মসলিন ইতিহাসখ্যাত অসাধারণ বস্ত্রশিল্পের নাম। এর কদর ছিল বিশ্বজুড়ে। কথিত আছে যে, এক টুকরো মসলিন ছিল ৪০ হাত দীর্ঘ আর প্রস্থে ছিল ২ হাত। এটি এতই সূক্ষ্ম ছিল যে, এক টুকরো মসলিনকে একটি আংটিতে সহজেই পোরা যেত। একটা সময় ছিল যখন এই বস্ত্রটি সোনারগাঁয়ে ব্যাপকভাবে তৈরি হতো। আর বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল।
জেমস টেলর তার ‘ফটোগ্রাফি অব ঢাকা’য় ১৭৪৭ সালের ঢাকাই মসলিনের রফতানি সংক্রান্ত যে হিসাব দেখিয়েছেন তাতে উল্লেখ আছে, তখন সোনারগাঁও থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মসলিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো। অন্যদিকে খ্যাতিমান পর্যটক ইবনে বতুতা সোনারগাঁয়ের যে বর্ণনা করেছেন তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সোনারগাঁও একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী ছিল এবং এই বন্দরনগরীর সাথে চীন, ইন্দোনেশিয়া (জাভা) ও মালয় দ্বীপপুঞ্জের সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল’।
রালফফিচের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘সে সময়ে সোনারগাঁও থেকে প্রচুর তাঁতবস্ত্র অর্থাৎ পৃথিবীবিখ্যাত মসলিন ভারত, সিংহল, মালাক্কা, সুমাত্রাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। জেমস টেলরের মতে, তখন মসলিন ক্রয়-বিক্রয়ের প্রসিদ্ধ বাজার ছিল পানাম নামক স্থানটি। পানামনগরের কাছেই অবস্থিত বিশাল আকৃতির খাসনগন দিঘি, যা আজও বিদ্যমান, সে দিঘির স্বচ্ছ পানিতে মসলিনের সুতা ধুয়ে দিঘির চারপাশে মসলিন সুতা টানা দেওয়া হতো। জেমস অ্যাটকিনসন উনিশ শতকের প্রথমদিকে মসলিন সর্ম্পকে লিখেছিলেন, ‘এই প্রদেশে (বাংলার সর্বত্রই) ব্যাপকভাবে মসলিন তৈরি হয়ে থাকে’। তবে ভালো মানের মসলিন তৈরির জন্য যে ধরনের সহায়ক পরিবেশের প্রয়োজন ছিল তার জন্য সোনারগাঁ ছিল উল্লেখযোগ্য। কারণ যেসব অঞ্চল প্রতি বছর গঙ্গার জলে প্লাবিত হয় সেসব এলাকায়ই শ্রেষ্ঠ জাতের তুলা উৎপন্ন হতো। উন্নত মসলিন তৈরির জন্য উন্নত কার্পাস, স্বচ্ছ পানি, দ কারিগর এবং আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন ছিল। সোনারগাঁও অঞ্চল ছিল মসলিন তৈরির এক উপযোগী স্থান। তবে মজার বিষয় হলো, মসলিন মোগল রাজা-রানীদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই অনেক বেশি সমৃদ্ধি লাভ করে। শুধু তাই নয়, সে সময়ের উল্লেখযোগ্য বণিক-পর্যটকদের মন্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, এ মসলিনের মতো বিশ্বের কোথাও এত উন্নত, নিখুঁত এবং নিপুণ কারুকাজের বস্ত্রশিল্প ছিল না। বাংলার সুবাদাররা মোগল বাদশাহদের দৃষ্টি কাড়তে তাদের কাছে উপঢৌকন হিসেবে মসলিন শিল্পকেই বেছে নিতেন। জানা যায়, এমনকি সম্রাজ্ঞী নুরজাহান এই মসলিন বস্ত্রের একজন অতি অনুরাগী ছিলেন।
জানা যায় যে উত্তর ভারতীয় বন্দর শহর মসলিপাটনাম থেকে প্রাচীন গ্রীসের বনিকরা কিনে নিয়ে যেত,ঐ শহরকে Maisolos নামেও ডাকা হত।অনেকে ধারন করেন Maisolos মসলিন শব্দটি এসেছে। আবার অনেকে ধারনা করেন মসলিন কাপড় বিক্রির জন্য প্রশিদ্ধ হওয়ায় ঐ স্থানের নাম মসলিনের নামে করা হয়েছে। বিখ্যাত পরিব্রাজক মার্কোপোলো এই অঞ্ছলে মসলিন কাপড়ের কথা বলেছেন
অন্যভাবে এস. সি. বার্নেল ও হেনরি ইউল নামের দুইজন ইংরেজের অভিধান "হবসন জবসন"-এ বলা হয়েছে মসলিন শব্দটি এসেছে ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র মসুল থেকে। মসুলও সূক্ষ্ম কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। এই 'মসূল' এবং 'সূক্ষ্ম কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।
