গুহা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়ের নাম। অনেকেরই ধারণা গুহা প্রাচীন মানুষের সৃষ্টি। বসবাস অথবা গোপন কোনো কাজে খুব কৌশলে নির্মাণ করা হয়েছে এসব। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। সত্যিকার অর্থে গুহা প্রকৃতিরই সৃষ্টি। বরফরাজ্য, মরুভূমি কিংবা সমুদ্রের মতোই পৃথিবীর এক বিচিত্র সৃষ্টির নাম গুহা। অন্ধকারে ঢাকা গভীরতার জন্য অনেকেই গুহাকে মৃত্যুফাঁদ বলে অভিহিত করেন। আবার কোনো কোনো গুহা প্রচণ্ড রকম শীতল হয়ে থাকে। তবে অন্ধকার এবং গভীর হলেও সর্বক্ষেত্রে গুহা মৃত্যুফাঁদ নয়।
গুহার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিলা বিন্যাস চোখে পড়ে অহরহ। এক্ষেত্রে রুক্ষ ছিন্ন ভিন্ন শিলার পাশাপাশি অনেক সুন্দরতম শিলাও দেখা যায়। অনেক গুহাই পৃথিবীর অন্যতম সুন্দরতম স্থান বলে বিবেচিত হয়। কেননা অনেক গুহাকে কেন্দ্র করেই অনেক ক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে নদী, ঝরনা, জলপ্রপাত, হ্রদ। কোনো কোনো গুহায় আবার রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবন, বালি ও চোরাবালির মতো মরণফাঁদ।
কেন গড়ে ওঠে গুহা? এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে গুহা গড়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য কয়েকটি কারণের একটি হলো 'লাভা টিউব'। লাভা টিউব বা লাভা নির্গমণের ফলে সৃষ্ট নলাকার গুহা থেকেই গুহার উৎপত্তি। লাভা সাধারণত আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত হওয়ার সময় একটা ভূ-গর্ভস্থ পথ ধরে স্রোতের মতো এগোয়। সে কারণে লাভার চলার পথ ফাঁপা হয়ে যায়। আর এভাবেই গুহা তৈরি হয়। এছাড়া পানি চুঁইয়ে মাটির নিচে যায়। মাটির নিচে পাথরের ফাঁকে আগের জমাকৃত পানির সঙ্গে এই পানি জমা হয়। পানিতে বিদ্যমান ক্ষারে এসব পাথর হাজার হাজার বছর ধরে গলতে থাকে। আর এভাবে পাথরের জায়গায় তৈরি হয় বড় বড় ফাঁপা প্রকোষ্ঠ। এ প্রকোষ্ঠে পাথরের উপরের পানি নেমে যায়। ফলে উপরের ফাঁকা অংশ হয়ে পড়ে জলশূন্য। আর এভাবেই একসময় তা গুহায় রূপ নেয়। কোনো কোনো স্পেলিওলজিস্ট-এর মতে, ভূ-গর্ভস্থ পাথর অধঃক্ষেপণ, তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এর খনিজ উপাদান ও বুনট পরিবর্তিত হয়ে পলির রূপ ধারণ করে এবং ওই পাথরের স্থান ফাঁকা হয়ে তা গুহায় রূপ নেয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যারা গুহা নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের স্পেলিওলজিস্ট আর যারা গুহা সন্ধান করেন তাদের স্পিলাংকার্স বলা হয়।
ভূ-বিজ্ঞানীরা গুহার ভেতরের তাপ, বাতাসের চাপ ও সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো গুহাকে ভাগ করে থাকেন। শ্রেণী অনুসারে ভাগগুলো হলো_
টুইলাইট জোন: গুহার প্রবেশমুখে যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায়, তাকে ঞরিষরমযঃ ুড়হব বা প্রদোষ অঞ্চল বলা হয়।
ভ্যারিয়েবল জোন : গুহার যে অংশে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাপ উঠানামা করে তাকে ঠধৎরধনষব ুড়হব বা পরিবর্তনশীল তাপাঞ্চল বলে।
গুহার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের বিন্যাস রয়েছে। হালকা ক্ষারীয় পানি গুহাতে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে গঠিত হয় প্রাথমিক বিন্যাস 'স্পেলিওথেমস'। গুহার ছাদ থেকে পানি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ার সময় কিছুটা ক্যালসিয়াম কার্বনেট গুহার ছাদে ও মেঝেতে থেকে যায়, এ জিনিস ক্রমাগত জমে গুহায় বিন্যস্ত হয়। গুহার ছাদে ঝুলন্ত এ ধরনের বিন্যাসকে বলে 'স্ট্যালাকটাইটস'। আর গুহার মেঝেতে গঠিত বিন্যাসকে 'স্ট্যালাগমাইটস' বলে, স্ট্যালাকটাইটস ও স্ট্যালাগমাইটস বিন্যাস পরস্পরের সঙ্গে মিশে নতুন এক ধরনের বিন্যাসের জন্ম দেয়। একে বলে গধরহংঃধু বা স্তম্ভ।