Monday, October 18, 2010

বাংলা ভাষা কিভাবে হল

0 comments
ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। মানুষ তার আবেগ অনুভুতি সবই তার ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে। ভাষা অধিকাংশ সময় সাংকেতিক যার মাধম্যে পৃথিবীর সমাজ জীবন সচল থাকে। অন্যদিকে যাদের কেবল বাকশক্তি রয়েছে তারা বা সেই সব প্রাণী ভাষাকে অর্থপূর্ণ প্রকাশ করতে পারে। ভাষার সাংকেতিক শৃক্সখলা নির্ধারিত হয় কেবল অক্ষরগুচ্ছ দিয়ে। কোনো ভাষা চিহ্ন প্রকাশে সহায়ক না হয়, তাহলে এগুলো কোনো ভাষা চিহ্ন হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না। এ জন্যই বাগধারা থেকে অর্থপূর্ণ অংশকে যদি এর দেহ বলা হয় তাহলে এর অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যঞ্জনাকে আত্মা হিসেবে মেনে নিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখেই বোধ হয় শব্দ আমাদের কাছে শুধু বস্তুতর শব্দচিত্র নয়, উপলব্দির চিত্রকল্প এবং ভাবজগতের চলমান ছবিও বটে। ভাষা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জড়জগতের নিরবয়র ধারার প্রতীক। এ প্রতীকগুলো স্বনির্ভর এবং এর নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। ভাষার লক্ষণ হলো_ এটা বাঙময়, এর অর্থবহ প্রকাশ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে। ইঙ্গিত লিপি দ্বারা রচিত অথবা বিশেষ কোনো চিহ্নের দ্বারা। অবশ্য এই ইঙ্গিত যেমনই হোক অথবা যেকোনো ভাষার গঠন প্রণালির হোক তার মধ্যে অবশ্যই নিজস্ব শৃক্সখলা রীতির একটি ব্যাপার থাকে, যা গাণিতিক সূত্রের মতোই অবধারিত। এ জন্য ভাষার বিবর্তনও মূলত আবেগপ্রবণ মনের প্রতিফলন। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার ভাষা আছে। এই ভাষাগুলোর প্রায় ছাবি্বশটি ভাষাগোষ্ঠী রয়েছে। এ ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক ভাষার যোগসূত্র নির্ণয়ের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছেন ভাষাতাত্তি্বকরা। এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যেই কোন ভাষা কোন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল সেটা নির্ণয় করা, অথবা ভাষাগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত একাধিক ভাষার মধ্যে কোনোটি বিলুপ্ত হয়ে থাকলে ওই ভাষাকে সমগোত্রীয় বলে বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষ কবে ভাষার বিবর্তন এবং বিলুপ্তির ক্ষেত্রে ওই ভাষার রচনা এবং শিলালিপি ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে আলোচনায় আসতে পারে। বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল, বিবর্তন এবং এর বিস্তার লাভ সম্পর্কে এখানে কিছু আলোকপাত করা প্রয়োজন। সংক্ষিপ্ত এবং কিছুটা বিক্ষিপ্ত মনে হলেও এতে বাংলা ভাষার একটি চিত্র দেখা যাবে। বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল নিয়ে নানা মুনীর নানা মত থাকলেও অধিকাংশ পণ্ডিতই মনে করেন, বাংলা ভাষার উৎপত্তি বহু প্রাচীন। আর্য ভাষাগোষ্ঠী থেকে বাংলা ভাষা এসেছে। আর্য ভাষার প্রাচীন যে নিদর্শন ঋগবেদে পাওয়া যায়, তা থেকেই পণ্ডিতরা অনুমান করেন, বাংলা ভাষা আর্য ভাষাগোষ্ঠী থেকে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ ধারণাটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আদি, মধ্য ও নব্য বা আধুনিক বাংলার স্তর বিন্যাস করতে গিয়ে ৯৫০ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৩৫০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আদি ও মধ্য বাংলার কাল নির্ণয় করা যায়। অবশ্য এর পরও প্রায় ২০০ বছর বাংলা ভাষার সাহিত্যচর্চা এ নমুনাকে আশ্রয় করেই চলতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে বাংলা ভাষা বাঁক নেয়, আর এখান থেকেই আধুনিক বাংলা ভাষার যাত্রা শুরু হয়। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যে বাংলা ভাষার ধ্বনি দুই প্রকার। স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি_ সংস্কৃত স্বরধ্বনি কিছুটা হেরফের হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে। সংস্কৃত আ দীর্ঘ ধ্বনি বাংলায় এসে এর ধ্বনিরূপ হয়েছে হ্রস্ব। একইভাবে বাংলার ই, ঈ, উ, ঊ ধ্বনিগুলো শব্দে সংস্কৃতের মতো উচ্চারণ হয় না। বরং বাংলায় একটি নতুন স্বরধ্বনি সৃষ্টি হয়েছে অ্যা। সংস্কৃত ও বাংলায় লিঙ্গ বিচারেও পার্থক্য রয়েছে, প্রাচীন বাংলায় স্ত্রীলিঙ্গে স্ত্রী প্রত্যয় চলত। আধুনিক বাংলায় এর ব্যবহার লোপ পেয়েছে। সংস্কৃতের মতো কারক ও বিভক্তির ক্ষেত্রে প্রাচীন এবং আধুনিক বাংলায় একই ধারা লক্ষ্য করি আমরা। প্রাচীন বাংলায় কারক ছয়টি_ কর্তা, কর্ম, করণ, অপাদান, অধিকরণ ও সম্বন্ধ। আধুনিক বাংলা ভাষায় কারকের ব্যবহার হয় চারটি_ কর্তা, কর্ম, করণ, অধিকরণ ও সম্বন্ধ। অবশ্য বাংলা ভাষার অধিকাংশ ধাতু সংস্কৃত থেকে এসেছে। উৎপত্তির দিক থেকে বাংলায় মৌলিক কাল দুটি_ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। প্রাচীন বাংলায় যৌগিক ক্রিয়া দেখা গেলেও যৌগিক কালের কোনো উদাহরণ পাওয়া যায় না। বাক্য গঠনের দিক দিয়ে বাংলায় উদ্দেশ্য প্রথমে বসে এবং বিধেয় বসে পরে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উক্তি বাংলায় বর্ণনামূলক বাক্যে ব্যবহার করা হয়।



-নাজমুল হক ইমন

0 comments:

Post a Comment