Tuesday, October 19, 2010

ভাইরাস

0 comments
ওরা এত ক্ষুদ্র যে কেবল ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেই দেখা যায়। ওরা ভাইরাস। অতি ক্ষুদ্রতার কারণে ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক আগেই আঁচ করা গেলেও সবে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে ওরা।

ভাইরাসরা খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। এ জন্য ওদের কোনো আস্তানার প্রয়োজন হয়। মানুষ, পশু পাখি বা গাছগাছালিকে সংক্রমণ করে বাড়তে থাকে তারা। এইডস, বসন্ত, পোলিওর মত নানা রকম ব্যাধির সৃষ্টি হয় ভাইরাস থেকে। প্রাচীন কালে যে রোগটিকে খুব ভয়ের চোখে দেখা হত, তা হল জলাতঙ্ক। প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর থেকে মানুষের দেহে সংক্রামিত হয় এই রোগ ভাইরাসের মাধ্যমে। প্রাচীন গ্রিসে জলাতঙ্কের চিকিৎসা পদ্ধতিটা ছিল অত্যন্ত নির্মম। কুকুরে কামড়ানো জায়গাটা গরম লোহার শিক দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হত। বহু রোগীকে আবার জলের নীচেও ডুবিয়ে রাখা হত অনেকক্ষণ। জলাতঙ্কের মত ভাইরাসজনিত নানা রোগের সুচিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানীরা অনবরত গবেষণা করে চলেছেন।

ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব

ভাইরাসজনিত মহামারী বিশ্বের বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনাকেও প্রভাবিত করেছে। ফ্রান্সে নেপোলিয়নের রাজত্বের সময় আবার ক্রীতদাস প্রথা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যে ২৫ হাজারের বেশি সেনা পাঠানো হয়েছিল হাইতিতে। কিন্তু সেনারা ইয়েলো ফিভার নামে এক ধরনের ভাইরাসবাহী রোগে আক্রান্ত হয়ে দলে দলে মারা যেতে থাকে। এই অসুখ হলে রোগীর বমি হতে থাকে, লিভার কাজ করে না, গায়ের রঙ হলদে হয়ে যায়। অবশেষে ফরাসি সরকার হাইতি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।

মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে নিচ্ছিদ্র সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ভাইরাস নিয়ে গবেষণাগারে কাজ করতে হলে তো কথাই নেই। মার্টিনা ফ্রিসলান্ড জানান, ''আমাদের অপারেশন থিয়েটারের মত এক ধরনের অ্যাপ্রন পরে কাজ করতে হয়। বিশেষ ধরনের জুতো রয়েছে আমাদের। হাতে দুটো করে গস্নাভস পরতে হয়। এর কারণ, কোনো কিছু ধরে পরে যদি মনে হয় ওখানে ভাইরাস থাকতে পারে, তা হলে ওপরের গস্নাভসটি খুলে ফেললেই হল।

ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিকাও বের করা হয়েছে। কিন্তু এইডস বা হেপাটাইটিস ভাইরাস এতই বৈচিত্র্যময় যে ওদের আয়ত্তে আনা খুব কঠিন। এ প্রসঙ্গে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ টমাস পিচমান বলেন, ''এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, প্রাণীদের মত ভাইরাসদের জগতেও রয়েছে বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভাণ্ডার। আমরা মানুষেরা যেমন স্তন্যপায়ী অন্যান্য জীবজন্তু যেমন কুকুর, বিড়াল বা ইঁদুর থেকে আলাদা, তেমনি ভাইরাসদের মধ্যেও রয়েছে নানা ধরনের বংশ ও পরিবার। এই সব ভাইরাস বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একেক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে, সংক্রমণের জন্য বেছে নেয় একেক ধরনের প্রাণী, হালচালও ওদের ভিন্নতর।"

গবেষণা চলছে, চলবে

প্রফেসর পিচমান 'টুইনকোর' গবেষণা প্রতিষ্ঠানে 'পরীক্ষামূলক ভাইরাস বিজ্ঞান' বিভাগের প্রধান? হানোফারের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও ব্রাউনশোয়াইগের ইনফেকশন রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত 'টুইনকোর' গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের নাড়ি নক্ষত্র জানার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এখন। এই ভাইরাসগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল, ল্যাবরেটরির কালচার ডিশে সহজেই বংশ বৃদ্ধি হয় তাদের। এই প্রসঙ্গে প্রফেসর টমাস পিচমান জানান, ''এই সব ভাইরাসের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, প্রয়োজন হলে তারা বদলে যেতে পারে। অনেকটা এইচ আই ভি ভাইরাসের মত তারা। বার বার নতুন রূপ ধারণ করে সুকৌশলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস।

এ ক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়। আর তা হল, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শতকরা ২০ জন মানুষের বড় রকমের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু শতকরা ৮০ জন ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখের কবলে পড়ে, যা থেকে অনেক সময় লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের মত রোগও দেখা দেয়। টমাস পিচমান মনে করেন, মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধী শক্তির ওপরই নির্ভর করে অসুখের ধরনধারণ। আশা করা হচ্ছে, একদিন হয়তো হেপাটাইটিস সি ভাইরাসকে কাবু করার জন্য কার্যকর কোনো ওষুধ বের করা যাবে।
০০ ডয়চে ভেলে

0 comments:

Post a Comment