নবম শতাব্দীতে আরব বনিক রুমি নামে এক পাতলা কপড়ের কথা উল্লেখ করেছেন যা বাংলায় উৎপাদিত।
যেভাবে হোক মসলিন যে আমাদের দেশীয় উৎপাদন তাতে সন্দেহ নাই।
অভিজাত শ্রেনীর পরিধেয় কাপড়,ছাকুনী,ব্যান্ডেজ,কাপড় প্রভৃতিতে মসলিন ব্যাবহার হত।এমনকি মমির গায়ে যে কাপড় প্যাচানো হত তাও মসলিনের তৈরি।
বহু প্রাচীনকাল থেকে এই দেশের তাতীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উত্তম কার্পাস থেকে মিহি তন্তু উত্পাদন করে সুতিবস্ত্র বয়ন করে আসছেন। এর মধ্যে মসলিন বস্ত্র তার সূক্ষ্মতা ও নান্দনিকতায় বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। অনেক বরেন্যরা লিখেছেন, ঈসা নবীর জন্মের প্রথম শতাব্দীকাল থেকেই বঙ্গদেশে বয়নশিল্প গড়ে উঠেছিল। বংশপরম্পরায় অর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই শিল্প দ্রুত উত্কর্ষ লাভ করে। ঢাকা, সোনারগাঁও, ধামরাই, তিতাবাদি, জঙ্গলবাড়ি ও বাজিতপুরের তাতীরাই এই ব্যাপারে সিদ্ধ হস্ত ছিল।
প্রাচীন আমল থেকেই বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সুখ্যাতি থাকলেও মূলত মুঘল আমলে ঢাকা যখন রাজধানী হয় তখন থেকেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাপড়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে । সম্রাট, নবাবেরা মসলিন কাপড় কেনা আরম্ভ করেন চড়া দামে। সে যুগে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা, ধামরাই, সোনারগাঁ, টিটবাদি, জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুর। জঙ্গলবাড়ি অধিকাংশের পেশা তখন মসলিন বোনা। উনিশ শতকের প্রথমভাগেও সেখানে একাজে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় একশ তাঁতি পরিবার। জঙ্গলবাড়ি থেকে মাইল কুড়ি দূরে বাজিতপুর- ওখানে জন্মাতো উচুঁমানের কার্পাস, যা থেকে তৈরি হতো উঁচুমানের মসলিন। আজ থেকে দু'শ বছর আগেও বিদেশী বণিকেরা সোনারগাঁ থেকে মসলিন বিদেশে রপ্তানী করতো।
সাধারনত, মহিলারাই সুতা কাঁটা আর সূক্ষ্ম সুতো তোলার মত পরিশ্রম এবং ধৈর্যের কাজে নিয়োজিত ছিল। সুতো তোলার সময় কম তাপ এবং আর্দ্রতার দরকার হতো। তাই একেবারে ভোর বেলা আর বিকালের পরে এ কাজ করা হতো। মজার ব্যাপার হলো- আর্দ্রতার খোঁজে অনেক সময় এমনকি নদীতে নৌকার ওপর বসে সুতা কাটার কাজ চলত। একজন মহিলা এভাবে প্রতিদিন সুতো কেটেও মাসে মাত্র আধা তোলা সুতা তুলতে পারতেন। এই পরিশ্রমসাধ্য কাজের কারণে দক্ষ সুতা কাটুনির সংখ্যা অনেক কমে আসতে থাকে উনিশ শতকের শুরু থেকেই। জানা গিয়েছে- এই রকম সূক্ষ্ম সুতো কাটার কাজ অঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও এতোটা ভাল হতো না । এর কারণ ধরা হয় দু’টো- ঢাকার ফুটি কার্পাস আর শ্রমিকের দক্ষতা ও পরিশ্রম।
মসলিন তৈরির কাজটি ছিল ভীষন জটিল, কঠিন, সময়সাধ্য- তারচেয়েও বড় কথা হলো সেটা তৈরির জন্য দরকার হতো অসামান্য নৈপুণ্য আর আসুরিক ধৈর্য। মোটামুটি যে ক’ধাপ পেরিয়ে তৈরি হতো মসলিন সেগুলো হলো; সুতা নাটানো, টানা হোতান, সান বাঁধা, নারদ বাঁধা, বু-বাধাঁ, আর সবশেষে কাপড় বোনা । এসব শেষে একজন তাঁতি আর তার দু’জন সহকারীর লাগতো কমপক্ষে দু’তিন মাস।
