আছে - বিকৃতি না প্রকৃতি শিরোনামে।
নরওয়ের অসলো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউসিয়ামে ‘এগেইনস্ট নেচার?’ নামে প্রদর্শনীটি দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে।
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব কি সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে?
বহু বিজ্ঞানীই প্রানীজগতের মাঝে বিদ্যমান সমকামিতাকে প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেননি। তারা যে প্রকৃতিতে সমকামিতা দেখেননি তা নয়, অনেকবারই দেখেছেন – কিন্তু অবধারিতভাবে ভেবে নিয়েছিলেন এটি বিবর্তনের বিচ্যুতি, এ নিয়ে গবেষণার কোন দরকার নেই। যেমন, ভ্যালেরিয়াস গিস্ট (Valerius Geist) নামের এক বিজ্ঞানী ক্যানাডিয়ান রকি পর্বতমালায় পাহাড়ী মেষদের মধ্যকার সমকামিতা পর্যবেক্ষণ করেও সেটা গুরুত্ব দিয়ে গবেষণায় লিপিবদ্ধ করেননি। আজ তিনি সেই ‘ব্যর্থতার’ জন্য প্রকাশ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেন। আসলে কিন্তু ব্রুস ব্যাগমিলের ‘বায়োলজিকাল এক্সুবেরেন্স’ বইটি প্রকাশিত হবার পর বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা অনেকটাই বদলে গেছে। তারা এখন সমকামিতাকে গুরুত্ব দিয়েই জীববিজ্ঞানে গবেষণার দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করেন। ব্রুস ব্যাগমিলের গবেষনার পর অন্যান্য গবেষকেরাও গবেষণা চালিয়ে গেছেন বিষয়টি নিয়ে।
আসলে ডারউইনীয় বিবর্তনের দিক থেকে চিন্তা করলে সমকামিতার ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানীদের জন্য সব সময়ই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ ‘ওটা বায়োলজিকাল ডেড এন্ড’ - অন্ততঃ এভাবেই ভাবা হত কিছুদিন আগেও। বিবর্তনের কথা ভাবলে প্রথমেই প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কথাটিই মাথায় সবার আগে চলে আসে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে সমকামিতার লক্ষ্য যে বংশবিস্তার নয় - তা যে কেউ বুঝবে। তাহলে জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে সমকামিতার উদ্দেশ্য কি? আগে এমনকি জীববিজ্ঞানীদের মধ্যেও সমকামিতাকে ঢালাওভাবে ‘অস্বাভাবিকতা’ কিংবা ‘ব্যতিক্রম’ ভেবে নেওয়াটাই ছিলো ট্রেন্ড, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ধ্যান ধারনা অনেকটা বদলেছে।
প্রথম কথা হচ্ছে, সমকামিতার ব্যাপারটি কিন্তু নিখাঁদ বাস্তবতা। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, পুরো প্রানীজগতের ক্ষেত্রেই। জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিল তার ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে প্রায় পাঁচশ প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্বের উদাহরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। আর আগেই বলা হয়েছে যে, সামগ্রিকভাবে জীবজগতে ১৫০০’রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মানুষের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫ ভাগ থেকে ১২ ভাগ সমকামিতার সাথে যুক্ত বলে পরিসংখ্যানে পাওয়া গেছে। কাজেই সমকামিতার এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা বোকামি। এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল, সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করার সঠিক বৈজ্ঞানিক মডেল জীববিজ্ঞানে আছে কিনা, নাকি কেবল ‘সমাকামিতা অস্বাভাবিক’ কিংবা ‘ব্যতিক্রম’ ইত্যাদি বলেই ছেড়ে দেয়া হবে? এ প্রসঙ্গে জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক জোয়ান রাফগার্ডেনের উক্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক -
‘My discipline teaches that homosexuality is some sort of anomaly. But if the purpose of sexual contact is just reproduction, then why do all these gay people exist? A lot of biologists assume that they are somehow defective, that some development error or environment influence has misdirected their sexual orientation If so, gay and lesbian people are mistake that should have been corrected a long time ago (thru Natural selection), but this hasn’t happened. That’s when I had my epiphany. When a scientific theory says something wrong with so many people, perhaps the theory is wrong, not the people’.