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গুহা আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবে এখনো এমন অনেক অনাবিষ্কৃত গুহা রয়েছে যা আগেরগুলো থেকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় বেশি। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গুহার মধ্যে মালয়েশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের 'সারাওয়াক চেম্বার' সবচেয়ে বড় ভূ-গর্ভস্থ প্রকোষ্ঠ। এটি দৈর্ঘ্যে ২, হাজার ৩০০ ফুট ও প্রস্থে ১ হাজার ৪৭৬ ফুট। ফ্রান্সের রিজেয় জাঁ বার্নাদ বিশ্বের সবচেয়ে গভীর গুহা। এটি ৫ হাজার ২৫০ ফুট গভীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির বিপুল গুহাশ্রেণীই পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা গুহা পথ। এ গুহার ভেতরদিকে রয়েছে ৫৫০ কিলোমিটার লম্বা গলিপথ ও খাদ। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমুদ্রের তলদেশে এমন আরও শ'খানেক বিখ্যাত গিরিপথ ও গুহামালা রয়েছে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই গুহা বিভিন্ন জীব-জন্তু ও মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পুরাবিদদের ধারণা, গুহাকে মানুষ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করে ৫ লাখ বছর আগে থেকে। তাদের মতে, ইউরোপের প্রাগৈতিহাসিক মাথা লম্বা দীঘল মানুষ 'ক্রোম্যাগননরা' খ্রিস্টপূর্ব ৪০ হাজার বছর থেকে গুহাচিত্র আঁকা শুরু করে। গুহার নিশ্ছিদ্র আঁধারের সঙ্গে বহু প্রাণী বেশ মানিয়ে নিয়েছে। গুহাবাসী প্রাণীদের মধ্যে বাদুড়, সাপ, গিরগিটি, বিছাপোকা, ছারপোকা ছাড়াও আরও অনেক প্রজাতির পোকামাকড় বাস করে। মাটির ওপরের প্রাণীদের মতো এরা চোখনির্ভর নয়। এদের গন্ধ, স্পর্শ ও শ্রবণের অনুভূতি খুব তীক্ষ্ন। এরা এসব অনুভূতি দিয়েই গুহায় জীবনধারণ করে। গুহাতে এমন কিছু প্রাণী বাস করে যেসব প্রাণী গুহার অন্ধকার ছাড়া অন্য কোথাও বাস করে না। বা বলা উচিত বাস করতে পারে না। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এদের 'ট্রোগলোডাউট' বলা হয়। সপ্তদশ শতকে একদল বিজ্ঞানী এক গুহাবাসী গিরগিটির সন্ধান পায়। তারা সেটিকে ভুলে শিশু ড্রাগন বলে চিহ্নিত করে। এ নিয়ে ইউরোপজুড়ে তখন ভীষণ তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
গুহা সন্ধান ও আবিষ্কার একটি অত্যন্ত কষ্টকর ও ব্যয়বহুল কাজ। এ কাজে প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় হয়। সবচেয়ে কষ্টসাধ্য হলো_ গুহার অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা। তবে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য ও উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে এখন গুহা সন্ধান অনেক সহজ হয়েছে। গুহা সন্ধানের ক্ষেত্রে ভূ-তাত্তি্বকরা মাটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভূ-গর্ভে শব্দ প্রেরণ করেন। এ শব্দ মাটির নিচে বিভিন্ন শিলার স্তর থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। হাইড্রোফোন যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিফলিত ধ্বনি ধারণ করে এবং কম্পিউটারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিধ্বনির লেখচিত্র অঙ্কন এবং পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন শিলার গঠন প্রকৃতি ও ফাঁপা কিনা তা বুঝা যায়। এভাবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গুহা সন্ধান করা হয়।
রণক ইকরাম
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2011
(294)
-
▼
January
(90)
- দিঘিরপাড় মসজিদ, ওসমানী নগর; সিলেট
- খুশকি
- ওলমেক সভ্যতা
- শীতকালে সকালে এবং সন্ধ্যায় আমাদেরও মুখ থেকে ধোঁয়া ...
