Sunday, May 16, 2010

বাংলার গাড়ী

0 comments
বাংলাদেশের প্রচীন যানবাহন গুলো বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। নিছে কিছু গ্রামীন ও আধুনিক যানবাহনের বনর্ণা করা হলো। বর্তমান সময়ে যেগুলোর বেশীর ভাগ ভীনদেশ কিন্তু আমাদের সামাজিক জীবনের সাথে অতঃপ্রতভাবে মিশে গেছে।
পালকি
আমাদের দেশে ঠিক কবে-কখন-কীভাবে-কার মাধ্যমে প্রথম এ বাহনের প্রচলন ঘটেছিল, এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে ধরে নেওয়া যায়, প্রাচীনকাল থেকেই নদীমাতৃক বাংলাদেশে বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নৌকা আর পালকি। বিশেষ করে উচ্চ শ্রেণীভুক্ত লোকজন সাধারণত পালকি ব্যবহার করতেন। তখনকার দিনে পাকা কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। তাই যাতায়াতের সুবিধার জন্য পালকিই ব্যবহার করতো তারা। জমিদাররা তাদের জমিদারি দেখতে অথবা রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা পর‌্যবেক্ষণের জন্যও পালকি ব্যবহার করতেন। পালকি বা ডোলি চক্রবিহীন যান যা ছয় বেহারা তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সাথে সাথে এ গাঁও থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে-বর কিংবা মান্যগণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হত। জমিদার-জোতদার থেকে শুরু করে রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের যুবতী, নববিবাহিতা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের গমনাগমনের প্রধান বাহন হিসেবে। পালকি ছাড়া তখন বিয়ে-শাদি কল্পনাই করা যেত না। বর-কনে বহন ছাড়াও নিত্যদিনের বাহন হিসেবে তখন ব্যবহৃত হতো পালকি। এই বাহনটি দেখতে ঠিক বাক্সের মতো। উপরিভাগ টিন অথবা কাঠ দিয়ে গোল করে ছাওয়া। যাত্রী বসার জন্য দেড় ফুট চওড়া, তিন ফুট লম্বা এবং আড়াই ফুট উঁচু করে চারপাশে শক্ত কাঠ দিয়ে আসন থাকে। আগে পালকির মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত, কার পালকিতে কে কত বেশি কারুকাজ করতে পারে। তেমনি প্রতিযোগিতা চলত, কোন বেহারা ভালো সুরে গান গাইতে পারবে। 'উহুম না-রে-উহুম না... ' এই সুরেলা ধ্বনি পালকির এ গান বেহারাদের ক্লান্তি মোচনের পক্ষে বিশেষ সহায়ক।এই বাহনটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বেহারারা। কিন্তু সমাজে তাদের কোনো মর‌্যাদা নেই। আগে জমিদারের সন্তুষ্টির জন্য যারা বেগার খাটত, প্রথমে তারাই পালকি বহন করত। কালক্রমে এদের মধ্য থেকেই সৃষ্টি হয় বেহারা শ্রেণী।
গরুর গাড়ি
 বাশেঁর মাচার সংগে চাকা লাগিয়ে তার সামনে দুইটা বলদ বেধে এই গাড়ী বানানো হয়। এগুলো মাল ও যাত্রী বহনে ব্যাবহৃত হয়। যাত্রী বাহণেরগুলোতে মাচার উপর ছই লাগিয়ে দেওয়া থাকে_রোদ, বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে।
নৌকা
 নদী মাতৃক বাংলাদেশে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য নৌকা বা নাও খুব ব্যাবহৃত হয়। আদিকালে নৌকা তৈরি হতো বড় কাঠের গুঁড়ির মাঝখানটা খোদাই করে। পরে বাঁশ, বেত, চামড়া এবং কাঠের আঁটি বেঁধে নৌকা তৈরি করা হতো। তবে শেষ পর্যন্ত কাঠই ছিল নৌকা তৈরির প্রধান উপকরণ। কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরির বিষয়গুলোকে খুব ভালোভাবেই স্থান দেওয়া হয়েছে প্রদর্শনীতে। কাঠ চেরাইয়ের আঙ্গিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে একটি আস্ত কাঠের গুঁড়ি ও করাত। দেখে মনে হবে, কাঠ চেরাই করা হচ্ছে। চেরাই করা কাঠকে বলা হয় তক্তা। এই তক্তা দিয়েই বানানো হয় নৌকা। নৌকা তৈরিতে লাগে পেরেক, গজাল, তারকাঁটা ইত্যাদি। তা ছাড়া ছই বানাতে লাগে মুলিবাঁশ। গজাল মেরে নৌকার বডি যখন বানানো হয়, তখন নৌকাকে বিশেষ কায়দায় কাত করে রাখা হয়।
টমটম
উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঢাকার পথে ঘোড়ার গাড়ির দাপট ছিল প্রবল। সরদঘাট ও ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের সামনে ছিল আলাদা ঘোড়াগাড়ি স্ট্যান্ড। আর্মেনীয় ব্যবসায়ী সি. এম. সিরকো ঢাকায় প্রথম ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসেন ১৮৫৬ সালে। তখন এর নাম ছিল 'ঠিকা গাড়ি'। সেই সময়ে যাত্রী বসার দিকটা ছিল বাক্সের মতো। সিরকোর এই গাড়ি কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দেখতে দেখতে এই 'ঠিকা গাড়ি' ঢাকার প্রধান বাহনে পরিণত হয়। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৮৬৭ সালে ঢাকায় 'ঠিকা গাড়ির' সংখ্যা ছিল ৬০টি। সাত বছর পর দাঁড়ায় তিন শটিতে। ১৮৮৯ সালে এর সংখ্যা হয়ে যায় দ্বিগুণ। ঢাকাইয়ারা এই গাড়িটিকে বলে 'টমটম'। উনিশ শতকের প্রথম দিকে মোটরগাড়ির আগমনে ঘোড়ার গাড়ির কদর কমতে থাকে। এখন ঢাকার পথে চলাচল করছে বিশ-বাইশটি ঘোড়ার গাড়ি। গোলাপশাহ মাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করে গাড়িগুলো। মাঝেমধ্যে উৎসব-অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে।
মহিষের গাড়ি
দুই দশক আগেও গ্রামের কোনো বধূর বাপের বাড়ি যাওয়ার বা স্বামীর ঘরে আসার প্রধান বাহন ছিল মহিষের গাড়ি। এখনো নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, লালপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে মহিষের গাড়ি পাওয়া যায়। অবশ্য সংখ্যায় অল্প। আজকাল মালামাল আনা-নেওয়ার কাজেই বেশি ব্যবহার হয়।  নছিমন
সাধারণ ভ্যান রিকশার চেয়ে তিনগুণ বড় তিন চাকার এই বাহনটি স্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে চলে। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল, হেডলাইট, মাইক্রোবাসের চাকা, কাঠের পাটাতন আর কিছু লোহা-লক্কড় দিয়ে এ গাড়ি তৈরি। প্রায় ১৪ জন যাত্রী  বহন করতে পারে। যশোরের গ্রামাঞ্চলে এই বাহন আলম সাধু নামে পরিচিত। এছাড়া করিমন, আগলামন নামেও পরিচিত এলাকা ভেদে।ভ্যান
ভ্যান তিন চাকার একটি যান যা প্রধাণত মাল ও গরু-ছাগল পরিবহণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও মানুষও বহন করা হয়।রিকশা
উনিশ শ তিরিশ ও চল্লিশের দশকে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে রিকশা হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। ১৯১৯। বার্মা থেকে রিকশা প্রথম ঢোকে পূর্ব বাংলায়। চট্টগ্রামে। মজার কথা হল- ঢাকায় কিন্তু রিকশা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি। এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়নগঞ্জের ও ময়মনসিংহের নেত্রকোনার ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে সাইকেল রিকশা আনে। ঢাকায় চলত ঘোড়াগাড়ি, পালকি আর ধোলাই (ও অন্যান্য) খালের নৌকা। কাজেই নতুন ত্রিচক্রযানটি ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল।
ট্রাক

ট্রাক প্রধানত মাল বাহী যান্ত্রীক বাহন। সি.এন.জি. অটোরিকশা
প্রধাণত এটি রিক্সার বিকল্প যান। পার্থক্য শুধু এটি গ্যাসে চলে আর রিকশা কায়িক শ্রমে চলে।  বাস
বাস দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষ পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অভ্যান্তরীন বিভিন্ন রুটেও বাস চলাচল করে। লঞ্চ
লঞ্চ একটি আধুনিক জলজ যান। যা প্রধাণত নদীতে চলাচল করে। মানুষ ও পন্যবাহী পরিবহণ।
ট্রলি
                                                                    ছবি : ফোকাস বাংলা
ব্রিটিশ আমলে রেললাইন চেক করা হতো এ ঠেলা ট্রলি দিয়ে। কিন্তু এখনো রয়েছে বহু পুরনো এ ট্রলির ব্যবহার। ছবিটি লালমনিরহাট-সান্তাহার রেললাইনের গাইবান্ধার কুপতলা এলাকা থেকে তোলা।

0 comments:

Post a Comment