সমকামিতাকে যদি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তবে আমাদের বের করতে হবে - ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে এর উপযোগিতা কি। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে কঠিন বলে কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিনই। কিছু যোগসুত্র পাওয়া গেছে প্রাণী জগতে ‘স্টেরাইল ওয়ার্কার’ বা ‘বন্ধ্যা সৈন্যের’ -এর উদাহরণ থেকে। পিঁপড়ে, মৌমাছি, উই পোকা কিংবা বোলতার মত প্রজাতিতে এই ধরণের ‘বন্ধ্যা সৈন্যের’ উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। এরা বংশবৃদ্ধিতে কোন ভুমিকা রাখে না। কিন্তু নিজেদের গোত্রকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে জনপুঞ্জ টিকিয়ে রাখে। মানুষের জন্যও কি এটা খাটে? বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার আলোকে একটু চিন্তা করা যাক। এমন কি হতে পারে যে, সমকামী পুরুষেরা আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই আদিম শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে (hunter gatherer societies) বাচ্চা লালন পালনে কোন বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলো? নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে যখন একাধিক পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে গোত্রের দায়িত্ব নিতো আর শিকারের সন্ধান করত, সেই গোত্র হয়ত অনেক বেশী খাবারের যোগান পেত, কিংবা হয়ত বহিঃশত্রুর হাত থেকেও রক্ষা পেত অন্যদের চেয়ে বেশী। ফলে টিকে থাকার প্রেরণাতেই হয়ত কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষে পুরুষে সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো –যা গোত্রে এনে দিয়েছিলো বাড়তি নিরাপত্তা। কিংবা হয়ত এমনও হতে পারে - যখন শক্তিশালী পুরুষ শিকারে যেত, হয়ত সেই গোত্রের কোন ‘গে চাচা’ রক্ষা করার দায়িত্ব নিত ছোট ছোট ছেলেপিলেদের। আর পুরুষটিও শিকারে বের হয়ে স্ত্রীর ‘পরকীয়া’র আশঙ্কায় ভাবিত থাকতো না! ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায়, বহু রাজা বাদশাহরা তাদের হারেম সুরক্ষিত রাখতে ‘খোঁজা প্রহরী’দের নিয়োগ দিতো। আরো সমীক্ষায় দেখা গেছে পশ্চিমে মেয়েরা অফিসে সমকামী পুরুষদের সাথে কাজ করতে অনেক নিরাপত্তা অনুভব করে। এটার কারণও অবোধ্য নয়। হয়ত জিন সঞ্চালন ছাড়াও অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাদের প্রজাতিটিকে টিকেয়ে রাখতে সমকামী সদস্যদের একটা ভূমিকা ছিলো। সেজন্য এডয়ার্ড ও উইলসন ‘কিন সিলেকশন’-এর মাধ্যমে হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ১৯৭৮ সালেই ।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক চিন্তা করা যেতে পারে। সমকামী প্রবৃত্তিটি হয়ত বিবর্তন প্রক্রিয়ার উপজাত বা সাইড ইফেক্ট। বিবর্তনের অনেক কিছুর কথাই আমরা জানি যেগুলো কোন বাড়তি উপযোগিতা তৈরি করে না। কিন্তু এগুলো উৎপন্ন হয়েছে বিবর্তনের উপজাত হিসবে। এই বৈশিষ্টগুলো যদি টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি কোন অসুবিধা তৈরি না করে তাহলে তারা উপজাত হিসেবে রয়ে যেতে পারে বংশ পরম্পরায়। বিজ্ঞানী স্টিফেন যে গুল্ড উপজাতের ব্যাপারটা বোঝাতে আমাদের বাড়ির উদাহরণ হাজির করতেন। যে কোন বড় বাড়ি কিংবা ইমারতের দিকে দেখলে দেখা যাবে – এর ধনুকাকৃতির দু’টি খিলানের মাঝে স্থান করে নিয়েছে ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতির স্প্যান্ড্রেল বা মাঝখানের একটা খোলা জায়গা। বাড়ীর ইমারত বানাতে খিলান থাকা অত্যাবশক, কিন্তু খিলান বানাতে গেলে বাড়তি উপজাত হিসবে স্প্যান্ড্রেল এমনিতেই তৈরী হয়ে যায়, যা ইমারতটির ভিত্তির জন্য অত্যাবশকীয় কোন কিছু হয়ত নয়, কিন্তু এটি এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের শরীরের হাড্ডির সাদা রঙের কথা ধরা যেতে পারে। এই সাদা রঙ বিবর্তনে কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয় না। এই সাদা রঙ তৈরি হয়েছে হাড়ে ক্যালসিয়াম থাকার উপজাত হিসেবে। তেমনি কারো কারো চোখের নীল কিংবা বাদামী রঙও হয়ত কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয়া না - এটা প্রকৃতিতে আছে বিবর্তনের সাইড ইফেক্ট হিসবে। সমাকামিতাও বিবর্তনের সেরকম কোন উপজাত হতে পারে। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রবিন ডানবার সেজন্যই মনে করেন, মানুষের মধ্যে সম্ভবত বিবর্তনের বাই-প্রোডাক্ট। তিনি বলেন, ‘homosexuality doesn’t necessarily have to have a function. It could be a spin-off or by-product of something else and in itself carries no evolutionary weight’।
