বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় যতগুলো প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে তার মধ্যে মধুখালী উপজেলার অন্তর্গত মথুরাপুর গ্রামের দেউল অন্যতম। মুঘল শাসনামলে সম্রাট আওরঙ্গজেবের একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। ১৭০০ সালে মুর্শিদকুলি খান বাংলার দেউয়ান হয়ে আসেন। বাংলার দেওয়ান হয়ে আসার পর তিনি বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন। এমতাবস্থায় তিনি ফরিদপুর মহকুমায় একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেন। মুর্শিদকুলি খানের ইচ্ছানুযায়ী ১০৫ ফুট উচ্চতার একটি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ১৮০০ সাল পর্যন্ত দেউলটিকে মুর্শিদকুলি খানের বিজয় স্তম্ভ বলা হতো। ১৭২৩ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত দেউলটি বিজয় স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ১৮২০ সালের দিকে অত্র এলাকার হিন্দু শাসক গৌরচন্দ্র এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মথুরাপুর দেউল। বর্তমান অবধি স্তম্ভটি সবার কাছে মথুরাপুর দেউল হিসেবেই পরিচিত। দেউলটি নিয়ে লোকমুখে নানা কথা প্রচলিত আছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি প্রাচীন মঠ যা হিন্দু জমিদাররা নির্মাণ করেন। অনেকে বলেন, দেউলটি কেউ নির্মাণ করেনি। এটি কোনো এক রাতে এমনিতেই তৈরি হয়েছে। তবে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য হলো_ দেউলটি সুবাদার মুর্শিদকুলি খান ১৭২৩ সালে নির্মাণ করেন। নির্মাণকালে তিনি লাল ইট, বালু, সিমেন্ট ও লোহার পাত ব্যবহার করেন। দেউলটি দেখতে সুন্দর হলেও এর মধ্যে ভয়ঙ্কর সব প্রাণী ও জন্তু বসবাস করে। স্থানীয় লোকজন বলেন, দেউলটির চারপাশে ৪টি দরজা। দরজা চারটি প্রায় ৫ বছর যাবৎ তালা দেওয়া, কেউ দেউলের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। তবে ৫ বছর আগে দরজা তালাবদ্ধ ছিল না। তখন কেউ আলো বা বাতি ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করতে পারত না। যদি কেউ আলো বা টর্চ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করত, সে ভিতরে গিয়ে আর কিছুই দেখতে পেত না। আবার দুই সিঁড়ি উপরে উঠার পর হাতের আলো নিভে যেত। শুরু হতো ভয়ঙ্কর সব আজগুবি প্রাণীর কিচিরমিচির শব্দ। অনেকেই ভিতরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ত, অসুস্থ হয়ে যেত কিংবা কথা বলতে পারত না ১ সপ্তাহ পর্যন্ত। ইত্যাদি নানা সমস্যার কারণে কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালে দরজা চারটিতে তালা লাগিয়ে দেন। দেউলটি মধুখালী উপজেলা থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। মধুখালী রেলগেট থেকে বাসযোগে ৩ থেকে ৫ মিনিটে প্রাচীন এই রহস্যময় দেউলে পেঁৗছা যায়। বর্তমানে প্রাচীন এই দেউলটি শুধু ফরিদপুরবাসীর নয়, বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
-মোঃ রিয়াজুল ইসলাম
0 comments:
Post a Comment