Saturday, January 22, 2011

সোনিয়া জেমস

0 comments
আমার কী অপরাধ ছিলো?
আমার বিয়ে হয়েছিলো আজ থেকে ৯ বছর আগে। তেঁজগাও ক্যাথলিক চার্চে। নির্মল গোমেজ এবং শ্যামলী গোমেজ এর বড়ো ছেলে সানি ফিলিপ গোমেজ এর সাথে। তারিখটি ছিলো ২০০১ সালের ২৪ নভেম্বর। বিয়ের পর দিন জানতে পারলাম আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা (বি.এসসি) সাংস্কৃতিক চচর্া এবং শৈল্পিক মনের কোনো গুরুত্ব নেই শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে। আমি একটি বাইং হাউজ এ মাজেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করছিলাম এবং ভালো বেতন পাচ্ছিলাম। শ্বশুর আদেশ করেন চাকরি করা চলবে না এবং আমার স্বামীরও তাতে মত ছিলো। অথচ আমার স্বামী আমাকে পছন্দ করেছিলো আমার চাকরির এবং অন্যান্য যোগ্যতা দেখে। কিন্তু বিয়ের পরদিন দেখলাম সে অন্য মানুষ। সে আর আমি একই অফিসে চাকরি করতাম। এভাবেই আমার সংসার শুরু হয়। আমার বাবা-মা তাদের সঞ্চয়ের একটা বড়ো অংশ আমার পড়ার পিছনে খরচ করতেন। বাবা-মার ইচ্ছা ছিলো এম.এ পাশ করি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির এমন আদেশ শুনে তারা খুব শীতল গলায় বললেন স্বামীর বাড়ি এখন তোমার বাড়ি, তাই তারা যাতে খুশি হয় এভাবে চলবে। বাবা মা যেনো পর হয়ে গেলো চিরতরে আর আমি নিজেকে নিঃসঙ্গ আবিষ্কার করলাম। আমার স্বামী পরকীয়া শুরু করলো আর আমি জানতে চাইলে অত্যাচার করতো। অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করতো। কোন দিন সাহস হয়নি আমার সংসার ফেলে চলে যাবার। আমার নিজের বাবা মা স্পষ্ট বলে দিয়েছিলো আমাকেই সংসার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। বাঙালি মেয়ে জন্মালে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ২০০৮ সালে মে মাসে তার চাকরির সূত্র ধরে আমরা প্রবাসী হই।
একসময় সে বিয়ের পরিকল্পনার করছে বলে শুনলাম। স্বামীকে প্রশ্ন করলাম, উত্তর পেলাম- যদি আমি মুখ বন্ধ না রাখি তবে নাকি আমায় খুন করবে। যদি অ্যাব্রোসন না করাই তবে নাকি আমায় ডিভোর্স দিবে। অত্যাচার আর ডিভোর্স এর ভয়ে অ্যাব্রোসন করতে বাধ্য হলাম। কিন্তু সেটা ছিলো তার সবচেয়ে বড় ফাঁদ। আর আমি বোকার মতো সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলাম। সে ইতিমধ্যে ডিভোর্স এর জন্য আবেদন করেছিলো, আমি জানতাম না। আর সে আমাকে জোর করে বাধ্য করে ডিভোর্স পেপার এ সাইন করাতে। এভাবে জোর করে ডিভোর্স দিয়ে সে আমাকে বাংলাদেশ এ পাঠায় এবং তার অফিস ডিভোর্স বিরোধী খ্রিস্টান অফিস বিধায় তারা তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়। চাকরির ক্ষেত্রে সে প্রচুর অভিযুক্ত ছিলো। টাকা আত্মসাৎ করে সে পালিয়ে যায়।

এখন সে বাংলাদেশে দিব্যি ব্যবসা করছে আর নতুন স্ত্রী নিয়ে সংসার করছে। আমি জানিনা বাঙলাদেশে বিয়ে হলে বিদেশে কীভাবে ডিভোর্স হয়? বিশেষত যখন এটা ছিলো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপের মুখে! বাঙলাদেশে আমার স্বামী বিয়ে করেছে আর আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে দেশে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে। সে আমার মা বাবা বোন ও বোনের সংসার নষ্ট করবে বলে আমাকে হুমকি দিয়েছে। সমাজের প্রতি আমার প্রশ্ন অন্যায় করলো কে আর পালিয়ে বাঁচতে হচ্ছে কাকে? আমি সরকারের কাছে বিচার চাই এভাবে কতো দিন বাঙালি মেয়েদের সাথে অবিচার হবে? কতো দিন আমরা মানসিক-শারীরিক অত্যাচার সহ্য করবো? আর কবে আমাদের দেশে মানসিক অত্যাচারের বিচার হবে? পাশাপাশি অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করবো- 'পাত্র বিদেশী' হলেই মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিবেন না। দয়া করে বিয়ের আগে মেয়েকে একটু জিজ্ঞেস করে নিন তার অভিমত। এভাবে একজন নারীর জীবন নষ্ট করে দিবেন না।

সোনিয়া জেমস, নিউ ইয়র্ক থেকে

0 comments:

Post a Comment