ইতালীর একটি সমীক্ষায় (২০০৪) দেখা গেছে, যে পরিবারে সমকামী পুরুষ আছে সে সমস্ত পরিবারে মেয়েদের উর্বরতা (fertility) বিষমকামী পরিবারের চেয়ে বেশি থাকে । আন্দ্রিয়া ক্যাম্পেরিও-সিয়ানির ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বিষমকামী পরিবারে যেখানে গড় সন্তান সন্ততির সংখ্যা ২.৩ সেখানে গে সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২.৭। তার মানে যে জেনেটিক প্রভাব মেয়েদের উর্বরা শক্তি বাড়ায় - সেই একই জিন আবার হয়ত ছেলেদের মধ্যে সমকামী প্রবণতা ছড়িয়ে দেয় - বিবর্তনের উপজাত হিসেবে। সেজন্যই ডঃ ক্যাম্পেরিও ক্যানি বলেন –
“We have finally solved the paradox … the same factor that influence sexual orientation in males promotes higher fecundity in females’
বিজ্ঞানী ডীন হ্যামারও প্রায় একই কথা বলেছেন একটু অন্যভাবে –
‘The answer is remarkably simple : the same gene that causes men to like men, also causes women to like men, and as a result to have more children’
বিবর্তন তত্ত্বের প্রেক্ষাপটে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে সামাজিক নির্বাচন। আমরা দেখেছি প্রানীজগতে সমকামিতার প্রবৃত্তি একটি বাস্তবতা। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে সমকামিতা নেই, ছড়িয়ে আছে প্রাণিজগতের সকল প্রজাতির মধ্যেই। আসলে প্রকৃতিতে সবসময়ই খুব ছোট হলেও একটা অংশ ছিল এবং থাকবে যারা যৌনপ্রবৃত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের চেয়ে ভিন্ন। কিন্তু কেন এই ভিন্নতা? এর একটি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় ইকোলজিস্ট জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসবর্গ তার “Evolution’s Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইয়ে [6] । তিনি বলেন, যৌনতার উদ্দেশ্য সনাতনভাবে যে কেবল ‘জিন সঞ্চালন করে বংশ টিকিয়ে রাখা’ বলে ভাবা হয়, তা ঠিক নয়। যৌনতার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরন। তিনি বলেন :
‘যদি আপনি সেক্স বা যৌনতাকে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে আপানার কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে, যেমন সমকামিতার মত ব্যাপার স্যাপারগুলো – যা জীব বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামী সংশ্রব বিষমকামীদের মতই দেদারসে ঘটতে দেখা যায়। আর বনোবোরা কিন্তু প্রকটভাবেই যৌনাভিলাসী। তাদের কাছে যৌনসংযোগের (Genital contact) ব্যাপারটা আমাদের ‘হ্যালো’ বলার মতই সাধারণ। এভাবেই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এটি শুধু দলগতভাবে তাদের নিরাপত্তাই দেয় না, সেই সাথে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আহরণ এবং সন্তানদের লালন পালনও সহজ করে তুলে’।
শুধু বনোবো শিম্পাঞ্জীদের কথাই বা বলি কেন, বাংলাদেশেই আমরা যেভাবে বড় হয়েছি সেখানে ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, হাতে হাত ধরে কিংবা ঘারে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ঝগড়া-ঝাটি হলে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েরাও তাই। এই আচরণ একটু প্যাসিভ তবে এ ধরনের প্রেরনা কিন্তু মনের ভেতর থেকেই আসে। বলা বাহুল্য, এই প্রেরণার মধ্যে কোন জিন সঞ্চালনজনিত কোন উদ্দেশ্য নেই, পুরোটাই যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরনের প্রকাশ।