- দ্য উইটেলসব্যাক গ্রাফ ডায়মন্ড
- মানুষখেকো গুহা
- ইয়েলো রেইন
- ক্রপসার্কেল
- টেগর লজ, কুষ্টিয়া
- ট্রি-হাউস
- আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট
- ডেলফি মন্দির
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট
- মসলিন
- ধনুক
- ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও স্থানের নামকরণের কারণ
- ইংরেজি শব্দের উৎস সন্ধান
- উপমহাদেশের প্রথম গৌরবময় বিদ্রোহ
- কালো জাদু
- মণিপুরী জাদুঘর
- গড়াই
- কার্টুন
- গুহা
- পূর্ণিমায় রাস নৃত্য
- লিপিষ্টিক বা ঠোঁট পালিশ
- বড়দিন
- বিশ্বকাপ ক্রিকেট
- বুশ হাউস
- ইগুয়াজু জলপ্রপাত
- ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
- নায়াগ্রা জলপ্রপাত
- সিয়ার্স টাওয়ার
- লুচি ফোলে কেন
- রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির
- কুকুর গাড়ি
- কালী মন্দির, চালিতাবাড়িয়া, কেশবপুর, যশোর
- পৌষসংক্রান্তি
- সমুদ্রের পানি ব্যবহার: ডুববে না বাংলাদেশ ও মালদ্বী...
- ℞ লেখার অন্তরালে
- রিসমন্ড প্রাসাদ
- হুতু-তুস্সি বৃত্তান্ত
- ওসমানী জাদুঘর
- ইকোপার্ক, কুয়াকাটা
- ইরিয়ান জায়া
- অ্যাজমা রোগীদের ইনহেলার ব্যবহার বিধি
- চুলকানি
- কাঁধের পেশির সমস্যায় করণীয়
- Palpitation বা বুক ধড়ফড়
- শুধু শীতপ্রধান দেশেই তুষারপাত হয় কেন
- নবাববাড়ি, প্রিতিমপাশা, সিলেট
- ইস্টার আইল্যান্ড
- সোনিয়া জেমস
- নটিক্যাল সায়েন্স
- পাকিস্তানে জমিদার নন্দনের প্রেম প্রত্যাখ্যানের জের
- মেহেরজান
- পার্ল হারবার
- ভার্সাই
- ঝালকাঠি
- বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের প্রদর্শনী
- জুতা আবিষ্কারের কাহিনী
- উটের দুধ-মূত্রে ক্যান্সার সারে!
- মীর জাফর
- MLM Business Illegal
- Log in Window XP without Password
- Some Moments With Bangobondhu
- গাইবান্ধা
- নাটোর
- বনসাই শিল্পের গোড়ার কথা
- চণ্ডীমুড়া, কুমিল্লা
- হেলেন
- ছুটি খাঁ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম
- জাদুঘর
- মাদাগাস্কার
- করিডা ডি টোরস
- তিব্বত
- ফরাশগঞ্জ
- চারশত বছরের ঢাকা
- Dhaka International Trade Fair 2011
- প্রথম নর্তকী মাতা হারি
- Find Friend in Facebook
- দুশো বছরে বাংলায় লালনভাব ও লালনসঙ্গীতের ক্রম ধারাপাত
- মিন্দানাও
- জেনে নিন
- ভোলা
- বুর্জ খলিফা
- মুখের জ্বালাপোড়া এবং করণীয়
- স্বামী-স্ত্রীর পছন্দে অমিল
- নববর্ষ
-
▼
January
(90)
Thursday, January 27, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment