Tuesday, January 25, 2011

বুশ হাউস

0 comments
লন্ডনের কিংসওয়ে শহরের দক্ষিণে ওয়েস্ট মিনিস্টারে অবস্থিত বুশ হাউস ভবনটি বিবিসি'র সদর দফতর হিসেবেই অধিক সমাদৃত। অ্যাল্ডউইচ (Aldwitch) এবং দি স্ট্র্যান্ট (The Strant) স্ট্রিটের মাঝামাঝি এর অবস্থান। এ ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত এর পরিকল্পনাকারী ইরভিং টি. বুশ (Irving T. Bush)-এর নামানুসারে। যিনি এটাকে ক্রেতাদের সার্বিক চাহিদা মেটানোর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, আর এর নকশা করেছেন আমেরিকান স্থপতি এইচ ডবি্লউ করবেট। প্রায় ১৩ বছরের নির্মাণকাল শেষে ১৯৩৫ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে লর্ড ব্যালফারের নেতৃত্বে এটি উন্মোচন করা হয়।
সম্পূর্ণ ভবনটি মোট পাঁচটি ব্লকে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় ব্লকটি ছাড়াও উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আরও চারটি ব্লক রয়েছে। আর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এদের কেন্দ্রীয় ব্লকসহ সর্বমোট তিনটি ব্লক অধিকার করে আছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি করে রেফারেন্স লাইব্রেরি, প্রদর্শনী লাইব্রেরি, ক্লাব ও রেস্টুরেন্ট।

ভবনটির সর্বাধিক চমৎকার ও নয়নাভিরাম স্থান হলো এর প্রধান ফটক, যা প্রায় ৫ তলা উঁচু ভবনের সমান। মূলত বিশাল চারটি গম্বুজের ওপর দণ্ডায়মান দু'জন ব্যক্তির প্রতিমূর্তি, আর তাদের দু'জনের হাতে একসঙ্গে ধরে রাখা আলোকবর্তিকা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়, যা ইঙ্গ-মার্কিন বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ স্থাপিত। আর তাই ফটকের গায়ে একটি অভিলিখনে লেখা আছে_ To the friendship of English speaking people.

ভবনটির রয়েছে একটি ইতিহাস। ১৯৩০ সালে এর নির্মাণকাজ চলাকালে মাটির নিচ থেকে একটি মার্বেল পাথরে তৈরি মাথার প্রতিমূর্তি পাওয়া যায়, যা প্রদর্শনীর জন্য এখন কেন্দ্রীয় ব্লকে শোভা পাচ্ছে। ধারণা করা হয়, প্রতিমূর্তির মাথাটি রোমান যুগে নির্মিত আর কোনো এক ভয়াবহ সংঘর্ষের ফলে এর বিচ্যুতি ঘটে। ১৯২৯ সালে এটি সর্বাধিক ব্যয়বহুল ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পায়_ যার মূল্য ছিল তৎকালীন এক কোটি ডলার। ১৯৪৪ সালে ঠ-১ নামক একটি উড়ন্ত বোমার আঘাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর একটি প্রতিমূর্তির হাত ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ইন্ডিয়ানা মাইনস্টোন কোম্পানিতে চাকরিরত একজন কর্মকর্তা তার মেয়েকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স দেখতে এসে বুশ হাউসের এই ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি দেখেন এবং ফিরে গিয়ে তার কোম্পানির মাধ্যমে এটি সংস্কার করান।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জনগণের ধারণা হলো বুশ হাউস বিবিসি'র সম্পত্তি অথচ তা নয়। বিবিসি এখান থেকে প্রায় ৭০ বছর ধরে তার কার্যক্রম সমপ্রচার করলেও কখনোই এর স্বত্বাধিকারী হতে পারেনি। বর্তমানে বুশ হাউস একটি জাপানি কোম্পানির কাছে ইজারা রয়েছে। আর এ ইজারার মেয়াদ শেষ হবে ২০১২ সালে। বিবিসি'র পরিকল্পনা অনুযায়ী তখন এর ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সেন্টারগুলো সব এখানে নিয়ে আসা হবে এবং ডবি্লউ-প্রজেক্ট হিসেবে নামকরণ করা হবে।

অবশ্য অতি সম্প্রতি একটি গুজব ছড়িয়েছে যে, এর পার্শ্ববর্তী লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ক্যাম্পাস বৃদ্ধির জন্য বুশ হাউস কিনে নেবে। যাই হোক না কেন, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আজও বিবিসি আর বুশ হাউসকে একই সঙ্গে স্মরণ করে থাকে।

আল আমিন

0 comments:

Post a Comment