যোগাযোগ আর সামাজিকরণের কথা মাথায় রেখেই জোয়ান রাফগার্ডেন তার বিবর্তনবিদ্যা সংক্রান্ত ‘ইভ্যলুশনস রেইনবো’ (উপরে উল্লিখিত) বইয়ে ‘যৌনতার নির্বাচন’ (sexual selection)-এর বদলে ‘সামাজিক নির্বাচন’ (social selection) – এর প্রচলন ঘটানোর প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, প্রানীজগতের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তাদের খাবার, সঙ্গী প্রভৃতির সঠিক নির্বাচনের উপর। প্রাণিজগতের এই নির্বাচনই কখনো রূপ নেয় সহযোগিতায়, কখনো বা প্রতিযোগিতায়। এবং এটাই শেষ পর্যন্ত সমস্ত পারিবারিক বিবিধ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। কোন কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক একগামিতা বা মনোগামিতে রূপ নিতে পারে (মানুষ ছাড়াও কিছু রাজহাঁস, খেঁকশিয়াল, কিছু পাখির মধ্যে একগামী সম্পর্ক আছে), কখনো বা রূপ নেয় বহু(স্ত্রী)গামিতা বা পলিগামিতা (সিংহ, বহু প্রজাতির বনের মধ্যে এরকম হারেম তৈরি করে ঘোরার প্রবণতা আছে), কখনোবা বহু(পুরুষ)গামিতা বা পলিঅ্যান্ড্রি (কিছু সিংহ, হরিণ এবং প্রাইমেটদের মধ্যে)তে। এমনকি অনেকসময় দলে একাধিক ‘জেন্ডারের’ মধ্যেও সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেমন, ব্লু গ্রীন সানফিশ নামের একপ্রজাতির মাছ আছে যেখানে এক একটি ঝাঁকে দুই পুরুষ মাছের মধ্যে সমধর্মীযৌনতার বন্ধন (same-sex courtship) গড়ে উঠে। এখানে মুখ্য পুরুষ মাছটি (এদের ‘আলফা মেল’ বলা হয়) একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে আর তারপর অপর পুরুষ মাছটিকে সাথে নিয়ে তাদের যৌথ সাম্রাজ্যে স্ত্রীমাছগুলোকে ডিম পাড়তে আমন্ত্রণ জানায়। অনেকসময় দ্বিতীয় পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছের অনুকরণ করে স্ত্রী মাছের ঝাকের সাথে মিশে যায় - যা অনেকটা আমাদের সমাজে বিদ্যমান ক্রস-জেন্ডার প্রতিনিধিদের মতই। ড. রাফগার্ডেনের মতে, যৌন-প্রকারণ এবং সমধর্মী যৌনতা এভাবে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা অনেক সময়ই মোটা দাগে কেবল শুক্রানুর স্থানান্তর নয়। সামাজিক নির্বাচন হচ্ছে সেই বিবর্তন যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখে। ড. রাফগার্ডেনের মত সামাজিক নির্বাচনের ধারণাকে সমর্থন করেন ব্রুস ব্যাগমিল এবং পল ভ্যাসি সহ অনেক বিজ্ঞানীই।
তবে বেশিরভাগ জীববিজ্ঞানীই এখনই ‘যৌনতার নির্বাচনকে’ সরিয়ে দিয়ে ‘সামাজিক নির্বাচন’কে গ্রহণ করার পক্ষপাতি নন, কারণ প্রকৃতিজগতের বেশিরভাগ ঘটনাকেই ‘যৌনতার নির্বাচন’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নেচার পত্রিকায় রাফগার্ডেনের বইটির ভুয়সী প্রসংশা করার পরও তার ‘সামাজিক নির্বাচন’ তত্ত্বের সমালোচনা করে নৃতত্ত্ববিদ সারাহ হর্ডি বলেন – ‘(তার) এ (উদাহরণ) গুলো যৌনতার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য উপযুক্ত কারণ নয়, বরং এগুলো হতে পারে জীব-বৈচিত্রকে (সামাজিকভাবে) গ্রহণযোগ্য করার অনুপ্রেরণা’। এর কারণ আছে। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমেই হোমসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সমকামিতার জিন (যদি থেকে থাকে) যোগাযোগ ও সামাজিকতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উপযোগী তা বনোবো শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রেও এটি সত্য হতেই পারে । আবার এমনো হতে পারে মানুষের মধ্যে ‘গে জিন’-এর ভূমিকা পুরুষ এবং স্ত্রীতে ভিন্ন হয়। ইতালীর একটি সমীক্ষার (২০০৪) কথা আমরা আগেই জেনেছি – যা থেকে বেরিয়ে এসেছে, যে প্রকরণটি পুরুষদের মধ্যে সমকামিতা ছড়াচ্ছে সেটাই মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার উর্বরাশক্তি বাড়াচ্ছে। এছাড়া ‘কিন সিলেকশন’-তত্ত্বের সাহায্যেও সমকামিতাকে বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব বলে অনেক
Howdy! My name is Vaughn and I just wanted to say your blog is great!
It really is surprising because I use to have a
weblog that almost had an identical url: http:
//www.blogger.com/comment.g?blogID=5932079964897290976&postID=1454080315526946374 mine was only a few letters different.
Anyhow, I'm a big fan of your site and if you at any time would like a guest write-up please email me at: vaughn-peltier@hotmail.de. I love writing!
Look at my blog post; www.smart-links.org