Saturday, October 23, 2010

রকীয়ার বলি হলেন সোমা

0 comments
'প্রেমিকা জেসমিন। সঙ্গে ১০ লাখ টাকার ব্যাগ। দুটোই এক সঙ্গে পেতে চেয়েছিলাম। বিভোর ছিলাম জেসমিনকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নে। এত বড় সুযোগ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। রাজি হই জেসমিনের কথায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে যাই প্রেমিকা জেসমিনের বর্তমান কর্মস্থল দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায়। শ্বাসরোধ করে খুন করি গৃহকত্র্রী সোমা আক্তার সুমিকে। গতকাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছে গৃহপরিচারিকা জেসমিনের প্রেমিক রহমতউল্লাহ। গৃহপরিচারিকা জেসমিনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত বৃহস্পতিবার ১২/২/১ নম্বর শ্যামলী থেকে পুলিশ রহমতউল্লাহকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে আদাবরে একটি বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ব্যাগটি উদ্ধার করে পুলিশ। রহমতউল্লাহ জানায়, গত ছয় মাস আগে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মাহফুজ উল্লাহর বাসায় বদলি গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করার সময় জেসমিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই বাসায় জেসমিন তিন বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করত। পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে দুইজনই ওই বাসা থেকে চাকরি ছেড়ে দিলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই তারা গোপনে মিলিত হতো। তবে সোমাকে খুন করার পর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ট্রাভেল ব্যাগে কোনো টাকা পায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গৃহপরিচারিকা জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডতে। ছয় বছর আগে আবদার আলী নামের এক রিকশাওয়ালাকে বিয়ে করে। তাদের এক বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে তার স্বামী বাচ্চাকে নিয়ে হরিণাকুণ্ডতেই থাকে।

তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, এক পরকীয়াকে বাস্তবে রূপ ও অন্য পরকীয়াকে নিশ্চিহ্ন করতেই খুন হন গৃহবধূ সোমা। ১১ অক্টোবর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের ১০/৬ নম্বর রোডের ১১১ নম্বর বাড়ির চারতলায় মালিক নাদিরা বেগমের বাসায় সোমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোমার বাসার গৃহপরিচারিকা জেসমিন বেগমকে। মিশন সফল হলে তাকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন নাদিরা বেগম। ওই বৈঠকে নাদিরার ভাগ্নে দ্বীপও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ঘরে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখে কাপড় ঢুকিয়ে সোমার হাত-পা বেঁধে ফেলে রহমত। ওই সময় সোমা খাটে শুয়েছিলেন। পাশের আরেকটি খাটে ছিলেন সোমার প্রতিবন্ধী ছেলে নকিব। একপর্যায়ে সোমাকে লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেয় জেসমিন। পরে দুইজনে মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর ট্র্যাভেল ব্যাগটি নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় রহমত।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, একই বাসায় থাকার সুবাদে 'চাঁদ নুর ভবন'- এর মালিক নাদিরা বেগমের বোনের ছেলে দ্বীপ প্রায় একবছর ধরে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া গৃহবধূ সোমার সঙ্গে। তবে সম্প্রতি দ্বীপ লন্ডন প্রবাসী এক মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর কয়েকদফা সোমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলে নাদিরা। তবে সোমা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। মানসিকভাবে অসুস্থ সোমা যেকোনো সময় তাদের সম্পর্ক ফাঁস করে দিলে দ্বীপের বিয়ে ভেঙে যেতে পারে_ এমন আশঙ্কায় সোমাকে খুন করা হয়। তবে মিশন শেষ করার পর নাদিরা জেসমিনকে কোনো টাকা দেননি বলে জানিয়েছে জেসমিন। খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুর রহমান জানান, ঘটনার রহস্য পরিপূর্ণভাবে উদঘাটিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহত গৃহবধূ সোমার স্বামী রানার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পরকীয়ার সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল নাদিরা ও তার বোনের ছেলে দ্বীপ।

প্রসঙ্গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের সাত নম্বর সড়কের ১১১ নম্বর বাসা থেকে পুলিশ গৃহবধূ সোমার লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন রাতেই নিহতের ভাই মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ সোমার স্বামী মাহফুজুর রহমান রানা ও গৃহকর্মী জেসমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পরে ১৯ অক্টোবর বাড়িওয়ালা নাদিরা খন্দকার ও দ্বীপকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
**সাখাওয়াত কাওসার**

0 comments:

Post a Comment