মসলিন তৈরি শেষে ওগুলো ধোয়া হতো। সম্রাট আকবর এর আমালে সোনারগাঁ’র কাছে এগোরো সিন্ধুর জল কাপড় ধোয়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। আসলে এটা যে শুধু জলের গুনে হতো তা নয়, এর সাথে ছিল ভাল ক্ষার বা সাবান আর ধোপার দক্ষতা। মসলিন ধোবার জন্য রীতিমতো একটা শ্রেনীর মানুষই তৈরি হয়েছিল। আঠারো শতকের গোড়ায় একখন্ড মসলিন ধোয়ার খরচ পড়তো দশ টাকা। আবার ধোয়ার সময় কাপড়ে কোন দাগ লাগলে বিভিন্ন ফলের রস দিয়ে সেটা তুলে দেয়া হত। কাপড় ধোবার সময় কোনো সুতো সরে গেলে সেটা ঠিক করতো দক্ষ রিফুকাররা, তাদেরকে বলা হতো নারোদিয়া। এরপর শঙ্খ বা ছোট মুগুর দিয়ে পিটিয়ে মোলায়েম করা হতো। মোলায়েম করার সময় ছিটানো হতো চাল ধোয়া জল। একাজে নিয়োজিতরা কুন্ডুগার নামে পরিচিত। তারপর সাবধানে ইস্ত্রি করা হতো মসলিন। কোন কোন মসলিনে সুঁচের বা চিকনের কাজও করা হতো। কোন কোন সময় রঙও করা হতো। ঢাকার চিকনের কাজেও যথেষ্ট সুনাম ছিল, এখনও আছে । এরপর কাপড়গুলোকে ভালমতো ঠোঙাবন্দী করা হতো, একাজ যারা করতো তাদের বলা হতো বস্তাবন্দী।
সে সময়ে মসলিনের মানগত দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত এতে করা হতো, এর মধ্যে শবনম, নয়নসুখ, জামদানি, সরবন্দ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাধারণত মসলিনের দাম নির্ভর করত এর আয়তন, ওজন, সূক্ষ্মতা ও বুননের ওপর। যে কাপড় দীর্ঘ হতো বেশি, তাতে সুতার সংখ্যা হতো বেশি কিন্তু ওজন হতো কম সেটাই ছিল উৎকৃষ্ট। সবচেয়ে জনপ্রিয় মসলিনের নাম ছিল মলবুস খাস যার অর্থ খাসবস্ত্র। এটি মোগল সম্রাট ও তার পরিবারের জন্য নির্ধারিত ছিল। অন্যদিকে বাংলার সুবাদার বা নবাবের জন্য নির্ধারিত ছিল সরকার-ই-আলা।
মলবুস খাস
'মলবুস খাস' মানেই হলো খাস বস্ত্র বা আসল কাপড়। এজাতীয় মসলিন সবচেয়ে সেরা আর এগুলো তৈরি হতো সম্রাটদের জন্য। আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাসের মতো আরেক প্রকারের উঁচু মানের মসলিন তৈরি হতো, যার নাম 'মলমল খাস'। এগুলো লম্বায় ১০ গজ, প্রস্থে ১ গজ, আর ওজন হতো ৬-৭ তোলা। ছোট্ট একটা আংটির মধ্যে দিয়ে এ কাপড় নাড়াচাড়া করা যেতো। এগুলো সাধারণত রপ্তানি করা হতো।
সরকার-ই-আলা
এ মসলিনও মলবুস খাসের মতোই উঁচুমানের ছিলো। বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হতো এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হতো বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হতো ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হতো প্রায় ১০ তোলা।
ঝুনা
'ঝুনা' শব্দটি, জেমস টেইলরের মতে, এসেছে হিন্দী ঝিনা থেকে, যার অর্থ হলো সূক্ষ্ম। ঝুনা মসলিনও সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হতো, তবে সুতার পরিমাণ থাকতো কম। তাই এজাতীয় মসলিন হালকা জালের মতো হতো দেখতে। একেক টুকরা ঝুনা মসলিন লম্বায় ২০ গজ, প্রস্থে ১ গজ হতো। ওজন হতো মাত্র ২০ তোলা। এই মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হতো না, পাঠানো হতো মোঘল রাজ দরবারে। সেখানে দরবারের বা হারেমের মহিলারা গরমকালে এ মসলিনের তৈরি জামা গায়ে দিতেন।
আব-ই-রওয়ান
আব-ই-রওয়ান ফারসি শব্দ, অর্থ প্রবাহিত পানি। এই মসলিনের সূক্ষ্মতা বোঝাতে প্রবাহিত পানির মতো টলটলে উপমা থেকে এর নামই হয়ে যায়। লম্বায় হতো ২০ গজ, চওড়ায় ১ গজ, আর ওজন হতো ২০ তোলা। আব-ই-রওয়ান সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর সত্যতা নিরূপন করা না গেলেও উদাহরণ হিসেবে বেশ চমৎকার।
