Tuesday, May 4, 2010

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি

0 comments
একসময়ের দাপুটে কলাপাড়ার আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায় এখন পরিণত হয়েছে ক্ষয়িষ্ণু সম্প্রদায়ে। অনেকটা নীরবেই কাটে আদিবাসী সম্প্রদায় রাখাইনদের জীবনযাপন। নেই যেন সেই বৈচিত্র্যময় জীবনধারা। অবস্থা এমন হয়েছে যে আর্থিক দৈন্যের কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালন করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। আর ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধমূর্তিগুলোর নিরাপত্তাও আজ হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। তারপরও ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দেখলে এখনো মানুষ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর বিরল এই নিদর্শন রক্ষা রাখাইনদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব দেখাশোনা করার জন্য বৌদ্ধভিক্ষু পর্যন্ত নেই। অসংখ্য ছোটবড় বৌদ্ধমূর্তির অন্যতম মিশ্রিপাড়ার বিশাল বৌদ্ধমূর্তিটি। রাখাইনসহ এখানকার মানুষের দাবি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি এটি। প্রায় ৩২ ফুট উঁচু মূর্তিটি পাথরের বেদির উপর স্থাপিত। মহামূল্যবান ছাড়াও সাগরপারের স্মৃতি বহন করে আছে এর ব্যাপক পরিচিতির কারণে। প্রতিদিন পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এ মিশ্রিপাড়ায়। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় আসলে মিশ্রিপাড়ায় আগমন ঘটে অধিকাংশ পর্যটকের। টিনশেডের মন্দিরটির নির্মাণ সৌকর্যের ছাপ ইন্দোচীনের স্থাপত্যকলার।
কুয়াকাটা সৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব মিশ্রিপাড়ার। কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটার বিকল্প সড়কে মিশ্রিপাড়া হয়ে যাওয়া যায় কুয়াকাটা। সেক্ষেত্রে ঐতিহ্যের ধারক মূর্তিটি আগাম দেখার সুযোগ রয়েছে। খুবই অযত্ন আর চুরি হওয়ার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে আছে বিশাল এই মূর্তিটি। ইতিপূর্বে ছোটবড় কয়েকটি বৌদ্ধমূর্তি এখান থেকে চুরি হয়েছে। যেগুলো ছিল শ্বেত আর কষ্টিপাথরের। যে কারণে শঙ্কিত রয়েছেন আদিবাসী রাখাইনরা।
১৯০৬ সালে রাখাইন উমারেন্ধা মহাথের বৌদ্ধভিক্ষু এই মূর্তিটি স্থাপন করেন। এটির ওজন কত তা কেউ বলতে পারেনি। ১১ বছর আগে মন্দিরের পুরোহিত মারা গেলে একপ্রকার অরক্ষিত হয়ে আছে মূর্তিটি। রাখাইন মহিলা উয়েমাচি এখন শুধু সকাল-বিকাল মন্দিরের তালা খুলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজা দেন। এমন বেহাল দশা যে, পর্যটকরা আসলে তাদের দেওয়া টাকায় মোমবাতি কিনতে হয়।
শত বছরেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এই বৌদ্ধমূর্তিটি এখনো এখানকার পরিচিতি বহন করে চলেছে আগত দর্শনার্থীদের জন্য। অথচ মন্দিরের বেহাল দশায় নিরাপত্তা চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। মন্দিরের দেওয়াল ফেটে গেছে। ঘরটির চাল জীর্ণ হয়ে ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। সব জানালা ভাঙা। মন্দিরের বাউন্ডারির তারকাঁটার বেড়াও মানুষ ছিঁড়ে ফেলেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যেন অভিভাবকহারা হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন বৃহৎ বৌদ্ধমূর্তিটি এবং মন্দিরটি।

0 comments:

Post a Comment