যেমন: একবার সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে তাঁর মেয়ে উপস্থিত হলে তিনি মেয়ের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বললেন তোমার কি কাপড়ের অভাব নাকি? তখন মেয়ে আশ্চর্য হয়ে জানায় সে আব-ই-রওয়ানের তৈরি সাতটি জামা গায়ে দিয়ে আছে। অন্য আরেকটি গল্পে জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খান বাংলার সুবাদার থাকাকালীন তাঁর জন্য তৈরি এক টুকরো আব-ই-রওয়ান ঘাসের উপর শুকোতে দিলে একটি গরু এতোটা পাতলা কাপড় ভেদ করে ঘাস আর কাপড়ের পার্থক্য করতে না পেরে কাপড়টা খেয়ে ফেলে। এর খেসারৎস্বরূপ আলীবর্দী খান ঐ চাষীকে ঢাকা থেকে বের করে দেন।
খাসসা
ফারসি শব্দ খাসসা। এই মসলিন ছিলো মিহি আর সূক্ষ্ম, অবশ্য বুনন ছিলো ঘন। ১৭ শতকে সোনারগাঁ বিখ্যাত ছিলো খাসসার জন্য। ১৮-১৯ শতকে আবার জঙ্গলবাড়ি বিখ্যাত ছিলো এ মসলিনের জন্য। তখন একে 'জঙ্গল খাসসা' বলা হতো। অবশ্য ইংরেজরা একে ডাকতো 'কুষা' বলে।
শবনম
'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ভোরের শিশির। ভোরে যদি শবনম মসলিন শিশির ভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেতোনা, এতোটাই মিহী আর সূক্ষ্ম ছিলো এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হতো ২০ থেকে ২২ তোলা।
তাছাড়া ডোরিয়া,নয়ন সুখ,বদন খাস,সর-বন্ধ,রঙ্,আলিবালি, তরাদ্দাম,তনজেব,সরবুটি,চারকোনার কথাও জানা যায়।
উপরোক্ত মসলিন ছাড়াও আরও একধরনের মসলিন পাওয়া যেত,যা এই দেশে তাতীরা এখনও সেই অনুরূপ কাপড় বোনার চেষ্টা করে যার নাম জামদানী। প্রকৃতপক্ষে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা করা মসলিনকে।বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর, জামপুর ও কাচপুর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার জামদানি শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর উল্লিখিত ইউনিয়নগুলোর কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি জামদানি পল্লী। এর মধ্যে আছে সাদিপুর ইউনিয়নের চেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, বারগাঁও, আন্দারমানিক, শিঙ্গলাব; জামপুর ইউনিয়নের হাতুরাপাড়া, তালতলা, মুছারচর, এবং কাচপুর ইউনিয়নের বেহাকৈর, কালিয়াবিটা, গাবতলা, সুকেরটেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কিছু অংশে ও রূপগঞ্জ উপজেলার বৃহৎ অংশজুড়ে উৎপাদিত জামদানি শিল্প ও অতীতের মসলিনের মতো ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করছে দেশে-বিদেশে। তাছাড়া সব বয়সের নারী-পুরুষদের নিখুঁতভাবে জামদানিতে কারুময় কাজ করতে দেখা যায়। জামদানি সুতা মার দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁতে বুননের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজটি নারীরাই করে থাকে। এখানে উৎপাদিত এক একটি জামদানির খুচরা মূল্য ৮০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সেই মসলিন আজ নেই।ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীযভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত করা আমদানীকৃত কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিলো। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁতশিল্পে ধ্স নামে।
কথিত আছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয়,অনেকে বলেন তাঁতীরা নিজেরাই নাকি নিজেদের আঙুল কেটে ফেলতো, যাতে কম পারিশ্রমিকের কাজে তাদের বাধ্য না করা হয়।
লিখেছেন :
বেলের কাঁটা• • সুত্রগুলো-
১,
২,
৩,
৪,
৫,
৬,
৭